Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

জীবনের পথ

আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত এক বিশেষ মানসিক পরিস্থিতিতে জন্ম লয়। সেই পরিস্থিতির উন্নতি হইলে, সিদ্ধান্তটিও পরিবর্তিত হইবার সম্ভাবনা। মানুষের ভাবনা, সিদ্ধান্ত লওয়া এবং তাহার আচরণকে পরিবর্তিত করিয়া এক উন্নততর জায়গায় লইয়া যাইবার কথা বলে ‘নাজ থিয়োরি’।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

ক্রমেই আত্মহত্যাপ্রবণ হইয়া উঠিতেছে কলিকাতার সুড়ঙ্গপথ। বিশেষত বিগত কয়েক বৎসরে মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়া আত্মহত্যার সংখ্যা তুলনায় বাড়িয়াছে। ইতিমধ্যেই নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত কলিকাতা মেট্রো। তাহাতে অতিরিক্ত সংযোজন— আত্মহত্যা অথবা আত্মহত্যার প্রচেষ্টার দরুন ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন। চালকদের তৎপরতায় অথবা রক্ষীদের নজরদারিতে কিছু প্রাণহানি ঠেকানো সম্ভব হইয়াছে ঠিকই, কিন্তু যাত্রী হয়রানি কমে নাই। বরং মেট্রোয় আত্মহত্যা নিত্যনৈমিত্তিকতায় পর্যবসিত। বিদেশের মেট্রোয় আত্মহত্যা ঠেকাইবার ব্যবস্থা হিসাবে স্ক্রিনডোরের ব্যবস্থা আছে। লোকসানে-চলা কলিকাতা মেট্রোর পক্ষে এখনই প্রতিটি স্টেশনে সেই ব্যবস্থা করা কার্যত অ-সম্ভব। সুতরাং, নজরদারি ক্যামেরা এবং প্ল্যাটফর্মে নিযুক্ত রক্ষীদের উপর ভরসা করিয়াই আত্মহত্যা ঠেকাইবার কাজটি চলিতেছে। স্পষ্টতই, তাহাতে সুফল তেমন মিলে নাই। মেট্রোয় আত্মহত্যা ঠেকাইবার পন্থা হিসাবে বিশেষজ্ঞরা বারংবার উপযুক্ত প্রচারের উপর জোর দেন। অভিযোগ, ভিড় মেট্রোয় উঠিতে গেলে কী বিপত্তি হইতে পারে, বা অগ্নিকাণ্ড ঘটিলে কী করা উচিত, তাহা লইয়া যত প্রচার চালানো হইতেছে, আত্মহত্যা ঠেকাইবার ব্যাপারে ততটা নহে। এই ক্ষেত্রে মেট্রো কর্তৃপক্ষ আশ্চর্য উদাসীন। স্টেশনগুলিতে কিছু হেল্পলাইন নম্বর মজুত থাকিলেও অধিকাংশই নাগরিকের দৃষ্টির আড়ালে। স্বাভাবিক ভাবেই যাঁহারা আত্মহত্যা করিতে মনস্থ করিয়াছেন, তাঁহারা সেই নম্বর খুঁজিয়া, তাহাতে যোগাযোগ করিয়া নিজেকে স্থিত করিবার চেষ্টা করিবেন, এমন ভাবনা অলীক।

আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত এক বিশেষ মানসিক পরিস্থিতিতে জন্ম লয়। সেই পরিস্থিতির উন্নতি হইলে, সিদ্ধান্তটিও পরিবর্তিত হইবার সম্ভাবনা। মানুষের ভাবনা, সিদ্ধান্ত লওয়া এবং তাহার আচরণকে পরিবর্তিত করিয়া এক উন্নততর জায়গায় লইয়া যাইবার কথা বলে ‘নাজ থিয়োরি’। তত্ত্বটি জনপ্রিয় হয় মূলত আচরণবাদী অর্থনীতির তাত্ত্বিক রিচার্ড এইচ থেলার-এর হাত ধরিয়া। মানুষের চিন্তাধারাকে পরিবর্তিত করিবার উপায় হিসাবে নাজ তত্ত্ব সরাসরি নির্দেশ বা শাস্তি ইত্যাদির পরিবর্তে অপ্রত্যক্ষ ভাবে সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করিবার কথা বলে। যেমন এই তত্ত্ব অনুযায়ী, যত্রতত্র আবর্জনা ফেলিবার প্রবণতা কমে জরিমানার ভয় দেখাইয়া নহে, বরং নাগরিকের নাগালের মধ্যে আবর্জনা পাত্রের সংখ্যা বৃদ্ধি করিলে। অনুরূপ ভাবে, মেট্রোয় আত্মরক্ষা-বিরোধী প্রচারকে জোরদার করা যাইতে পারে আত্মহত্যা অনুচিত— এই জাতীয় নীতিকথার উপর ভিত্তি করিয়া নহে, বরং আত্মহত্যার পর একটি পরিবারের অবস্থা কী দাঁড়াইতে পারে, সেই ভাবনা বুননের মাধ্যমে। সঙ্গে অবশ্যই অবসাদগ্রস্তের পাশে দাঁড়াইবার আশ্বাসগুলিকেও স্পষ্ট ও দৃষ্টিগোচর করিবার ব্যবস্থা করিতে হইবে। সত্য কথা যে, আত্মহত্যা প্রবণতা হ্রাস করিবার গুরুদায়িত্বটি মেট্রোর একার নহে। বৃহদর্থে সমাজেরও বটে। দীর্ঘ মানসিক অবসাদ হইতেই আত্মহত্যা প্রবণতার জন্ম হয়। প্রয়োজন, তিনি যে পৃথিবীতে একা নহেন, অন্যরাও তাঁহার পার্শ্বে আছেন, সেই কথাটি বুঝানো। এই দায়িত্বটি তাঁহার পরিপার্শ্বের মানুষদের। অবসাদ এবং তাহা হইতে উদ্ভূত আত্মহত্যা-প্রবণতার সমস্যায় সারা বিশ্ব ভুগিতেছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টা ব্যতীত এই মারণরোগ হইতে মুক্তি নাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Metro Rail Suicide Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy