ইভো মোরালেস।— ফাইল ছবি
সচলাবস্থাকে কী করিয়া অচল করিয়া দেওয়া যায়, তাহার সাক্ষী আজিকার ভারত। তবে ইহার পশ্চাতে এক সুচিন্তিত দীর্ঘ প্রক্রিয়া আছে, যাহা অনুধাবন করা সম্ভব। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশ বলিভিয়ায় যাহা ঘটিল, তাহা বুঝিয়া উঠা কঠিন, প্রাথমিক ভাবে ঘটনার জটিলতা অপেক্ষা আকস্মিকতাই বিমূঢ় করিয়া দেয়। গত উনিশ বৎসর ধরিয়া প্রেসিডেন্ট এভো মোরালেসের নেতৃত্বে বলিভিয়ার ঘরোয়া রাজনীতি স্থিতিশীল ছিল, তাহার প্রমাণ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচকে তাহাদের ক্রমোন্নতি। অথচ, কী হইতে কী হইয়া যাইল— মোরালেসের পুনর্নির্বাচনে দুর্নীতির অভিযোগ উঠিল, সহিংস আন্দোলনে মাতিয়া উঠিলেন দেশবাসী, অবরোধে শামিল হইল সশস্ত্র বাহিনীও, বাধ্যত পদত্যাগ করিলেন প্রেসিডেন্ট, প্রাণ বাঁচাইতে মেক্সিকোয় আশ্রয় লইলেন তিনি, এবং ফাঁকা আইনসভায় অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ লইয়া ফেলিলেন এক বিরোধী সেনেটর জানিনে আনিয়েস। এত দ্রুত পটপরিবর্তনের সহিত তাল মিলাইয়া উঠা কঠিন, তবে ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করিলে আন্তর্জাতিক রাজনীতির যোগ স্পষ্ট হইবেই।
মোরালেসকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়াছে মধ্য-বামপন্থীদের শাসনাধীন মেক্সিকো; এবং দুই, দক্ষিণপন্থী সেনেটর আনিয়েসের শপথগ্রহণকে মান্যতা দিয়াছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র— এই দুইটি ঘটনা হইতে বলিভিয়া কী ভাবে বিশ্ব-রাজনীতির ক্রীড়নক হইয়াছে, অনুমান সম্ভব। বিশ্বশক্তি হইয়া উঠা ইস্তক দক্ষিণ আমেরিকাকে স্বগৃহের উঠান বলিয়া ভাবিতেই ভালবাসে ওয়াশিংটন। আপনার গৃহে অস্বস্তি বজায় রাখিতে কেই বা চাহে? ইতিপূর্বেও কড়া মার্কিন-বিরোধী ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো নির্বাচনে জয়ী হইলেও বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদো নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করিয়াছেন এবং তাঁহাকে স্বীকৃতি দিয়াছে আমেরিকা। বলিভিয়া ও ভেনেজুয়েলা এক নহে। কয়েক বৎসর ধরিয়া ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি বিধ্বস্ত, অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলায় আইনকানুন তলানিতে। অথচ এক দশকেরও অধিক ধরিয়া ওই মহাদেশে বলিভিয়ার বৃদ্ধির হার সর্বাধিক, এবং যে দেশগুলিতে অপরাধের হার সবচেয়ে কম সেই তালিকাতেও প্রথম দিকে বলিভিয়া। ওয়াশিংটন মোরালেসের রাজনৈতিক সুস্বাস্থ্য কামনা করিল না বলিয়াই ঘটনাপ্রবাহ নাটকীয় ভাবে পাল্টাইল।
মোরালেসের মার্কিন বিরোধিতা এবং মুক্ত বাজারের বিরোধিতা করিয়া রাষ্ট্রায়ত্তকরণ প্রক্রিয়ার উদ্যোগ তো বটেই, প্রাকৃতিক সম্পদে ধনবান হওয়াও বলিভিয়ার পক্ষে কাল হইয়াছে। টিন, রুপা ও লিথিয়াম এই তিন খনিজ বাজারের নিরিখে খুব দামি, তাহার বিরাট ভাণ্ডার বলিভিয়া। এই রাজনৈতিক অস্থিরতার পশ্চাতেও এই ভাণ্ডারেরই অবদান বলিয়া অনুমান করা চলে। দীর্ঘ কাল ধরিয়া শাসক থাকিবার বাসনায় প্রশাসনকে কাজে লাগাইয়া মোরালেস যে সকল পদক্ষেপ করিয়াছেন, তাহাও নিঃসন্দেহে স্বৈরাচারী। দুইয়ে মিলিয়া দেশব্যাপী ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিলেও তাহা এত দূর যায় নাই, যাহাতে মোরালেসের পলায়ন বিনা পথ থাকে না। বস্তুত, বিগত কয়েক দিনে বলিভিয়ার সেনা যে ভাবে পেশিপ্রদর্শন করিয়াছে, তাহাকে অভ্যুত্থান বলিলে ভুল হয় না। দীর্ঘ রাজনৈতিক স্থিতি ভাঙিয়া পড়িবার ফলে বলিভিয়ার তো বিপুল ক্ষতি হইল, বিশ্ব-রাজনীতিরও লাভ হইল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy