Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal

কাচের ঘরে ঢিল

পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের সমস্যা সর্বভারতীয় সমস্যার সহিত অসম্পর্কিত হইতে পারে না। কেন্দ্রের দুইটি আর্থিক সিদ্ধান্ত— নোট বাতিল ও জিএসটি প্রবর্তন— ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় বিপুল কুপ্রভাব ফেলিয়াছে, তাহা প্রশ্নাতীত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০ ০১:২৭
Share: Save:

যাহার নিজের ঘর কাচের তৈরি, অন্যের ঘরে পাথর ছোড়া তাহার পক্ষে নিতান্তই অনুচিত কাজ। পশ্চিমবঙ্গে, অন্তত কর্মসংস্থানের প্রশ্নে, যুযুধান দুই প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষই কাচের ঘরের বাসিন্দা। মুখ্যমন্ত্রী তিন বৎসরে পঁয়ত্রিশ লক্ষ নূতন কর্মসংস্থানের কথা বলিয়া পরোক্ষে স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার মানুষের কর্মসংস্থান করিতে ব্যর্থ। বিজেপি নেতৃত্ব পাল্টা আক্রমণ করিয়াছে। বাস্তবটি হইল, দুই পক্ষেরই দায় যথেষ্ট। এই রাজ্যে যে শিল্পমেধ যজ্ঞের মাধ্যমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাসনক্ষমতায় আসিয়াছিলেন, তাহা কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার জন্য যে প্রাণঘাতী হইবে, ইহাতে কখনও সন্দেহ ছিল না। গত সাড়ে নয় বৎসরে কোনও বিকল্প পথের সন্ধানও এই রাজ্যে মিলে নাই। মুখ্যমন্ত্রী চপ ভাজিবার সুপরামর্শ দিয়াছিলেন। আশা করা চলে, তিনি নিজেও জানিতেন যে সেই পথে সমাধান মিলিবে না। বৃহৎ শিল্পই যে কর্মসংস্থানের একমাত্র পথ, তাহা নহে— তাহা বড় জোর সহজতম পথ। কিন্তু, যে কোনও পথে কর্মসংস্থান করিতে হইলেই পরিকাঠামো খাতে ব্যয়বৃদ্ধি করিতে হয়। শহর তো বটেই, আধা-শহর এবং গ্রামাঞ্চলেও পরিকাঠামো গড়িয়া উঠিলে, তাহা মজবুত হইলে তবেই বাণিজ্য প্রসারিত হইতে পারে। বৃহৎ শিল্পই হউক বা অতি ক্ষুদ্র, সবেরই পরিকাঠামোর প্রয়োজন— বস্তুত, যে শিল্প যত ক্ষুদ্র, রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর উপর তাহার নির্ভরশীলতা ততই বেশি। ভারতে বৃহৎ রাজ্যগুলির বাজেট তুলনা করিলে দেখা যাইবে, পশ্চিমবঙ্গে পরিকাঠামো খাতে রাজ্য সরকারের ব্যয়বরাদ্দ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কম। এই রাজ্যে সরকারি খরচের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিমুখ হইল অনুৎপাদনশীল ক্ষেত্রের দিকে— তাহার রাজনৈতিক কারণ আছে, কিন্তু অর্থনীতি সেই যুক্তি মানিতে নারাজ। ফলে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ পিছাইয়া আছে, তাহা অনস্বীকার্য।

কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি লইয়া অভিযোগ করিবার নৈতিক অধিকার বিজেপির আছে কি না, তাহা আর একটি প্রশ্ন। কেন্দ্রে বিজেপির শাসনকালে বেকারত্বের পরিমাণ এমনই বাড়িয়াছে যে, গত বৎসরের গোড়ায় একটি গোটা রিপোর্ট চাপিয়া দিতে হইয়াছিল। কারণ, সেই রিপোর্টে প্রকাশ পাইয়াছিল যে, ভারতে তখন বেকারত্বের হার যত চড়া ছিল, প্রায় অর্ধশতকে তাহা হয় নাই। রিপোর্টের সময়কালটি লক্ষণীয়— গত বৎসরের প্রথম দিক, অর্থাৎ কোভিড তখনও সুদূর ভবিষ্যতের গর্ভে। তাহার পর অতিমারির ধাক্কায় লক্ষ লক্ষ চাকরি গিয়াছে। সঙ্গে লইয়া গিয়াছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতিটিকে— তাঁহার সরকার প্রতি বৎসর এক কোটি নূতন কর্মসংস্থান করিবে।

পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের সমস্যা সর্বভারতীয় সমস্যার সহিত অসম্পর্কিত হইতে পারে না। কেন্দ্রের দুইটি আর্থিক সিদ্ধান্ত— নোট বাতিল ও জিএসটি প্রবর্তন— ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় বিপুল কুপ্রভাব ফেলিয়াছে, তাহা প্রশ্নাতীত। দুইটি ঘটনাতেই প্রবল ধাক্কা খাইয়াছে অসংগঠিত ক্ষেত্র, অতি ক্ষুদ্র শিল্প ইত্যাদি। ভারতের অন্য বহু রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের অর্থব্যবস্থা এই অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পের উপর বেশি নির্ভরশীল। ফলে, সেই ধাক্কাটি পশ্চিমবঙ্গের গায়ে প্রবলতর বেগে লাগিতে পারে, এই সম্ভাবনাটিকে কি অর্থনীতির যুক্তি অস্বীকার করিতে পারে? পশ্চিমবঙ্গে বৃহৎ শিল্পের অভাব, রাজ্যের শাসকদের ‘শিল্পবিরোধী’ ভাবমূর্তি ইত্যাদি কথা খাড়া করিয়াও কি এই বাস্তবকে গোপন করা যাইবে? অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করিয়াছেন যে, কর্মসংস্থান যোজনার বরাদ্দ পাঠাইতে কেন্দ্রীয় সরকার বহু বিলম্ব করে, ফলে তাহাতেও কর্মসংস্থানের ক্ষতি হয়। এই অভিযোগটিও অস্বীকার করিবার নহে। শেষ অবধি, এই রাজনৈতিক দোষারোপের পালায় যে পক্ষই জিতুক না কেন, হারিতেছে পশ্চিমবঙ্গ।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal unemployment TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy