Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Women Harassment

লজ্জা

বিশেষত স্কুল-কলেজে তরুণীদের নিয়মিত যাতায়াতের পথে এক শ্রেণির উচ্ছৃঙ্খল পুরুষ যে নিয়মিত তাহাদের উত্ত্যক্ত করিয়া থাকে, তাহা সম্ভব হয় এই কারণে যে, মেয়েদের নিগ্রহের প্রতি বৃহত্তর সমাজের, এমনকি পুলিশ-প্রশাসনের একটা আশ্চর্য উদাসীনতা কাজ করে।

—প্রতীকী ছবিী।

—প্রতীকী ছবিী।

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:২১
Share: Save:

বাঙালি কি সত্যই আত্মবিস্মৃত হইল? ঘোলার রাজেন্দ্রনগরে এক দুষ্কৃতীর হাতে দুই ছাত্রীর হেনস্থা দেখিয়াও নিষ্ক্রিয় থাকিলেন এলাকার মানুষ। প্রকাশ্যে এক দুর্বিনীত যুবক দুই তরুণীকে যথেচ্ছ প্রহার করিতেছে, তরুণীরা সহায়তা প্রার্থনা করিতেছে, অথচ প্রত্যক্ষদর্শীরা নির্বিকার— ইহাই বাঙালির ‘অস্মিতা’? অপরাধী মাত্রেই কাপুরুষ, সে তাহার সাহস সঞ্চয় করে অপরের প্রশ্রয় হইতে। তাই এ কথা বলিলে অত্যুক্তি হয় না যে, সে দিনের নীরব পল্লিবাসী ওই দুর্বৃত্তের সমান অপরাধী। কোনও এক যাত্রীর পকেট মারিলে সমস্ত যাত্রী তর্জনগর্জনে বাস কাঁপাইয়া অভিযুক্তকে পিটাইয়া আধমরা করিয়া দিবে, কিন্তু কোনও মহিলা যাত্রী অভব্য আচরণের প্রতিবাদ করিলে তাঁহার সামান্য সমর্থনও জুটিবে না— এই অভিজ্ঞতাই দুর্বৃত্তদের নারীনিগ্রহ করিবার স্পর্ধা জুগাইয়া থাকে। বিশেষত স্কুল-কলেজে তরুণীদের নিয়মিত যাতায়াতের পথে এক শ্রেণির উচ্ছৃঙ্খল পুরুষ যে নিয়মিত তাহাদের উত্ত্যক্ত করিয়া থাকে, তাহা সম্ভব হয় এই কারণে যে, মেয়েদের নিগ্রহের প্রতি বৃহত্তর সমাজের, এমনকি পুলিশ-প্রশাসনের একটা আশ্চর্য উদাসীনতা কাজ করে। যৌননিগ্রহের ক্ষেত্র যেন সমাজে প্রস্তুত হইয়াই আছে, অপরাধী নিমিত্তমাত্র। হেনস্থা হইতে কিশোরী, তরুণীর মুক্তি নাই, সমাজ এই ঘৃণ্য ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করিতে চাহে।

অনেকে বলিবেন, অপরাধ দমন পুলিশের কাজ, সাধারণ মানুষ সে ঝুঁকি লইবে কেন? নারীনিগ্রহের প্রতিবাদ করিয়া আহত বা নিহতদের দৃষ্টান্তও দেওয়া হয়। উত্তর সহজ। আইন রক্ষার কাজ পুলিশের হইতে পারে, কিন্তু অপরাধমুক্ত সমাজ গড়িবার কাজটি কেবল পুলিশের নহে, সকল নাগরিকের। ঝুঁকি অবশ্যই থাকিবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করিবার কাজটি কখনওই নিরাপদ নহে। কিন্তু দুষ্কর্ম দেখিয়াও নির্বিকার থাকিবার ঝুঁকি কি নাই? একের বিপদে অপরে সহায়তা করিবে, এই ধারণার উপরেই সমগ্র সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত। এই আস্থা আহত হইলে সমাজের তন্তু শিথিল হইয়া যায়, তাহার ধারকশক্তি হ্রাস পায়। এই কারণেই অপরাধীকে ‘সমাজবিরোধী’ বলা হয়। প্রতিরোধহীন অপরাধ সমাজকে দুর্বল করিয়া দেয়। এই সম্ভাবনা রুখিতেই আনন্দপুর কাণ্ডে নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায়ের মতো মানুষেরা নিজের জীবনের ঝুঁকি লইয়াও নির্যাতিতা মেয়েদের সহায়তায় আগাইয়া যান। রাজেন্দ্রনগরেও এক যুবক রুখিয়া দাঁড়াইলে দুষ্কৃতী পালাইয়াছে। বাংলার বুকে এমন অগণিত মানুষ নিয়ত সাধ্যমতো নারীনির্যাতনের প্রতিবাদ করিয়া চলিয়াছেন। কেহ সংগঠিত ভাবে, কেহ বা একক শক্তিতে।

রাজেন্দ্রনগরের ঘটনার অপর উদ্বেগজনক দিকটি হইল, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেও পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করিতে পারে নাই। অর্থাৎ নারী নির্যাতনের সামাজিক প্রতিরোধ যেমন দুর্বল, তেমন আইনি প্রতিকারও সবল নহে। কিশোরী কন্যা যে কোনও মুহূর্তে অপরাধের শিকার হইতে পারে, এই উদ্বেগে নিয়ত দিন কাটায় তাহার পরিবার। এই অনিশ্চয়তার একটি প্রকাশ নাবালিকা বিবাহ। কন্যাকে সুরক্ষিত রাখিবার দায়িত্ব কঠিন বোধ হওয়ায় তাহা এড়াইতে চাহে পরিবার। সাম্প্রতিক জাতীয় সমীক্ষা বলিতেছে, এ রাজ্যে নাবালিকার বিবাহের হার আজও ৪১ শতাংশ। তরুণীদের নিরাপত্তার অভাব ইহার অন্যতম কারণ। সরকার উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিলেও, রাস্তা ও পরিবহণ নিরাপদ না হইলে মেয়েরা সেই সুযোগ গ্রহণ করিতে পারিবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Women Harassment Public Place No protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy