Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয়২
Education System

চিকীর্ষা

বরং সরকারি স্কুল, বিশেষত শ্রেষ্ঠ দশে থাকা দিল্লির সরকারি স্কুলগুলি সবিশেষ প্রশংসার দাবিদার এই কারণেই যে, তাহাদের অবস্থান খোদ রাজধানীতে।

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

দেশব্যাপী সরকারি দিবাকালীন স্কুলগুলির মূল্যায়নের নিরিখে প্রস্তুত প্রথম দশটি স্কুলের তালিকায় এই শিক্ষাবর্ষে প্রথম স্থান পাইয়াছে দিল্লির একটি সরকারি স্কুল, পঞ্চম ও সপ্তম স্থানে রহিয়াছে আরও দুইটি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ছাত্র-শিক্ষকদের অভিনন্দিত করিয়াছেন; যে কয়টি মাপকাঠির ভিত্তিতে এই তালিকা প্রস্তুত হইয়াছে সেইগুলি যে স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তাহা স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন। ভারতে অজস্র সরকারি বিদ্যালয়, কোনও পরিসংখ্যান এই ভাবে শ্রেষ্ঠ দশটি স্কুলের স্থান নির্ধারণ করিয়া দিতে পারে কি না তাহা লইয়া তর্ক চলিতেই পারে। অবশ্য স্কুলগুলির কৃতিত্ব তাহাতে খর্ব হইবার কারণ নাই।

বরং সরকারি স্কুল, বিশেষত শ্রেষ্ঠ দশে থাকা দিল্লির সরকারি স্কুলগুলি সবিশেষ প্রশংসার দাবিদার এই কারণেই যে, তাহাদের অবস্থান খোদ রাজধানীতে। এমন এক রাজ্যে, যেখানে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার মতাদর্শগত ভাবে পরস্পরবিরোধী, শিক্ষা হইতে স্বাস্থ্য, পরিবহণ হইতে চিকিৎসা, সমস্ত ক্ষেত্রে সর্বদাই দুই পক্ষের ঠোকাঠুকি লাগিতেছে। কেন্দ্রে শাসক দলের বিরোধী অন্য রাজ্যেও সরকারি স্কুল আছে, শ্রেষ্ঠ দশের তালিকায় তাহাদের প্রতিনিধিত্বও কম নহে। কিন্তু ভৌগোলিক দূরত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাবলয় হইতে দূরে বসিয়া রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করা বরং অপেক্ষাকৃত সহজ। অরবিন্দ কেজরীবালের সরকার সেই আপাত-সুবিধা হইতেও বঞ্চিত। রাজধানী হইবার কারণে নয়াদিল্লি এমনিতেই তাবৎ মনোযোগের কেন্দ্র, সেইখানে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের শাসক দলের বিরোধী হইলে তাহাকে অতিমাত্রায় সতর্ক থাকিতে হয়— পান হইতে চুনটুকু খসিলে গুরুদণ্ড নামিয়া আসা কিছুমাত্র বিচিত্র নহে। সেই পরিস্থিতিতে কেজরীবালের নেতৃত্বে আপ সরকার শিক্ষা, পরিবহণ ও জনপরিষেবার ন্যায় ক্ষেত্রে দক্ষতার সহিত কাজ করিয়াছে। স্কুলশিক্ষায় পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নতি হইয়াছে। পিতামাতারা পূর্বে বেসরকারি স্কুল বই সরকারি স্কুলের কথা ভাবিতেন না, সেই ভাবনায় বদল আসিয়াছে। এই অর্থবর্ষে রাজ্য বাজেটের সর্বাধিক, ২৬ শতাংশ মঞ্জুর হইয়াছে শিক্ষা খাতে। সরকারি স্কুলের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হইয়াছে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার পাঠ, সৃজনশীলতা প্রসারে বিবিধ প্রকল্প। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ— নবম শ্রেণিতে স্কুলছুটের হার শূন্যতে নামাইয়া আনার লক্ষ্যে ষষ্ঠ হইতে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ যত্ন লইবার উদ্যোগ করিয়াছে সরকার। ইহারই সম্মিলিত ফল ফলিতেছে স্কুলশিক্ষার উৎকর্ষে।

এই সকলই এক সুদূরপ্রসারী শুভের অভিজ্ঞান। অন্য যে কোনও রাজ্যের শিক্ষণীয়ও বটে। সদিচ্ছা ও উদ্যোগ হাত ধরাধরি করিয়া চলিলে কী হইতে পারে, সেই শিক্ষা। রাজ্য বনাম কেন্দ্র রাজনৈতিক বিরোধিতার পাঁক হইতে কী রূপে স্কুলশিক্ষার মতো পরিসরকে বাঁচাইতে হয়, তাহার শিক্ষা। ভারতে দেখা যায়, সরকারের ভাণ্ডারে উপায়ের কমতি নাই, অভাব কেবল কাজ করিবার ইচ্ছার। শিক্ষামন্ত্রী হইতে তৃণমূল স্তরের শিক্ষাকর্মী পর্যন্ত সকলে নিজের কাজটুকু সুষ্ঠু ভাবে করিলেই সাফল্য আসিবে। কেজরীবাল সরকার হইতে এই কাজ করিবার ইচ্ছা অর্থাৎ চিকীর্ষাটুকু শিখিয়া লইলে অপরাপর রাজ্য সরকারের মঙ্গল।

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Schools State Schools Education System
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy