Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
JNU

ছাত্রেরা খোলামনে ভাববে এটাই স্বাভাবিক

রবিবার জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখোশধারীদের হামলায় ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষ-সহ একাধিক ছাত্রছাত্রী আহত হন। বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তচিন্তার পীঠস্থান বলে ধরে নেওয়া হয়। মুক্তচিন্তক নতুন প্রজন্ম রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর নেমে আসে আঘাত। কলকাতার যাদবপুর থেকে দিল্লির জেএনইউ— সর্বত্র ছবিটা এক। কেন বারবার ঘটে একই ঘটনা? শুনলেন বিদ্যুৎ মৈত্রপ্রশ্ন তুললেই বিপদ। প্রশ্ন কোরো না। তবু ছাত্রেরা প্রশ্ন তোলে। আমরাই বলি সব প্রশ্নের উত্তর হয় না।

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৩৪
Share: Save:

ছোটবেলায় নজরুলের ‘ছাত্রদল’ কবিতায় পড়েছি ‘আমরা শক্ত মাটি রক্তে রাঙাই, বিষম চলার ঘায়’, ছাত্রেরা দেশের ভবিষ্যৎ। আর আগামী দিনে দেশকে সুন্দর রাখতে হলে মানুষকে ভাল রাখতে হবে এই চিন্তায় তাঁরা নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাঁরা জানেন, মানুষ শান্তিতে না থাকলে দেশ সুন্দর হবে না, এটা বাস্তব। এই বাস্তবের কথা ভাবতে পারে একমাত্র নতুন প্রজন্ম। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে তাঁরা বুঝে নিতে চান কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা। মিথ্যাকে সত্যি বলে চালানোর নেশা থাকে রাষ্ট্রের। দেশের নাগরিকেরা সে কথার জবাব চাইতে পারে না পাছে শাসকের প্রতিশোধস্পৃহা জেগে ওঠে তাঁদের প্রতি। কিন্তু শাসকের চোখে চোখ রাখতে ভয় পায় না ছাছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের চোখেই আছে আকাশ দেখার স্বপ্ন— যে ভয় পায় না, প্রশ্ন তোলে, জবাব চায়। মুখোশ খুলে দিতে চায় হ্যাঁচকা টানে। তাদের দাপটে ভয় পেয়ে আঘাত করে শাসক তাকে দমিয়ে দিতে চায়। দমনের চেষ্টা করে কিন্তু দমিয়ে রাখতে পারে কই?

মিরসাদ আলি

বেলডাঙা কলেজের ছাত্র

প্রশ্ন তুললেই বিপদ। প্রশ্ন কোরো না। তবু ছাত্রেরা প্রশ্ন তোলে। আমরাই বলি সব প্রশ্নের উত্তর হয় না। তারা কিন্তু জানার আগ্রহেই প্রশ্ন তোলে। প্রশ্নের উত্তর না থাকলে হয় আমাকে এড়িয়ে যেতে হয়, না হয় তাকে ধমক দিতে হয়। ছাত্রেরা এই নিয়ম মানতে চায় না। কখনও উপাচার্যের সঙ্গে কখনও শাসকের চোখে চোখ রেখে তারা প্রশ্ন তুলতে দ্বিধা করে না। সত্যি না জানালে তারা মিলিত ভাবে সেই প্রতিবাদ করে। সঙ্ঘবদ্ধ আওয়াজ তোলে। সেই আওয়াজ কানে লাগে শাসকের। তাকে থামিয়ে দিতে শেষ অস্ত্র ‘আঘাত’ প্রয়োগ করতে পিছপা হয় না যে কোনও শাসক। দিনের শেষে আসল জয় হয় কিন্তু মুক্ত চিন্তার সেই সব সবুজদের।

আইভি বন্দ্যোপাধ্যায়

শিক্ষিকা, টেকারায়পুর হাইস্কুল

খোলা মনে যে প্রশ্নগুলো উঠে আসে তার উত্তর জানতে কত কত অক্ষর পড়তে হয়। আর সেই পড়া থেকেই নতুন চিন্তা আসে। এই চিন্তাই খুঁজে আনে নতুন রাস্তা। তা সম্ভব করে তোলে পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের চিন্তার ফসলে দেশ এগিয়ে চলে। তাদের চিন্তার বিকাশকে যদি আটকে দেওয়া হয় তা হলে মুখ থুবড়ে পড়বে আগামী ভারত। ভয় পেয়ে পিছিয়ে গিয়ে যদি তারা আটকে যায়, কুপমণ্ডুকতায় তখন দেশ আটকে যাবে। দেশের নাগরিক নোবেল পেলে আহ্লাদিত হই। শাসকের যখন চোখ রাঙায় বাধ্য করে প্রশ্ন না তুলতে, তখন মনে হয় ভারতের দৌড় দিল্লিতেই শেষ, বিশ্বের কাছে তার কোনও ঠিকানা নেই।

শ্রীচন্দা চক্রবর্তী

ডিএলএড ছাত্রী, বহরমপুর বিএড কলেজ

পড়ুয়াদের ওপর আক্রমণ কোনও নতুন ঘঠনানয়। শিক্ষাঙ্গনে মুক্তচিন্তার ধারক ও বাহককে বারেবারে শাসক আঘাত করে। তারা মুক্তচিন্তার আখড়াকে নষ্ট করে মানুষের চিন্তায় চেতনায় আঘাত হানতে চায়। যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটে তখন সত্যজিত রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ সিনেমাটার কথা মনে পড়ে। সেখানে দেখানো হয়েছিল, যত বেশি পড়ে, তত বেশি জানে। যত বেশি জানে, তত কম মানে। পড়াশোনার পরিবেশকে নষ্ট করে দিয়ে বুদ্ধিকে ভোঁতা করে দিতেই শাসকের আগ্রহ। বারেবারেই দেখেছি শাসকের রং বদলেছে, চেহারা বদলেছে কিন্তু তার শাসনের ধরনের কোনও রকম বদল হয়নি। মুক্তচিন্তায় আঘাত করা স্বাধীনতার সময় থেকেই চলছে। আজকের দিল্লির জেএনইউ বা কলকাতার যাদবপুর কোনও ভাবেই তার ব্যতিক্রম নয়। তবে শাসকের চোখে চোখ আগেও রেখেছে ছাত্রেরা এখন ও তারা সেই ভাবে চলছে। আগামী দিনেও পচাগলা খোলনলচে বদলাতে ছাত্রছাত্রীরাই পারবে।

ডাক্তারি পড়ুয়া,
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ

অন্য বিষয়গুলি:

JNU JNU ATTACK JNU VIOLENCE
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy