ফাইল চিত্র।
জার্মান দার্শনিক ফ্রিডরিখ নিটশে লিখিয়া গিয়াছেন, চরম বিপদেই মানুষ পরম আনন্দের মুহূর্তটিতে আসিয়া পৌঁছায়। দুরূহ তত্ত্বকথা বলিয়া সরাইয়া রাখা যাইত, যদি না আসন্ন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ প্রসঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান কোচ রবি শাস্ত্রী বলিতেন, দেশ জুড়িয়া সকল ভারতীয় ক্রিকেটভক্তদের জন্য আইপিএল এই মুহূর্তে ‘আদর্শ বিশৃঙ্খলা’, এবং তাহাই প্রয়োজন। অতিমারির জেরে ক্রীড়াবিশ্বের যাবতীয় আয়োজন বন্ধ হইয়া গিয়াছিল; ফুটবল, ক্রিকেট ও টেনিস পুনরায় শুরু হইয়াছে। আইপিএল লইয়া ভারতীয় ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই গত মার্চ হইতেই ভাবিত; টুর্নামেন্ট ছোট করিয়া দেওয়া হউক, দর্শক ছাড়া হইলেও হউক, ইত্যাদি নানা মতের পরেও কোভিড-আবহে তাহা স্থগিত ঘোষণা হয়, এখন সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যবস্থা হইয়াছে। এই আয়োজনও অভূতপূর্ব। প্রতিটি দলের জন্য পৃথক হোটেল; নিয়মিত ও বারংবার কোভিড টেস্টিং; খেলোয়াড়দের জন্য শারীরিক সুরক্ষার ‘বায়ো-বাব্ল’; আত্মীয়, আধিকারিক, এমনকি হোটেলকর্মীদের হইতেও ক্রিকেটারদের দূরত্ব রক্ষা— নিয়মের শেষ নাই।
অনেকে বলিতেছিলেন, বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ কাড়িতেছে করোনা, এখন কি ক্রিকেট না খেলিলেই চলিত না? খেলা কি জীবন অপেক্ষাও দামি? নিশ্চয়ই তাহা নহে, কিন্তু এত শত ব্যবস্থার পরেও আইপিএল হইতেছে, বা আইপিএল হইবে বলিয়া এত বিপুল ও বিচিত্র ব্যবস্থা হইতেছে, তাহাই এই টুর্নামেন্টের প্রয়োজনীয়তা বুঝাইয়া দিতেছে। রবি শাস্ত্রী নাহয় ক্রিকেটভক্তের অবসাদ-ক্ষতে আইপিএল-প্রলেপের ইঙ্গিত করিয়াছেন, কিন্তু করোনাকালের ভারতীয় অর্থনীতিও তাঁহার সমর্থনে দাঁড়াইবে। লকডাউনে অর্থনীতির যাবতীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ ছিল, অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে জিডিপি-সঙ্কোচন হইয়াছে প্রায় ২৪ শতাংশ। কোভিড হইতে বাঁচিতে গেলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু রাখা যায় না, অন্য দিকে অর্থনীতি সচল সক্রিয় না থাকিলে কর্মহীন অন্নহীন মানুষের প্রাণ যায়। ইহা যেন লোকপ্রবাদের সেই শাঁখের করাত, আসিতে যাইতে কাটে। সরকার ক্রমে অফিসকাছারি কলকারখানা খুলিয়া কাজকারবার চালু করিয়াছে, আইপিএল আয়োজনের পিছনেও সেই সমধর্মী যুক্তি, বলিলে অত্যুক্তি হইবে কি? ক্রিকেটের এই টুর্নামেন্টের সহিত বিপুল পরিমাণ অর্থের সংযোগ। এই প্রতিযোগিতা হইতে আয়োজক বিসিসিআই প্রভূত আয় করে, শুধু তাহাই আইপিএল-এর আর্থিক গুরুত্বের কারণ নহে। বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা পয়সা খরচ করিয়া বিজ্ঞাপন দেয়, কারণ তাহারা বিশ্বাস করে, আইপিএল-এর হাত ধরিয়া সেই বিজ্ঞাপন ক্রেতার চাহিদা বাড়াইবে। এই বৎসর বাজারের এই সচলতা অতি কাম্য।
আইপিএল শুরু হইতেছে, দেখিতে দেখিতে আসিয়া পড়িবে উৎসবের মরশুম— দুর্গাপূজা, নবরাত্রি, দীপাবলি হইতে বড়দিন ইত্যাদি। ভারতে জামাকাপড় হইতে ভোগ্যপণ্য, গৃহসংস্কারক্ষেত্র হইতে টেলিভিশন-ফ্রিজের ন্যায় দীর্ঘমেয়াদি ক্রেতাপণ্য, এমনকি গাড়ি— কার্যত সব ক্ষেত্রের উৎপাদকরাই এই উৎসবের মরশুমের দিকে তাকাইয়া থাকেন। এই বৎসর সেই প্রতীক্ষার কোনও তুলনা নাই। আইপিএল সেই উৎসবের বাজারটিকে আরও সচল করিবে, এই প্রত্যাশার গুরুত্ব বিনোদনের তুলনায় ঢের বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy