Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Marriage. Girl Marriage

বিবাহযোগ্যা

মেয়েদের সক্ষমতা, বিশেষত যৌনতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত লইবার ক্ষমতা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কখনওই মান্য করে নাই।

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২০ ০০:০২
Share: Save:

একুশ বৎসরের পূর্বে বিবাহ নহে, মেয়েদের জন্যও এই আইন করিবার প্রস্তাব দিয়াছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বর্তমানে মেয়েদের আইনত বিবাহযোগ্য হইবার বয়স আঠারো, পুরুষদের একুশ বৎসর। প্রধানমন্ত্রী পুরুষ-মহিলা সমতা আনিতে চাহিয়াছেন। তাহাতে মেয়ে ও শিশুদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যে উন্নতি হইবে, এমনই বলিয়াছেন তিনি। তাঁহার যুক্তিতে ভুল নাই। রক্তাল্পতা, অপুষ্টিতে শীর্ণ মেয়েরা নাবালিকত্ব অতিক্রম করিতে-না করিতে গর্ভবতী হইয়া পড়িলে জননী ও শিশু, উভয়ের প্রাণের আশঙ্কা দেখা দেয়। শিশুর স্বাস্থ্য যে শুধু জননীর বয়স ও পুষ্টির উপরেই নির্ভর করে এমন নহে, তাহার সম্পর্ক শিক্ষার সহিতও তেমনই নিবিড়। একুশ বৎসর বিবাহের ন্যূনতম বয়স হইলে পিতৃগৃহে তিন বৎসর অধিক সময় কাটাইবার নিশ্চয়তা মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়াইতে পারিবে, আশা করা চলে। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, নিজের জীবনের বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা, এই সকলই মেয়েদের সক্ষমতা বাড়াইবে। তাই সাদা দৃষ্টিতে একুশ বৎসর ন্যূনতম বয়স করিবার প্রস্তাবে আপত্তির কিছুই নাই।

কিন্তু জীবনে ধূসর এলাকাই অধিক। মেয়েদের সক্ষমতা, বিশেষত যৌনতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত লইবার ক্ষমতা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কখনওই মান্য করে নাই। মেয়েদের শ্রম ও প্রজনন, এই দুই শক্তিকেই পরিবার নিজের কুক্ষিগত করিতে চাহিয়াছে। রাষ্ট্র আঠারো বৎসরের পূর্বে বিবাহ নিষিদ্ধ করিয়া, নাবালিকার সহিত যৌনসংসর্গের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান দিয়া, অকালবিবাহ বন্ধ করিতে সরকারি কর্মী নিযুক্ত করিয়াও তাই নাবালিকা বিবাহ বন্ধ করিতে পারে নাই। আইন মানা হইলেও নামমাত্র। মেয়ে শিক্ষা লাভ করিয়া সাবালিকা হইলে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে লইবে, আশা করিয়াছিলেন আইনপ্রণেতারা। কার্যক্ষেত্রে পরিবার তাহাকে সেই সুযোগই দেয় না। বিবাহ স্থির হইয়া থাকে, কন্যা আঠারো বৎসরে পড়িলেই অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। নিজের মতে জীবন কাটাইতে অনেক কিশোরী পলাইয়া বিবাহ করে। সাম্প্রতিক কয়েকটি সমীক্ষায় প্রকাশ, পরিবারের উদ্যোগে নাবালিকা বিবাহের তুলনায় এমন পলাতক বিবাহের সংখ্যা অধিক। সকল আর্থ-সামাজিক শ্রেণিই মেয়েদের সক্ষমতার বিরোধী, কিন্তু দরিদ্র ও স্বল্পশিক্ষিত পরিবারে নাবালিকা বিবাহ সর্বাধিক। লকডাউনের পরবর্তী মাসগুলিতে অন্তত পাঁচশো নাবালিকা বিবাহের তথ্য পাইয়াছে পশ্চিমবঙ্গের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। অধিকাংশই নিতান্ত দরিদ্র পরিবার, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতার মুখে কন্যাদায় ঝাড়িয়া ফেলিতে চাহে। এই মানুষগুলি সকল দিক হইতেই বিধিবদ্ধ সমাজে প্রান্তবাসী। তাঁহাদের শাস্তিযোগ্যতা আরও বাড়াইয়া রাষ্ট্রের লাভ কী?

তাই প্রশ্ন উঠিবে, বিবাহের বয়স পিছাইবার লক্ষ্য অতি উত্তম, কিন্তু আইন প্রণয়ন ভিন্ন তাহার অপর পদ্ধতি কি নাই? দরিদ্র পরিবারগুলির নিকট উচ্চশিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, এবং সর্বোপরি মেয়েদের কাজে নিয়োগের সুযোগ বাড়াইলে বিবাহের প্রতি ঝোঁক কমিবে। স্বতই যাহাতে নাগরিক উন্নয়নের লক্ষ্যকে গ্রহণ করে, তাহার ব্যবস্থা করিবার অনেক উপায় সরকারের হাতে রহিয়াছে। সকল সময়ে আইনের লাঠি দিয়া তাড়াইবার প্রয়োজন নাই। ঔপনিবেশিক শাসনরীতি ভুলিয়া নাগরিকের সক্ষমতার লক্ষ্যে সহমর্মী প্রশাসন প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Girl Marriage Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy