Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

বৃক্ষ-বিপর্যয়

দশ মিনিটের কালবৈশাখী বহিলেও শহরের একাধিক স্থান গাছ পড়িয়া অবরুদ্ধ হইয়া যায়।

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২০ ০১:০০
Share: Save:

কলিকাতা ধুঁকিতেছিল মাত্রাতিরিক্ত দূষণে, সবুজের অভাবে। সেই দুরবস্থাকে আরও বহু গুণ বাড়াইল আমপান। সমূল উৎপাটিত কলিকাতার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বৃক্ষ। তালিকায় ক্ষতিগ্রস্তদের যোগ করিলে সংখ্যাটি আরও বাড়িবে। বস্তুত, আমপান-পরবর্তী শহর এমন একটিও রাস্তা দেখে নাই, যেখানে কোনও মহীরুহ ধরাশায়ী হয় নাই। শুধুমাত্র শিবপুর বটানিক্যাল গার্ডেনেই ক্ষতিগ্রস্ত গাছের সংখ্যা হাজার ছাড়াইয়াছে। বিপর্যস্ত বহু দুষ্প্রাপ্য গাছ। রবীন্দ্র সরোবরের অবস্থা শোচনীয়। যশোর রোডের দু’ধারের প্রাচীন গাছ কাটিয়া সড়ক সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হইয়াছিলেন নাগরিকরা। গাছ বাঁচাইতে মামলা গড়াইয়াছিল উচ্চ আদালত পর্যন্ত। সেই গাছগুলিও তছনছ করিয়াছে ঘূর্ণিঝড়। দূষণে মলিন কলিকাতার ক্ষেত্রে এই ক্ষতি অপূরণীয়।

অবশ্য ঝড়ে গাছ পড়িবার ঘটনা কলিকাতায় নূতন নহে। দশ মিনিটের কালবৈশাখী বহিলেও শহরের একাধিক স্থান গাছ পড়িয়া অবরুদ্ধ হইয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলস্তর মাটির কাছাকাছি থাকিবার দরুণ গাছের মূল গভীরে পৌঁছাইতে না পারাই ইহার জন্য দায়ী। ফলে, সামান্য জোর বাতাসও ক্ষেত্রবিশেষে অসহনীয় হইয়া উঠে। কিন্তু ইহা একটি কারণ। অন্য কারণটি নিঃসন্দেহে মনুষ্যকৃত। কলিকাতায় প্রতি বৎসর ঘটা করিয়া বৃক্ষরোপণ হয় ঠিকই, কিন্তু তাহাতে চূড়ান্ত অনিয়ম এবং পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। মাটির চরিত্র অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ লইয়া বৃক্ষরোপণের প্রয়াস সরকারি তরফেও বিশেষ চোখে পড়ে না। বৃক্ষরোপণের ক্ষেত্রে সৌন্দর্যায়ন এবং দ্রুত বৃদ্ধির প্রতি যত গুরুত্ব দেওয়া হয়, স্থায়িত্বের প্রতি নহে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবও প্রকট। রোপণের পর তাহাদের কয়টি বাঁচিল, সেই নজরদারিটুকুও করা হয় না। যে কয়টি বাঁচিয়া যায়, কখনও তাহাদের শরীরে বিদ্যুতের তার জড়াইয়া, কখনও বিজ্ঞাপন গাঁথিয়া, কখনও গোড়ায় সিমেন্টের বেদি বাঁধাইয়া জবরদস্তি আয়ু হ্রাস করিবার সুব্যবস্থা করা হইয়া থাকে। ইহাই এত কাল অবাধে চলিয়া আসিতেছে। আমপান বুঝাইয়া দিল, এই বেনিয়ম বন্ধ হইবার সময় উপস্থিত।

গাছ লাগাইবার, উপড়াইয়া পড়া গাছের কিয়দংশকে বাঁচাইবার নানাবিধ ঘোষণা এবং প্রচেষ্টা আপাতত চোখে পড়িতেছে। সেই প্রচেষ্টার পালে আরও কিছু বাতাস লাগিবার সম্ভাবনা। কলিকাতা পুরসভা যেমন সিদ্ধান্ত লইয়াছে, বন দফতরের নার্সারিতে লালিত তিন হইতে দশ বৎসর বয়সি গাছগুলিকে প্রতিস্থাপিত করা হইবে উৎপাটিত মহীরুহের স্থলে। প্রচেষ্টাটিকে স্বীকার করা বিধেয়, কিন্তু ইহাই যথেষ্ট নহে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতো, মাটির চরিত্র অনুযায়ী, কোথায় কোন ধরনের গাছের প্রয়োজন তাহা বুঝিয়া পরিকল্পিত ভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করিতে হইবে। অবিলম্বে তার এবং বিজ্ঞাপনের জঞ্জালমুক্ত করিতে হইবে গাছগুলিকে। ইহাতে ঝড়ের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কমিবে। সঙ্গে প্রয়োজন যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের। সরকারের পক্ষে একক ভাবে এই বিশাল দায়িত্ব লওয়া কার্যত অসম্ভব। সুতরাং, নাগরিক সমাজকেও এই কার্যে যুক্ত করিতে হইবে। মনে রাখিতে হইবে, গাছদের সুস্থ, সবল রাখা শুধুমাত্র সরকারি কর্মসূচি নহে। বৃহদর্থে তাহা নাগরিক দায়িত্বও বটে। কত গাছ পড়িল ভাবিয়া বিলাপের সময় অতিক্রান্ত। এখন কাজ করিতে হইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy