গোটা রাজ্যে বিজেপি রামনবমী উপলক্ষে শোভাযাত্রার আয়োজন করল। —নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও রামনবমী প্রতিষ্ঠা অর্জন করে নিল। ভারতের রাজনীতিতে রাম দীর্ঘ দিন ধরেই প্রাসঙ্গিক, রামনবমীর উদ্যাপনও প্রাসঙ্গিক। কিন্তু বাংলায় রামনবমী উদ্যাপন আগে কখনও এ ভাবে রাজনীতির অঙ্গ হয়ে ওঠেনি। রাজ্যব্যাপী রামনবমী উদ্যাপনের মাধ্যমে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার সংগঠিত চেষ্টা এই প্রথম দেখা গেল। সে চেষ্টা প্রথম বারেই বেশ সফলও হল। তাৎপর্যপূর্ণ এই সাফল্যটাই।
পৌরাণিক চরিত্র রামচন্দ্রের জন্মতিথি উদ্যাপন কোনও গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের বিশ্বাসের অঙ্গ হতেই পারে। ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী দেশের নাগরিকরা রামনবমী উদ্যাপনে ব্রতী হতেই পারেন। কিন্তু ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে রাজনীতির এত নিবিড় সংযোগ কোন সূত্র ধরে তৈরি হয়, এ যোগসূত্র ধর্মাচরণের জন্য কতটুকুই বা জরুরি, সে সব প্রশ্নের সদুত্তর মিলবে না।
রামনবমীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা শোভাযাত্রা বার করতেই পারেন। কিন্তু সে শোভাযাত্রার আয়োজক কেন বিজেপি হবে, সে প্রশ্নেরও উত্তর মিলবে না।
কোনও প্রশ্নই নতুন নয়। ধর্ম আর রাজনীতিকে গুলিয়ে দেওয়ার যে অপচেষ্টা, তার বিরুদ্ধে প্রশ্ন বহু বার দেশের বহু প্রান্ত থেকে উঠেছে। সদুত্তর কখনওই মেলেনি। ধর্মোন্মাদনার তীব্র জিগিরে জিজ্ঞাসু কণ্ঠস্বরগুলোই ডুবে গিয়েছে বার বার।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু তেমন ছিল না পরিস্থিতি এত দিন। ধর্মকে রাজনীতির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলার হাতছানিতে বাংলা সাড়া দেয়নি এত দিন সে ভাবে। প্রশ্ন তুলেছে বরং সে অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বার বার, কিন্তু রামনবমীর রাজনৈতিকীকরণের প্রচেষ্টা এ বার যখন অত্যন্ত সংগঠিত ভাবে শুরু হল, তখন আগের চেয়েও জোর দিয়ে প্রশ্নগুলো তোলা জরুরি ছিল। বিস্ময়ের সঙ্গে দেখতে হল, প্রশ্ন তোলার পথে হাঁটলই না গৈরিক শিবিরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। রামকে রাজনীতির ময়দানে নামিয়ে আনার লড়াইতে বিজেপির চেয়ে তৃণমূল কোনও অংশে কম যায় না— এমনই এক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হল বরং।
গোটা রাজ্যে বিজেপি রামনবমী উপলক্ষে শোভাযাত্রার আয়োজন করল। অধিকাংশ এলাকাতেই তৃণমূলও পাল্টা শোভাযাত্রায় নেমে পড়ল। অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা যাবে না, স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে বার্তা বিজেপি তো শুনলই না। তৃণমূলও অনেক জায়গাতেই একই পথে হাঁটল। নেতৃত্বের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত একাধিক জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে সশস্ত্র মিছিল হল। কে বেশি হিন্দু, কোন দল রামচন্দ্রের কত বড় ভক্ত— প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠল শাসক এবং উঠতি বিরোধী।
আরও পড়ুন
রামনবমীতে সবুজ গেরুয়া পাশাপাশি
রামনবমীতে রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ বিজেপি-কে মানায়। সাংবিধানিক ভাবে না মানাক, চোখের অভ্যাসে মানায়। বিজেপি-কে এই ধাঁচের কর্মসূচিতেই সবচেয়ে সাবলীল হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত ভারতবাসী। কিন্তু তৃণমূলের রাজনীতিটা তো কোনও কালেই এই ধাঁচের নয়। তা হলে এ পথে পা বাড়াল কেন তৃণমূল? খেলাটাকে হিন্দুত্বের ময়দানে নিয়ে যেতে দিল কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল? যে তৃণমূল আগে কখনও রামনবমী উদ্যাপনের কথা ভাবেনি, বিজেপি-কে টেক্কা দিতে সেই তৃণমূল আজ যদি বিজেপি-র কর্মসূচিকেই আপন করে নিতে শুরু করে, তা হলে বিজেপি-কে আগেভাগেই নৈতিক জয় উপহার দেওয়া হয় না কি?
স্বধর্মে নিধন শ্রেয়, কিন্তু পরধর্ম ভয়াবহ— এই আপ্তবাক্য মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি ছিল। রামচন্দ্র, রাম মন্দির, রামনবমী— এ হল বিজেপির ‘ধর্ম’। তৃণমূলের ‘ধর্ম’ কোনও কালেই ‘রামনাম’-এ ভরসা রাখেনি। বাংলায় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা অর্জনের লক্ষ্যে বিজেপি নিজের রাজনৈতিক ধর্মকে চারিয়ে দিতে চাইবে, সে অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু তৃণমূল তার জবাবে যা করল, তা স্বাভাবিক নয়। নিজেদের স্বাভাবিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূল হঠাৎ বিজেপির রাজনৈতিক পরিসরে ঢুকে নিজের প্রতিষ্ঠা খুঁজতে শুরু করল। তৃণমূলের এই ‘ধর্মচ্যুতি’ কিন্তু তার পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
যে কোনও দলই চায়, খেলাটা তার মাঠে হোক। তাই বাংলার রাজনৈতিক লড়াইটাকে বিজেপি এ বার নিজের মাঠে টানতে চাইছে। যে খেলায় বিজেপি নিজে সবচেয়ে পারদর্শী, সেই খেলার আসরেই প্রতিপক্ষকে বিজেপি আহ্বান জানাচ্ছে। বিজেপির এই আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়া একেবারেই উচিত হবে না তৃণমূলের। যে খেলায় তৃণমূল সবচেয়ে পটু, সেই খেলায় বরং বিজেপি-কে ডাকা উচিত এ রাজ্যের শাসক দলের। রাজনীতির এই সাধারণ নিয়মটা তৃণমূল নেতৃত্ব জানেন না বলে মনে হন না। তাই দুর্বোধ্যই ঠেকল তৃণমূলের এই পদক্ষেপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy