ট্রাম্প ও পুতিন। —ফাইল চিত্র।
রতনে রতন চিনিয়াছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভ্লাদিমির পুতিনের জুটি অবলীলাক্রমে একের পর এক আপন রেকর্ড ভাঙিয়া চলিয়াছেন। দুই বৎসর আগে ওয়াশিংটনে এক বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের দেখাইয়া রুশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, ‘ইহারাই বুঝি আপনাকে অপমান করে?’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জবাব দেন নাই, স্বভাবসিদ্ধ মুখভঙ্গি করিয়া হাসিয়াছিলেন, সেই মুখব্যাদানে যোগ দিয়াছিলেন পুতিন। তাহার পরে দুই বৎসর কাটিয়াছে, অশোভন কথা ও ভঙ্গির বহু অনুশীলনে অভ্যাস আরও অনেক জমিয়াছে। বিশেষত, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণবিধি লইয়া আজ আর নূতন করিয়া অবাক হইবার কোনও প্রশ্ন নাই। গত সপ্তাহে জাপানের ওসাকা শহরে জি-২০ দেশগোষ্ঠীর শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে তিনি আবারও, পুতিন সহযোগে, নূতন কীর্তি স্থাপন করিলেন। দুই নেতা সাংবাদিকদের মুখোমুখি বসিবার পরেই রুশ নায়কের দিকে চাহিয়া তাঁহার মন্তব্য: ‘উহাদের নিকেশ করা যাক। মিথ্যা সংবাদ (ফেক নিউজ়) দারুণ ব্যাপার। আপনার তো এই সমস্যা নাই।’ এক মুহূর্ত চুপ করিয়াই পুতিনের জবাব, ‘আমাদেরও ওই সমস্যা আছে, একই সমস্যা।’ অতঃপর দুই জনের অর্থপূর্ণ যুগ্ম-হাস্য।
এই বদ-রসিকতার যুগলবন্দি কেবল কুরুচির পরাকাষ্ঠা নহে, গভীর উদ্বেগের কারণ। ট্রাম্প তাঁহার দেশের স্বাধীনচেতা ও প্রশ্নবাচী সাংবাদিকদের উঠিতে বসিতে গালি দেন, তাঁহাদের ‘জাতির শত্রু’ বলিয়া নিন্দা করেন, কোনও সংবাদ, এমনকি প্রমাণিত তথ্যও তাঁহার অনুকূল বা মনোমতো না হইলে মিথ্যা সংবাদ বলিয়া উড়াইয়া দেন। (যদিও নিজে নিরন্তর এমন বহু কথা বলিয়া চলেন যাহা কেবল অসত্য নহে, সত্যের সম্পূর্ণ বিপরীত।) কিন্তু পুতিনের সহিত তাঁহার এই বিচিত্র আলাপের ঘটনায় উদ্বেগের একটি বিশেষ মাত্রা নিহিত রহিয়াছে। পুতিনের রাশিয়ায় সাংবাদিকরা কেবল মৌখিক গালি বা রাষ্ট্রীয় ঘৃণার লক্ষ্য নহেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা সেই দেশে স্বৈরতন্ত্রের— আক্ষরিক অর্থেই— শিকার। গত সিকি শতাব্দীতে পুতিন-ভূমিতে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়াইয়াছে। বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার মাপকাঠিতে বিন্যস্ত তালিকায় রাশিয়ার স্থান একেবারে নীচের সারিতে। এ হেন এক নেতার সহিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের সম্মুখে ‘উহাদের সরাইয়া দিবার’ কথা লইয়া রসিকতা করিতেছেন— এই দৃশ্য দেখিয়া লিবার্টি-র প্রতিমূর্তি পারিলে চোখে আঙুল দিতেন নিশ্চয়ই। অবশ্য ইহাও ঠিক নূতন নহে। তিন বৎসর আগে ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতের্তে ‘বেয়াড়া’ সাংবাদিকদের খুনের হুমকি দিয়াছিলেন, যে সাংবাদিকরা মানবাধিকারের কথা বলেন তাঁহাদের ‘গুপ্তচর’ আখ্যা দিয়াছিলেন, এবং তাহা শুনিয়া ট্রাম্প হাসিয়াছিলেন। ক্ষমতার হাসি অতি ভয়ঙ্কর বটে। তবে, মানিতেই হইবে, পুতিনের সৌভাগ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঈর্ষান্বিত হইবার বিলক্ষণ কারণ আছে। তাঁহাকে মার্কিন গণতন্ত্রের দায় বহন করিতে হয়। আধুনিক রুশ ‘জ়ার’-এর সেই সমস্যা নাই, তিনি একাধিপতি, জি-২০ বৈঠকের পূর্বলগ্নে সাক্ষাৎকার দিয়া সাফ সাফ বলিতে পারেন: উদার গণতন্ত্র অচল, বিভিন্ন দেশে যে অনুদার পপুলিজ়ম-এর অভিযান চলিতেছে, তাহাই ভাল। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চয়ই মনে মনে আক্ষেপ করেন, ‘আমি কেন পুতিন হইলাম না।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy