Sourced by the ABP
গাছের ডালে বসে সেই ডালই কাটার বদভ্যাসটি বহু পুরাতন। তার মোক্ষম উদাহরণ ভারতের জাতীয় নদী গঙ্গা। এই নদীকে ভারতের, বিশেষত উত্তর ও পূর্ব ভারতের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জীবনরেখা বললে অত্যুক্তি হবে না। অথচ, একে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস কই? উৎস থেকে সাগরে মেশার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত অপচনশীল আবর্জনার পাহাড় জমছে নদীর দুই তীরে। বাদ পড়েনি উৎসমুখটিও। প্লাস্টিক দূষণ নদী-পরিবেশকে ক্রমশ বিপন্ন করছে, যে দূষণ অবিলম্বে হ্রাসের চেষ্টা করা জরুরি। আশার কথা, ভারতের কেন্দ্রীয় পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ‘ভেরিয়েবল এনার্জি সাইক্লোট্রন সেন্টার’ (ভিইসিসি) সম্প্রতি সেই দূষণ প্রতিরোধে এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছে। কেন্দ্রের ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের আদলে তারা যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তাতে তিন বছর ধরে গোমুখ থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত গঙ্গার পাড় সাফাই করা হবে। এবং সচেতনতা প্রসারের কাজটিও হবে। ইতিমধ্যেই প্রথম পর্যায়টি সম্পন্ন হয়েছে গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত। গঙ্গাকে কলুষমুক্ত করার এ-হেন প্রয়াস প্রশংসার্হ।
কিন্তু প্রশ্ন, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘নমামি গঙ্গে’র মতো বিপুল প্রচারিত একটি প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও গঙ্গাপাড়ের এমন দুরবস্থা ঘটল কেন? ২০১৪ সালের জুনে ২০,০০০ কোটির অধিক বাজেট বরাদ্দ নিয়ে এই প্রকল্পের সূচনা। মূল লক্ষ্য ছিল, গঙ্গার দূষণমুক্তি এবং সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবন। এই প্রকল্পে বর্জ্য পরিশোধন পরিকাঠামো, নদীখাত সাফাই, জীববৈচিত্র বজায় রাখা, নদীপাড় বরাবর বৃক্ষরোপণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন পদক্ষেপের আশ্বাস ছিল, যার প্রত্যেকটি গঙ্গাকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক। কিন্তু স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের প্রকল্পটি যে শেষ পর্যন্ত তাঁর দলীয় কৃতিত্বের প্রচার-সহায়ক হয়ে ওঠা ভিন্ন অন্য লক্ষ্যগুলি পূরণে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি, গঙ্গাপাড়ের দুরবস্থাই তার প্রমাণ। ১৯৮৬ সালের গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান-ও একই ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। গঙ্গাকে স্বচ্ছ, নির্মল করে তোলার কাজে ব্যয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ, অথচ তার দুই তীরে বেআইনি নির্মাণ অব্যাহত, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি নদীতে এসে মিশছে, জমছে আবর্জনার পাহাড়— এই প্রহসনের শেষ কবে?
সমস্যা হল, গঙ্গার মতো গুরুত্বপূর্ণ নদীকে দেশের পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত না করে তার উপর দেবীত্ব আরোপের চেষ্টা চলেছে বহু যুগ ধরে। গঙ্গার প্রবাহপথের দুই তীরে ভারতের সুবিখ্যাত তীর্থস্থানগুলি অবস্থিত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এই তীর্থস্থান সংলগ্ন এলাকাতেই দূষণের মাত্রা সর্বাধিক। উৎসব, বছরভরের পূজা-অর্চনা, পুণ্যার্থীর ঢল— নদীর জল এবং পাড়ের জীববৈচিত্রকে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছে। হিন্দুত্ববাদী কেন্দ্রীয় শাসক দল, সচেতন ভাবেই, সেই প্রবণতাকে আটকানোর কোনও চেষ্টা করেনি, বরং তাকে নানা ভাবে উস্কে এসেছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলিও হিন্দু ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে তার বিরুদ্ধাচরণ করেনি। বরং, দূষণের ভারে ক্লান্ত নদীকে পুনরুজ্জীবন দানের পরিবর্তে তার ঘাটগুলিতে গঙ্গারতির আয়োজন হয়েছে। ভারতের মতো দেশে ধর্মের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্কটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নয়। সুতরাং, পরিবেশের প্রশ্নে প্রয়োজনে ধর্মীয় উদ্যাপনে নিয়ন্ত্রণ আনা আবশ্যক। অন্যথায়, নতুন প্রকল্প সাফল্যের মুখ দেখতে পারবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy