Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Sushant Singh Rajput

কু-বাক্পটু

স্পষ্টতই, একযোগে অভিনেতা, পরিচালকদের এহেন মামলা অভূতপূর্ব। পেশার খাতিরেই প্রচারমাধ্যমের সহিত চলচ্চিত্র জগতের একটি পারস্পরিক সহযোগিতার আবহ অত্যাবশ্যক ছিল।

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ০১:১০
Share: Save:

পেশাগত রেষারেষিকে দূরে সরাইয়া এক হইয়াছে বলিউড। এক হইয়াছে সম্মানরক্ষায়। গত কয়েক মাস যাবৎ এক শ্রেণির মিডিয়া যে রূপে বলিউডের প্রথম সারির নায়ক-পরিচালকদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিষোদ্গার করিয়াছে, তাহার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি অভিনেতা এবং পরিচালকদের বহু সংস্থা মিলিয়া দুইটি টিভি চ্যানেল ও তাহার জনাকয়েক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে যে মামলা করিয়াছে, তাহার মূল অভিযোগই ছিল, শিল্পীদের প্রতি নিরন্তর দায়িত্বজ্ঞানহীন, অবমাননাকর ও অপমানসূচক শব্দের প্রয়োগ। তাহার ফলে দেশে-বিদেশে বলিউডের ভাবমূর্তি প্রবল ধাক্কা খাইয়াছে। মহাসঙ্কটে পড়িয়াছে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী ও কর্মীদের জীবন ও জীবিকা। সুতরাং মামলাকারীদের পক্ষ হইতে দাবি উঠিয়াছে, নিয়ন্ত্রণ করা হউক এই সকল অপভাষী মিডিয়াকে।

স্পষ্টতই, একযোগে অভিনেতা, পরিচালকদের এহেন মামলা অভূতপূর্ব। পেশার খাতিরেই প্রচারমাধ্যমের সহিত চলচ্চিত্র জগতের একটি পারস্পরিক সহযোগিতার আবহ অত্যাবশ্যক ছিল। তাল কাটিয়া দিল সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। ‘নেপোটিজ়ম’-এর অভিযোগ তুলিয়া বলিউডকে প্রায় ব্রাত্য করিয়া দিবার আহ্বান উঠাইল দৃশ্যমিডিয়ার একাংশ। তাহার নেপথ্যে রহিল রাজনৈতিক কলকাঠি নাড়িবার অনতি-নিহিত অভিপ্রায়। সুশান্ত-মৃত্যুর তদন্ত শুরু হইবার ঢের পূর্বেই ‘মিডিয়া ট্রায়াল’-এ দোষী সাব্যস্ত হইয়া গিয়াছেন অভিনেতার বান্ধবী। কাহার বা কাহাদিগের প্ররোচনায় এই প্রতিশ্রুতিমান তরুণ অভিনেতা আত্মহননের পথ বাছিয়া লইলেন, তাহার সন্ধানে মিডিয়ার বুম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার চোখ অচিরেই প্রবেশ করিয়াছে বলিউডের ‘অন্ধকার’ অভ্যন্তরে। মাসাধিক কাল ধরিয়া প্রতি দিনের আলোচনায় চর্চা চলিতেছে বলিউডের তথাকথিত ‘অতি-পঙ্কিলতা’ লইয়া, শিল্পীদের ব্যক্তিগত জীবন লইয়া।

এই সম্পূর্ণ ঘটনাক্রম অনভিপ্রেত তো বটেই, অত্যন্ত কুরুচিকর এবং অনৈতিক। তবে যাহা প্রধানত আপত্তিকর, তাহা হইল— রাজনীতির তর্জনীর কাছে প্রচারমাধ্যমের একাংশের সামগ্রিক আত্মবিক্রয়। কেন যে বিজেপি রাজনীতি বলিউডের প্রতি খড়্গহস্ত, বুঝিতে অসুবিধা হয় না। বলিউড তো শুধুমাত্র একটি বিনোদন ক্ষেত্র নহে। ইহার মধ্যে একটি ক্ষুদ্র ‘ভারত’ লুকাইয়া, যে ভারত নানা ভাষা, নানা ধর্ম, নানা সংস্কৃতির স্রোতের মিলনে কলকল শব্দে প্রত্যহ প্রবাহিত। মানুষ এখানে বিচ্ছেদ ভুলিয়া মিলিত হন, একসঙ্গে কাজ করেন, শিল্প ও শিল্পীর নিকট অনায়াসে হার মানিয়া যায় সঙ্কীর্ণ ভেদাভেদের চিহ্নকসমূহ। এমনকি প্রতিবেশী পাকিস্তান হইতে আগত শিল্পীরাও এখানে সমান ভাবে সমাদৃত হন। এখানে রাজনীতির কথা কেহ বলে না, বলে কীর্তি ও কৃতির ভিত্তিতে উদার সমন্বয়ের কথা। স্বভাবতই, এহেন এক মিলনক্ষেত্র বিজেপি নেতাদের অনেকেরই চক্ষুশূল। বিজেপির নিজস্ব ‘ভারত’টিতে সর্বদা যে সর্বাত্মক বিভাজন মন্ত্র, তাহা তাই বলিউডের ‘ভারত’কে শত্রু হিসাবে বাছিয়া লইয়াছে, আর ভারতের প্রচারমাধ্যমের আত্মমর্যাদাবোধবিহীন অংশটিকে এই বিনোদন ক্ষেত্রটিকে বিপর্যস্ত করিবার কাজে নিযুক্ত করিয়াছে। শেষ অবধি ইহাতে দেশের গৌরব বাড়িবার বদলে যে ধূলিসাৎ হইতেছে, তাহা বুঝিবার সাধ্য থাকিলে তো!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE