এই বছরের বাজেট এক নতুন সর্বজনীন, সুস্থায়ী, আত্মনির্ভর ও উন্নয়নশীল ভারত তৈরি করার কথা বলল। দেশকে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি করে তোলার পথে নির্মলা সীতারামন তাঁর প্রথম বাজেটেই সুনিশ্চিত পদক্ষেপ করলেন। লগ্নি, কর্মসংস্থান ও ডিজিটাল ইকনমি তৈরির পথে তাঁর সিদ্ধান্তগুলি ভারতের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
এই বাজেটে পরিকাঠামো, জল সংরক্ষণ, ডিজিটাল অর্থনীতি, এবং রফতানি ক্ষেত্রের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা আর পরিকাঠামোকে গুরুত্ব দেওয়ায় তা পরিবহণব্যয় কমিয়ে ভারতকে প্রতিযোগিতাশীল করবে, ফলে শিল্পক্ষেত্রে অধিক বিনিয়োগ আনতে সাহায্য করবে। শিল্পের ব্যয় কমবে। অর্থনীতির বৃদ্ধির হার বাড়াতে আর্থিক সংস্কারের গুরুত্ব অসীম। অর্থমন্ত্রী সে দিকে নজর দিয়েছেন। এনবিএফসি বা ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থাগুলির পক্ষে বেশ কিছু আর্থিক সুবিধা হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলি একেবারে ঠিক অভিমুখে। এর ফলে অর্থনীতিতে নগদের জোগান বাড়বে।
আর্থিক বৃদ্ধি যাতে বাড়ে আর স্বচ্ছতাও যাতে আসে, এই বাজেটের করনীতি তা নিশ্চিত করবে। পাঁচ লক্ষ টাকা অবধি যাঁদের আয়, এ বার থেকে তাঁদের আয়কর দিতে হবে না। ফলে, তাঁদের হাতে ব্যয়যোগ্য টাকার পরিমাণ বাড়বে। তাঁরা খরচ করলে বাজারও চাঙ্গা হবে। আগে বছরে ২৫০ কোটি টাকা অবধি ব্যবসার ক্ষেত্রে কর্পোরেট করের হার ছিল ২৫%। এ বার থেকে যে সব সংস্থার ব্যবসা বছরে ৪০০ কোটি টাকা অবধি, তাদেরও এই অপেক্ষাকৃত কম হারে কর দিতে হবে। দেশের মোট ব্যবসায়িক সংস্থার ৯৯.৩ শতাংশই এর আওতায় পড়ে। কাজেই, ছোট সংস্থার জন্য এটা এক মস্ত সুবিধা হল।
আয়কর দাখিল করার জন্য এ বার থেকে প্যান বা আধার, যে কোনও একটি দিলেই চলবে। এর ফলে কর দেওয়ার কাজটা সহজতর হবে, আরও অনেক লোক কর দিতে উদ্বুদ্ধ হবেন। আরও কিছু সংস্কারের কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন, যেমন আগে থেকেই পূরণ করে রাখা ট্যাক্স রিটার্ন; বা ই-অ্যাসেসমেন্ট, যেখানে আয়কর অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজনই থাকবে না। এই সংস্কারগুলির ফলে কর দাখিল করতে সময় কম লাগবে, কাজ আরও নির্ভুল হবে, কর প্রশাসনের কাজও সহজতর হবে।
সবার জন্য বাড়ি তৈরির পথে আরও কয়েক ধাপ এগোনো গিয়েছে। রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়বে। বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে জিএসটির হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এই গাড়ি কিনলে ঋণের সুদের ওপর আয়কর ছাড়ের ব্যবস্থা হয়েছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হয়ে ওঠার স্বপ্নের দিকেও এগোল ভারত।
নারী-কেন্দ্রিক নীতি থেকে নারী-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগের পথে হাঁটার কথা বললেন অর্থমন্ত্রী। মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দেওয়া ঋণের ওপর সুদে ভর্তুকির সিদ্ধান্তটি তাৎপর্যপূর্ণ। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য প্রত্যেক মহিলার জনধন অ্যাকাউন্টে ১,৫০০ টাকা দেওয়া বা গোষ্ঠীর এক জনকে মুদ্রা প্রকল্পের অধীনে এক লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত মহিলাদের ক্ষমতায়নের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই বাজেটে শিল্পক্ষেত্রও গুরুত্ব পেয়েছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেট অব থিংস, বিগ ডেটা বা রোবটিকস-এর মতো ভবিষ্যৎমুখী ক্ষেত্রে সরকার মনোযোগ দিয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলির চাহিদা আন্তর্জাতিক বাজারে যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে দেশের বাজারেও। এতে উঁচু মাইনের চাকরির সম্ভাবনাও প্রচুর। প্রযুক্তির সাহায্যে নাগরিকের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের প্রচেষ্টাও এই বাজেটে চোখে পড়ল। দেশের প্রতিটি গ্রামে স্বচ্ছ ভারত মিশনের মাধ্যমে বর্জ্য ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তটি তারই উদাহরণ।
এই বাজেটে গুরুত্ব পেয়েছে জল ও জলসম্পদ। হর ঘর জল বা জল জীবন মিশনের মতো প্রকল্প সুস্থায়ী জল ম্যানেজমেন্টের পক্ষে সহায়ক হবে। পানীয় জল ও নিকাশি মন্ত্রক এবং জলসম্পদ মন্ত্রককে একত্রিত করে জলশক্তি মন্ত্রক গঠনের সিদ্ধান্তটি সব ভারতীয়ের কাছে নিরাপদ ও যথেষ্ট পরিমাণে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগে সহায়ক হবে। প্রধানমন্ত্রী মৎস্যসম্পদ যোজনাও খুবই প্রয়োজনীয় একটি উদ্যোগ।
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণ থাকছে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৩.৩ শতাংশে। ঘাটতির পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে সরকার কতখানি দায়বদ্ধ, এর থেকে তা বোঝা যায়। এর ফলে অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালের কেন্দ্রীয় দেশের বাজেট সর্বজনীন উন্নয়নের পথে একটি সর্বাত্মক প্রচেষ্টার নজির হয়ে থাকল। দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে যা দায়বদ্ধ। ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি হয়ে উঠতে পারবে ভারত, এই বাজেট তেমন প্রত্যাশা তৈরি করল।
মহানির্দেশক, সিআইআই
ইমেল-এ সম্পাদকীয় পৃষ্ঠার জন্য প্রবন্ধ পাঠানোর ঠিকানা: editpage@abp.in
অনুগ্রহ করে সঙ্গে ফোন নম্বর জানাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy