পিপীলিকা কী রূপে আহার্যের সন্ধান পায়? খাদ্যের নিমিত্ত ওই প্রাণী যে বহু দূর হইতে অগ্রসর হয়, তাহা সুবিদিত। সন্ধানের নিমিত্ত উহাদের গতিবিধি বিস্ময়ের উদ্রেক করে। কিন্তু, বিস্ময় বিজ্ঞানের প্রথম ধাপ, শেষ ধাপ নহে। এই কারণে বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান তাঁহার বাল্যকালে এক দানা চিনি গৃহের এক প্রান্তে রাখিয়া পিপীলিকাশ্রেণি কখন কী ভাবে উহাতে প্রলুব্ধ হয়, তাহা লক্ষ করিতেন। উপরন্তু চিনির দানায় পৌঁছাইবার পথে নানা রূপ বাধার ব্যবস্থা করিয়া লক্ষ করিতেন পিপীলিকারা উক্ত বাধা সত্ত্বেও কী রূপে চিনির দিকে অগ্রসর হইতেছে। শৈশবে যাঁহার কৌতূহল নিবৃত্ত করিবার এমন অধ্যবসায়, তিনি যে পরে বড় বিজ্ঞানী হইবেন; তাহাতে আর আশ্চর্য কী। ফাইনম্যান যাহা বুঝিতে চাহিয়াছিলেন, তাহা এই যে পিপীলিকার বুদ্ধি কত দূর। মানুষ নিজেকে সবিশেষ বুদ্ধিমান জ্ঞান করে, সন্দেহ নাই। আপন বুদ্ধিবলেই সে বিবর্তনের দৌড়ে অন্য সব প্রাণীকে পিছনে ফেলিয়াছে, ইহাও সত্য। বিবর্তনে টিকিয়া থাকিতে গেলে বুদ্ধি, বিশেষত কিঞ্চিৎ উন্নত বুদ্ধি, আবশ্যক। তাই প্রাণিকুলে আর কোন কোন সদস্য উন্নত বুদ্ধিধর, তাহা বিজ্ঞানীগণের নিকট কৌতূহলের বিষয়। জার্মানিতে বন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক সম্প্রতি এক প্রণিধানযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছাইয়াছেন।
ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেরা স্খ্লুসেল এবং তাঁহার সহকর্মীরা হাঙরের বুদ্ধি পরীক্ষা করিয়াছিলেন। উহারা দেখেন হাঙরেরা ছোট সংখ্যা ও বড় সংখ্যার প্রভেদ বুঝিতে পারে। কারণ, ভক্ষ্য জীব সংখ্যায় কম থাকিলে যে রূপ সাড়া দেয়, বেশি থাকিলে বেশি সাড়া দেয়। ভক্ষ্য জীব সংখ্যায় কম বা বেশি যাহাই থাকুক, তাহাতে ক্ষুধার্ত হাঙরের কিছু যায়-আসে না। তথাপি হাঙর যে সংখ্যার প্রভেদ বুঝিয়া ক্ষুন্নিবৃত্তির নিমিত্ত উৎসাহে তারতম্য প্রদর্শন করে, তাহাতে ওই প্রাণীর সংখ্যাজ্ঞান বুঝায়। এই ব্যাপারে হাঙরেরা ভল্লুক বা এক শ্রেণির বাঁদরের সমতুল। কুকুর বা নেকড়ের ক্ষেত্রেও ওই প্রকার গুণাগুণ বিজ্ঞানীরা লক্ষ করিয়াছেন। স্খ্লুসেল এবং তাঁহার সহকর্মিগণের পরীক্ষালব্ধ ফলাফল হাঙর সম্পর্কে পুরাতন ধারণা নস্যাৎ করিয়াছে। পূর্বে এই ধারণা বহু বিশেষজ্ঞই পোষণ করিতেন যে, হাঙরেরা নির্বুদ্ধি। স্খ্লুসেল এবং তাঁহার সহকর্মীরা এই ধারণায়ও জল ঢালিয়া দিয়াছেন যে, হাঙর একাকী জীবনযাপনে অভ্যস্ত। জার্মান গবেষক দেখিয়াছেন হাঙর নিজের বা অন্যের ভুল হইতে শিক্ষা গ্রহণ করিয়া নিজের আচরণ নির্ধারণ করে। ভুল পদক্ষেপ হইতে শিক্ষাগ্রহণ পূর্বে একান্ত মানবিক আচরণ বলিয়া গণ্য হইত। ইহা মনুষ্যের প্রচুর উপকারসাধন করিয়াছে। বস্তুত, ইহা উন্নত বুদ্ধির এক বড় লক্ষণ বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে। এই গুণের অধিকারী হইলে হাঙরকে মোটেই নির্বুদ্ধি বলা যায় না।
মনুষ্য ব্যতিরেকে অন্য প্রাণী আবেগাপ্লুত হয় কি না, তাহা চার্লস রবার্ট ডারউইনকেও ভাবিত করিয়া তুলিয়াছিল। তাঁহার ইত্যাকার ভাবনায় ফসল একখানি পুস্তক। শিরোনাম ‘দি এক্সপ্রেশন অব দি ইমোশনস ইন ম্যান অ্যান্ড অ্যানিম্যালস’। উক্ত পুস্তকে ডারউইন সাহেব জানাইতে ভুল করেন নাই যে, মনুষ্যের ন্যায় অন্য অনেক প্রাণীও রাগ দ্বেষ এবং ভালবাসা ইত্যাদি প্রবৃত্তির তাড়নায় ভুগিয়া থাকে। বিরক্তি বা রাগ যে এক সুলভ প্রবৃত্তি, তাহাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু দ্বেষ বা ঈর্ষা প্রবৃত্তি হিসাবে কিছুটা জটিল। আমরা মানুষেরা এই প্রবৃত্তিটিকে চারিত্রিক ত্রুটি হিসাবে গণ্য করিয়া থাকি। তথাপি বিশেষজ্ঞরা এই ধারণা পোষণ করেন যে, উহা দোষ নহে। উহা বরং এক গুণ। উহা না থাকিলে বিবর্তনের যুদ্ধে জয় লাভ করা যায় না। স্বরচিত পুস্তকে বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে ওই গুণ আবিষ্কার করিয়া ডারউইন লিখিয়াছিলেন, বুদ্ধিবৃত্তিতে অন্য অনেক প্রাণীই মনুষ্যের নিকটবর্তী। সুতরাং, মনুষ্য যে প্রাণিরাজ্যে বিশেষ ভাবে পৃথক, তাহা প্রমাণ হয় না। বরং ইহাই প্রতিপন্ন হয় যে, মনুষ্য আসলে বিবর্তিত পশু বই অন্য কিছু নহে। নিজেকে পৃথক ভাবা মনুষ্যের অহঙ্কারের মধ্যে পড়ে। ওই অহঙ্কার মানুষের উপকারে লাগে। ওই অহঙ্কার বিনা আপন স্বার্থে মানুষ পশুশ্রম যথেচ্ছ ব্যবহার করিতে পারে না। এমনকি, পশুকে ভক্ষ্য পদার্থ হিসাবেও ব্যবহার করা যায় না। বুদ্ধি, প্রবৃত্তি বা আবেগে মনুষ্য অন্য অনেক প্রাণীর নিকটবর্তী— এই উপলব্ধি যে অনভিপ্রেত, তাহা না বলিলেও চলে। কিন্তু, সত্য মানিয়া লওয়া ভাল। প্রাণী হিসাবে মনুষ্য একটি পৃথক প্রজাতি বটে, তবে যথেষ্ট উন্নত প্রজাতি কি না, তাহা নিশ্চিত করিয়া বলা যায় না।
যৎকিঞ্চিৎ
হিন্দি সিনেমায় যেমন নায়িকা প্রথমটা পাত্তা দেয় না, পরে তেড়ে প্রেমের গান গেয়ে সাংঘাতিক দাপিয়ে নেচে হাল্লাক হয়ে যায়, তেমনই ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’ প্রার্থনায় প্রথমটা না কান দিলেও, এখন এমন প্রকাণ্ড ঝাঁপাচ্ছে, ‘ছেড়ে দে মা, আস্তে হাঁচি’। খিচুড়ি খেয়ে খেয়ে পেটে চড়া পড়ে গেল, কাগজের নৌকা বানিয়ে গোটা ডিকশনারি ফাঁক, রাস্তায় মহাষ্টমী-মার্কা জ্যাম। জমা জলে ডেঙ্গির ভয়। প্রকৃতির এই ওভারঅ্যাক্টিং-এর বিরুদ্ধে বিদ্বজ্জনেরা একটা চিঠি লিখলে পারেন না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy