Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

শুধু গোলাপের জন্য

পরীক্ষার্থী কী চাহে, কেহ কি বোঝেন? তাঁহাদের নিজেদের মতো নিজেদের লড়াই সামলাইতে দেওয়াটাই যখন শুভার্থীদের একমাত্র কাজ, আজকাল পরীক্ষার্থীদের প্রতি বিবিধ রকম ভালবাসার নজির পৌঁছাইবার হিড়িক।

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ০০:৪৭
Share: Save:

পরীক্ষা চলিতেছে। তাই গোলাপ ফুলের দাম বাড়িতেছে।— যুক্তির ভুল আছে ভাবিয়া তর্কশাস্ত্রবিদ মুখ ফিরাইতে পারেন, ছাপার ভুল আছে ভাবিয়া সম্পাদক মহাশয় সংশোধনে উদ্যত হইতে পারেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ জানে, পরীক্ষা ও গোলাপের সম্পর্ক কত গভীর ও অঙ্গাঙ্গি। প্রথানুযায়ী গোলাপের সহিত ভালবাসার একটি অন্বয় কল্পনা করা হয়, ভ্যালেন্তিনীয় প্রেমদিবসে গোলাপ-বাজারে হাত লাগালে ছ্যাঁকা পড়ে। কিন্তু, পরীক্ষার সঙ্গেও কি ভালবাসার সম্পর্ক নাই? পরীক্ষার্থীকে ভালবাসা দিবার তাড়না সর্বত্র দেখা না যাইতে পারে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর জ্বালাযন্ত্রণা ভালবাসার ছোঁওয়ায় লাঘব করিতে পুরনেত্রী গোলাপের বান্ডিল হাতে পরীক্ষার হলের বাহিরে অপেক্ষমাণ থাকিতেই পারেন। তাঁহার হাত হইতে ভালবাসার অঙ্গীকার গ্রহণ না করিয়া হলে ঢুকিবার সাধ্য কাহার! তাই পরীক্ষা-উদ্বেগে দীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা বাধ্য হন সার বাঁধিয়া দাঁড়াইতে, নেত্রীর হাত হইতে ফুল লইয়া তবে তাঁহারা হলে ঢুকিতে পান। বিতরণপর্ব সমাধা হইলে ফুলগুলির দশা হয় অতীব করুণ— পরীক্ষার্থীদের কিছুই হাতে লইয়া হলে ঢুকিবার অনুমতি নাই, ব্যাগবন্দি গোলাপবৃন্দ তাই বারান্দার কোণে অবহেলায় পড়িয়া থাকে, দ্বিপ্রাহরিক উত্তাপে পঞ্চত্ব লাভ করে। তবে, গোলাপ তো ভবিষ্যৎ নাগরিক নয়, তাহাদের পঞ্চত্ব লইয়া ভাবিয়া কী লাভ।

ছাত্রছাত্রীদের লইয়া ভাবিবার দরকার আছে। ফুলসমাজে যাহাদের বিপদহীন বলিয়া ধরা হয়, গোলাপ তাহাদের মধ্যে পড়ে না। গোলাপের গন্ধ মধুর, সেই গন্ধের ব্যথাও প্রচুর। অন্য ব্যথার কথা অন্যত্র, গোলাপের কাঁটা বাছিবার প্রশ্নও আপাতত মুলতুবি থাকুক, কিন্তু অ্যালার্জি-রোগীরা জানেন, গন্ধফুলের আকস্মিক কবলে পড়িলে আর উপায় নাই, হাঁচিয়া সার হইতে হয়। পরীক্ষার্থী পরীক্ষার আগে সহসা হাঁচিতে শুরু করিলে তাহার দায় গোলাপকেই লইতে হইবে। এহ বাহ্য। পরীক্ষার্থী হলে ঢুকিবার মুহূর্তে যখন মনোভার সামলাইতে ব্যস্ত, জনপ্রতিনিধির স্নেহসিঞ্চিত গোলাপ লইবার জন্য তাহাদের ঠায় রৌদ্রে লাইন দিয়া দাঁড়াইয়া থাকিতে হইবে— ইহাকে অত্যাচার বলে। তাঁহারা যে তখন ভালবাসা চাহেন না, শুধু একটি সংকটহীন প্রশ্নপত্রই চাহেন, গোলাপ না হয় তাহা বুঝিবে না, কিন্তু জনপ্রতিনিধি? নিজের মূল্য অধিক করিয়া দেখা এ-কালে সর্বজনীন রোগ। রাজপুর-সোনারপুরের গোলাপরাও সেই রোগের শিকার।

পরীক্ষার্থী কী চাহে, কেহ কি বোঝেন? তাঁহাদের নিজেদের মতো নিজেদের লড়াই সামলাইতে দেওয়াটাই যখন শুভার্থীদের একমাত্র কাজ, আজকাল পরীক্ষার্থীদের প্রতি বিবিধ রকম ভালবাসার নজির পৌঁছাইবার হিড়িক। গোলাপের পাশাপাশি আছে বেতারবার্তার পরাক্রম। প্রধানমন্ত্রীর অফিস হইতে তাহারা ভাসিয়া আসিয়া কত কথাই বুঝাইতে চাহে। পরীক্ষা যে একটা যুদ্ধ, বৃথা দুশ্চিন্তা (‘ওরি’) না করিয়া পরীক্ষার্থীদের যুদ্ধে (‘ওয়ার’-এ) প্রবৃত্ত হওয়া উচিত, এই সদ্বাণী শুনিয়া পরীক্ষার্থীরা কতখানি পুলকিত হয়, কতখানি বিপন্নতর বোধ করে, বেতারবার্তা কি সে খবর রাখে? গোলাপ বা বেতার, সবই ভবিষ্যৎ নাগরিকদের ভালবাসিবার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্যস্ত সমস্ত। সেই প্রতিদ্বন্দ্বী ভালবাসার চোটে ছেলেমেয়েগুলি হাঁসফাঁস।

অন্য বিষয়গুলি:

Rose Students Examination examinee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE