ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়
সালটা ১৯৮৯।
নাট্য অ্যাকাডেমির প্রথম থিয়েটার ওয়ার্কশপ চলছে কলকাতায়। সন্ধেবেলায় দেখানো হচ্ছে রঙ্গকর্মীর নাটক ‘লোককথা’। একটি দৃশ্যে অভিনেত্রী ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়কে চুলের মুঠি ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে জোতদার। আর তিনি লোকের পা ধরে আর্তনাদ করছেন। হঠাৎই পা ধরলেন ওয়ার্কশপে অংশ নিতে আসা তরুণ নাট্যকর্মী কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের। হঠাৎ কী যে ঘটল, স্থান-কাল-পাত্র ভুলে কৌশিক লাফিয়ে উঠে জোতদার-রূপী অভিনেতাকে মারতে শুরু করলেন।
তার পর থেকে তিনি ‘ঊষাদি’। কৌশিক বলেন, “দিদির নাটকের স্ক্রিপ্ট আমি লিখেছি। আমাদের শান্তিপুর সাংস্কৃতিকের ‘নাট্য কোজাগরী’ যখন এত পরিচিতি পায়নি, তখন ঊষাদি সারা রাত সামনের সারিতে বসে নাটক দেখছেন। আর বলেছেন— কৌশিক, এ ভাবেই নাটককে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।’’
২০০৬ সালে মফস্সলের ছোট নাট্যদল তাদের বর্ষপূর্তিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে কলকাতার ঊষা গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাঁর দল ‘রঙ্গকর্মী’কে। নাটকের দিন স্টেশনে গাড়ি নিয়ে হাজির আয়োজকেরা। ঊষা গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রী আসছেন! প্রায় আটত্রিশ জনের দল নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে অভিনেত্রী দেখলেন তাঁর জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের বললেন, ‘‘ভাই ও সব গাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দাও। আমার জন্য রিকশার ব্যবস্থা কর।’’
পরের চব্বিশ ঘণ্টা তাঁর মন্ত্রমুগ্ধ করা ব্যক্তিত্বে সম্মোহিত হয়েছিলেন নবদ্বীপ তরুণ নাট্যগোষ্ঠীর ছেলেরা। গোষ্ঠীর কর্ণধার, অভিনেতা বাপি চক্রবর্তী এখনও ভুলতে পারেন না সেই দিনের কথা। বাপি বলেন “সে বার আমাদের উৎসবে দু’টি নাটক করেছিলেন ওঁরা। হিম্মতমাই আর ইন্সপেক্টর মাতাদিন চাঁদপড়। মনে আছে, নাটকের দর্শকসংখ্যা প্রত্যাশামতো হয়নি। আমি খুব হতাশ হয়েছিলাম। মঞ্চে ওঠার আগে দিদির মতো স্নেহে গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন— চিন্তা কোরো না। নাটকের অভিনেতাদের যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়।’’
২০০৫ সাল। কৃষ্ণনগরের রামকৃষ্ণ পাঠাগারের বার্ষিক অনুষ্ঠানে ‘রুদালি’ নাটক নিয়ে এসেছিলেন তিনি। সেই সময়ের যোগাযোগের মাধ্যম নাট্যব্যক্তিত্ব শিবনাথ ভদ্রের আজও পরিষ্কার মনে আছে একটি ঘটনা। তিনি বলেন “সে সময়ে রুদালি নাটকের জন্য ঊষা গঙ্গোপাধ্যায় বারো হাজার টাকা চেয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম, আপনাদের ছোট নাটক। হাজার দশেক টাকা হলে ভাল হয়। আমার কথাটা ওঁর পছন্দ হয়নি। উনি আমায় ঘুরিয়ে বললেন— আপনারা কি নাটকের ভাল-মন্দ ঘণ্টা দিয়ে মাপেন?’’
অথচ, পরে পরম্পরার পক্ষ থেকে নাটকের ওয়ার্কশপের জন্য বলায় এককথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলেন ঊষা। বলেছিলেন— আমি ট্রেনে করে গিয়ে থিয়েটার করিয়ে আসব। তোমরা ছোট সংগঠন, টাকা পাবে কোথায়?
ভারাক্রান্ত শিবনাথ বলেন, ‘‘ভারতীয় থিয়েটার একজন অভিনেত্রী তথা সংগঠককে হারাল, যিনি একেবারে সামনে থেকে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy