—প্রতীকী ছবি
দুষ্টু লোককে ‘ভ্যানিশ’ করিবার ব্যঙ্গচিত্র লইয়া এক কালে এই রাজ্যে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটিয়াছিল। আজ আবার ‘দুষ্টু লোক’দের ভ্যানিশ হইতে দেখিয়া বঙ্গবাসী নিশ্চয়ই যারপরনাই আমোদিত। ‘নারদ কেলেঙ্কারি’র সূত্রে রাজ্যের শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের একটি পুরুষ্টু অংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং তাহার প্রমাণ হিসাবে ভিডিয়ো-চিত্রের প্রদর্শনী লইয়া রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল তুলিবার পিছনে বিজেপি নামক দলটির প্রবল ভূমিকা ভুলিবার নহে। দুর্নীতি-উদ্ঘাটনী ‘স্টিং অপারেশন’-এর পিছনে এই দলের অনুপ্রেরণা ইত্যাদি ছিল কি না বা কত দূর ছিল, তাহা জল্পনার বিষয়। কিন্তু ওই ভিডিয়ো লইয়া বিজেপি নেতারা সে দিন যে প্রবল শোরগোল তুলিয়াছিলেন, তাহার উদ্দেশ্য জল্পনাতীত। তাঁহারা এতদ্দ্বারা রাজ্য সরকার তথা তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতির স্বরূপ জনসমক্ষে তুলিয়া ধরিতে তৎপর হইয়াছিলেন। বিরোধী দলের পক্ষে এমন তৎপরতা অত্যন্ত স্বাভাবিক। গণতন্ত্রে তাহা জরুরিও বটে।
এই অবধি গোল ছিল না। গোল বাধিয়াছে শাসক দলের ডাকসাইটে নেতা তথা মন্ত্রী বিজেপিতে যোগ দিবার পরে। ‘বড় দাদা’ অমিত শাহ অভিমুখে শুভেন্দু অধিকারীর বৃহৎ উল্লম্ফনের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সমাজমাধ্যমে বিজেপির পরিসর হইতে নারদ কেলেঙ্কারির ভিডিয়োটি উবিয়া গিয়াছে। কেন? বিজেপির নেতা ও মুখপাত্রদের এই বিষয়ে প্রশ্ন করিলে তাঁহারা নাকি আনমনে কড়িকাঠ গুনিতে ব্যস্ত হইয়া পড়িতেছেন। তবে পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ বড় জোরদার— নারদ কেলেঙ্কারির সংশ্লিষ্ট চলচ্চিত্রে শ্রীযুক্ত শুভেন্দু অধিকারীও ছিলেন। লক্ষণীয়, সেই চিত্রমালায় যে নেতাদের ছবি ছিল, তাঁহাদের কেহ কেহ আগেই তৃণমূলের পতাকা ফেলিয়া বিজেপির নামাবলি ধারণ করিয়াছেন, কিন্তু তাহার পরেও ওই চিত্রগুলি বিজেপির আঙিনা হইতে সরানো হয় নাই। আঙিনার মালিক ও রক্ষীরা হয়তো মাথা ঘামান নাই। এখন রাজনীতির বাতাসে নির্বাচনের উত্তাপ, এই মরসুমে ‘বড় মাছ’ ধরিবার গুরুত্বই আলাদা, ফলে টনক নড়িয়াছে, সকলের সব ছবিই অন্তর্হিত হইয়াছে। কার্যকারণসূত্রটি অতঃপর সহজেই অনুমান করা চলে: অধিকারী মহাশয়েরা তখন তৃণমূল কংগ্রেসের, সুতরাং বিজেপির বিচারে দুষ্টু লোক ছিলেন, আজ বিজেপির হইয়াছেন, সুতরাং আর দুষ্টু লোক নহেন। এই অন্তর্ধানের গভীরতর অর্থ: বিজেপিতে যোগ দিলেই সমস্ত কলঙ্ক মুছিয়া যায়। ছবি ভ্যানিশ হইয়াছে, ইহা বাহিরের সত্য। দুষ্টুমি ভ্যানিশ করিয়াছে, ইহাই অন্তর্নিহিত দর্শন।
বিজেপির নেতারা পশ্চিমবঙ্গে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল কংগ্রেস’-এর বিপরীতে নিজেদের বিশুদ্ধ সততার বিজ্ঞাপন প্রচারে সদাব্যস্ত। বিধানসভা নির্বাচনে দুর্নীতির বিরোধিতাকে তাঁহারা অন্যতম প্রধান বিষয় হিসাবে তুলিয়া ধরিতে চাহেন। সাধু। তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনে দুর্নীতির প্রকোপ বাড়িয়াছে, তাহাতে শাসক দলের বিভিন্ন স্তরের প্রশ্রয় ও যোগাযোগের অভিযোগও বিস্তর। ইহার প্রতিবাদ ও প্রতিকার নিশ্চয়ই বিরোধী রাজনীতির গণতান্ত্রিক দায়। অথচ রাজনীতির হাওয়ায় ভোটের পরশ লাগিতে না লাগিতে বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেস ভাঙাইয়া দল ভারী করিবার লক্ষ্যে কার্যত বাধাবন্ধহীন অভিযানে নামিয়াছে। দলের রাজ্য সভাপতি জানাইয়াছেন, তাঁহাদের ‘অফার’ আগামী বৎসরেও থাকিবে। দৃশ্যত, এই অভিযানে দুর্নীতির প্রশ্নটি ধর্তব্যই নহে। শাসক শিবিরের যে নেতাদের দুর্নীতির নিন্দায় বিজেপি অতীতে পঞ্চমুখ ছিল, তাঁহারা শিবির বদলাইয়া ‘আমাদের লোক’ হইলেই নিষ্কলঙ্ক হইয়া যাইবেন। ইহাই তবে দুর্নীতি-বিরোধী সৎ রাজনীতি? কংগ্রেসের মুখপাত্র বিজেপিকে ‘ওয়াশিং পাউডার’-এর সহিত তুলনা করিয়াছেন। ওয়াশিং পাউডার সামান্য বস্তু। সমস্ত কলঙ্ক নিমেষে ভ্যানিশ করিবার ক্ষমতায় ভারতীয় জনতা পার্টি হয়তো প্রফেসর শঙ্কুর অ্যানাইহিলিন-এর যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy