কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সত্যপাল সিংহ বলিলেন, চার্লস ডারউইন-এর বিবর্তনের তত্ত্বটি ভ্রান্ত, স্কুল-কলেজে উহার পঠনপাঠন বন্ধ করা প্রয়োজন। তাঁহার প্রধান ‘যুক্তি’, কেহই কখনও একটি বানরকে মানুষে রূপান্তরিত হইতে দেখেন নাই, এমনকী আমাদের পূর্বপুরুষগণও তাঁহাদের লেখায় বা কথায় এমন কোনও ঘটনার কথা বলেন নাই। আমেরিকার বহু মানুষ সিংহমহাশয়কে উদ্বাহু সমর্থন জোগাইবেন, কারণ সেই দেশে অনেকে এমন বিদ্যালয়ে নিজ সন্তানকে প্রেরণ করেন না, যেখানে ডারউইনের তত্ত্ব পড়ানো হয়, কারণ সেই মত ‘ঈশ্বরবিরোধী’। তাঁহারা নিশ্চিত, বাইবেলই পরম সত্য, যে গ্রন্থে স্পষ্ট লিখা রহিয়াছে, ঈশ্বর ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছিলেন এবং শেষ দিনে মনুষ্য সৃষ্টি করিয়া তাহাকে প্রভুত্ব দিয়াছিলেন। ইহার পূর্বে সত্যপাল বলিয়াছিলেন, শিভাকর বাবুজি তলপড়ে নামক এক ভারতীয়ই এরোপ্লেন আবিষ্কার করিয়াছিলেন। সত্যপাল ইহাও বলিয়াছিলেন, দাদরিতে গোমাংস-কেন্দ্রিক হত্যার ঘটনা খুবই ‘ক্ষুদ্র’। এবং বিবাহমণ্ডপে কখনও কোনও বধূ জিন্স পরিয়া আসিলে, কোনও পুরুষই তাহাকে বিবাহ করিতে সম্মত হইবে না। সমাজ ও বিজ্ঞান বিষয়ে মুহুর্মুহু চমকপ্রদ বিবৃতি দিয়া তিনি দেশকে আলোড়িত রাখিয়াছেন।
ডারউইন-সম্পর্কিত কথায় তিনি দুরন্ত ‘বৈজ্ঞানিক’ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিলেন। প্রচলিত বৈজ্ঞানিক মতগুলি আপ্তবাক্যের ন্যায় প্রতিভাত হয়, না বুঝিয়াই আমরা সেইগুলিকে উপাসনা করি। কিন্তু সকল তত্ত্বকে প্রশ্ন করাই প্রকৃত অনুসন্ধিৎসুর কাজ, এবং চাক্ষুষ প্রমাণ ব্যতীত কোনও কিছুকে বিশ্বাস না করাও বৈজ্ঞানিক মনোভঙ্গির আবশ্যিক অঙ্গ। দূরে ধোঁয়া উত্থিত হইতেছে, দেখিয়া ভাবিলাম অগ্নি রহিয়াছে, সর্বৈব ভুল। অগ্নি যত ক্ষণ না চক্ষে দেখা যাইবে, ইহা বলা বিজ্ঞানসম্মত হইবে না। অবশ্য তলপড়ে মহাশয় বিমান আবিষ্কার করিতেছেন, তাহা কে কবে চাক্ষুষ দেখিয়াছেন উহা বিতর্কের বস্তু, কিন্তু ইহা তো নিশ্চিত, চলচ্চিত্রের ‘স্পেশাল এফেক্ট’ঋদ্ধ শটের ন্যায়, একটি বানর সোল্লাসে ও চকিতে মানুষ হইয়া যাইতেছে, ইহা অ-দৃষ্ট। ডারউইন অবশ্য সেই ঝটিতি-রূপান্তরের কথা আদৌ বলেন নাই, কিন্তু তাহা বুঝিবার পরিশ্রম প্রভূত। বরং বেদ উপনিষদ ও প্রপিতামহীকে সাক্ষী মানিয়া, পাশ্চাত্যের উদ্ভট মতগুলির বিরোধিতা ‘প্রকৃত দেশপ্রেমিক’ ভারতীয়ের পক্ষে শ্রেয়। ইহাও ভাবিবার, বানর যদি সত্যই মানুষ হইতে পারিত, শ্রীরামচন্দ্র কি আশীর্বাদস্বরূপ তাঁহার সহায়ক বানরদের, অন্তত হনুমানকে, মানুষ করিয়া দিতেন না? কে জানে, সত্যপাল ইহার পরে বলিতে পারেন, মার্ক্সের তত্ত্ব (বড়লোকরা ছোটলোক, তাহাদের সম্পদ কাড়িয়া গরিবদের মধ্যে বিলাইতে হইবে), রঘু ডাকাত বহু পূর্বেই বলিয়াছেন, ফলে ‘দাস ক্যাপিটাল’ ভারত হইতে চুরি। আর ফ্রয়েড-কথিত অশ্লীল ‘ইডিপাস গূঢ়ৈষা’র কোনও সমর্থন ভারতীয় ধর্মগ্রন্থ বা লোককথায় নাই, ফলে উহা এখনই নিষিদ্ধ করা উচিত। পালে পালে এমন সত্যকে যদি তিনি চরাইতে থাকেন, পাশ্চাত্যের তত্ত্বরাজি অচিরে উটপাখির ন্যায় লজ্জাবালুরাশির তলে মুখ লুকাইয়া, পুচ্ছগুলি জিন্সবিরোধী ভারতের পতাকার ন্যায় নাড়াইতে থাকিবে। অবশ্য উটপাখির বালিতে মুখ গুঁজিবার বিবরণ বেদে না থাকিলে, মুশকিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy