কেন্দ্রীয় সরকার চটের বস্তা কিনিতে ইচ্ছুক। পাটচাষি তাহার উৎপাদিত পাট বিক্রয় করিতে আগ্রহী। চটকলের কর্মীরা কাজে ফিরিবার আশায় অপেক্ষা করিতে করিতে শেষ অবধি হতাশ হইয়া রাজ্য ছাড়িতেছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের চটকল এখনও অচল। কলমালিকরা সম্প্রতি রাজ্য সরকারের নিকট কয়েক দফা আবেদন করিয়াছেন— অন্য রাজ্য হইতে শ্রমিকদের ফিরাইয়া আনিবার ব্যবস্থা করিতে হইবে; নিয়োগের শর্তও শিথিল করিতে হইবে, যাহাতে খরচ কমে। শ্রমিকের প্রভিডেন্ট ফান্ড বাদ দিতে হইবে, কাজের মধ্যে বিরতি রাখা চলিবে না, মহিলা কর্মীদের রাত্রে কাজ করিবার অনুমতি দিতে হইবে। প্রশ্ন হইল, শ্রমিকের বেতনের বোঝা সামলাইতে গিয়াই কি চটশিল্প খুঁড়াইয়া চলিতেছে? ১৯৬৩ সালে শেষ বেতনের হার স্থির হইয়াছিল, তাহার পর হইতে বরাবর ত্রিপাক্ষিক বা দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে বেতন বাড়ানো হইয়াছে। অভিযোগ, চটশিল্পে বারংবার ধর্মঘট হইবার অন্যতম কারণ সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বেতন কাঠামোর অভাব। গত কয়েক দশকে প্রভিডেন্ট ফান্ড বাবদ বকেয়া জমিয়া ছয়শত কোটি টাকা ছাড়াইয়াছে, মামলার উপর মামলা জমিয়াছে। শ্রমিকের দাবি লইয়া সকল রাজ্যে, সকল শিল্পেই কম-বেশি সংঘাত হইয়া থাকে। কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের চটকল পরিস্থিতি দেখিলে সন্দেহ হয়, এই সংঘাতকে অজুহাত খাড়া করিতেই কর্তৃপক্ষের অধিকতর আগ্রহ।
অভিযোগ, শ্রমিক-সমস্যাকে সম্মুখে রাখিয়া মালিকপক্ষ তাঁহাদের নানা ত্রুটি ঢাকিতে চাহিয়াছেন। যাহার অন্যতম, চটকলগুলিকে আধুনিক করিতে ব্যর্থতা। ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী কারখানাগুলিকে আধুনিক করিবার জন্য চারশত কোটি টাকার তহবিল তৈরি করিয়াছিলেন। সেই টাকার অতি সামান্যই কৃৎকুশলতায় উন্নতির জন্য খরচ হইয়াছিল। উপরন্তু অডিট রিপোর্টে সেই অর্থের নানা অবৈধ ব্যয় ধরা পড়িয়াছে। মামলার জাল জটিলতর হইয়াছে। ইহার পরেও ২০০৬ সালে জাতীয় পাট পরিষদের অধীনে চটকলগুলিতে প্রযুক্তি আধুনিক করিবার প্রকল্প শুরু হয়। ফের খরচে অনাগ্রহ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠিয়াছিল, ফলে পাঁচ বৎসর পরে পরিষদ সেই প্রকল্প প্রত্যাহার করে। লাভজনক কলগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত বলিয়া দেখাইয়া সরকারি সহায়তা তহবিলের অপব্যবহারও ধরা পড়িয়াছে কেন্দ্রের একটি রিপোর্টে। আড়াই লক্ষ শ্রমিক, চল্লিশ লক্ষ চাষির ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে যে চটশিল্প, তাহার মালিকেরা শিল্পপতি-সুলভ দূরদৃষ্টি, বা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে কতটুকু আগ্রহ দেখাইয়াছেন?
আজ শিল্পের সমস্যার সমাধান করিতে সরকারের দ্বারস্থ হইতেছেন তাঁহারা। কিন্তু রাজ্য সরকারও কি পাটশিল্পকে যথাযথ মর্যাদা দিয়াছে? আজও পাটশিল্প রহিয়াছে শ্রম দফতরের অধীনে, তাহা শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের বিষয় নহে। পাটবীজ বিতরণ হইতে চটকলের লকআউট, সকলই শেষ অবধি আইনশৃঙ্খলার সমস্যায় পর্যবসিত হয়। অথচ পাটজাত দ্রব্য কেন্দ্রের বিবিধ ভর্তুকির সুবিধা পায়। খাদ্যশস্যের বস্তায় চটের ব্যবহার আইনত আবশ্যক। চটের বস্তার প্রধান ক্রেতা কেন্দ্রীয় সরকার, প্রধান উৎপাদক পশ্চিমবঙ্গ। যখন কর্মহীনতা রাজ্যকে গ্রাস করিতেছে, তখন চটকলগুলি সকল সমস্যা সত্ত্বেও এক সম্ভাবনাময় বিকল্প। শিল্পের স্বার্থে সক্রিয় হউক সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy