ফের রাম-স্বপ্নে ঝাঁপ দিতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। —ফাইল চিত্র।
একা রামে রক্ষা নেই লক্ষ্মণ দোসর। লখনউ শহরে গোমতী নদীর তীর থেকেই বিজেপি শুরু করছে তাদের দ্বিতীয় দফার ‘রামরাজ্য’ গড়ার অভিযান। তূণীরের সব অস্ত্র নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পর ২০১৯-এর নির্বাচনের আগে বিজেপি-র সামনে অন্য কোনও উপায়ও নেই। অতএব, আবার রাম-স্বপ্নে ঝাঁপ দিতে চাইছে তারা।
২০১৪-র নির্বাচনটা কিন্তু ঠিক এমনটা ছিল না। তার আগে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে স্থবিরতা থেকে নীতিপঙ্গুত্ব, অনুন্নয়ন থেকে শুরু করে অদক্ষতা— নানান অভিযোগে ক্ষুব্ধ আম জনতা নতুন স্বপ্নের লক্ষ্যে নরেন্দ্র মোদীকে মসনদে নিয়ে এসেছিলেন। প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছুটছিল। কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার নিশ্চিত আশ্বাস ছিল, প্রতি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকার এক কল্পনা ছিল, নতুন করে ভারতের জেগে ওঠার স্বপ্ন ছিল, জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেওয়ার নিশ্চিত প্রতীক্ষা ছিল। সব মিলিয়ে অচ্ছে দিন আনার সুস্পষ্ট ঘোষণা ছিল। এ হেন স্বপ্ন-জগতে অতএব রাম ছিলেন পিছনের সারিতে, হিন্দুত্বের গর্বের ঘোষণা ছিল কুলুঙ্গিতে, রামরাজ্য নয় মোদী-সাম্রাজ্য স্থাপনের পটভূমি ছিল সেই সময়, ২০১৪ সালে।
তার পর কাল অতিবাহিত হয়েছে, গঙ্গা-যমুনা-কাবেরী-কৃষ্ণা-গোমতী দিয়ে জল গড়িয়েছে অনেক, এবং সে জলে অধিকতর স্বচ্ছতার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। কালো টাকা ফিরে আসা দূরের কথা, সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের গচ্ছিত টাকার পরিমাণ এই সময়ে বেড়ে গিয়েছে ৫০ শতাংশ। অচ্ছে দিন থেকে গিয়েছে কল্পনায়। কৃষকের দুর্দশা, শ্রমিকের কষ্ট এবং সব মিলিয়ে আম আদমির দুর্বিপাকের জীবন আরও তলিয়েছে নিশ্চিত ঘূর্ণির অন্ধকারে। যত এ সব হয়েছে ততই বেড়েছে গো-রক্ষার নামে সামাজিক অত্যাচার অথবা দলিত-সংখ্যালঘুর উপর নানান নিপীড়ন-নির্যাতন। এরই মধ্যে গোরক্ষপুর, ফুলপুর অথবা দেশের অন্য প্রান্তেও নির্বাচনের ফলাফল অশনি সঙ্কেত হয়ে দেখা দিয়েছে বিজেপি-র জন্য। বিরোধী ঐক্য মজবুত হলে বিজেপি-র দুর্গে ফাটল ধরে, বার বার দেখেছেন মোদী-অমিত শাহরা। অতএব কর্নাটক নির্বাচনের আগে উঠে এসেছে টিপু সুলতানের ইস্যু। অতএব ২০১৯-এর ভোটের আগে উত্তরপ্রদেশের লখনউ শহরে গোমতী নদীর টিলাওয়ালি মসজিদের সামনে থেকে উঠে আসছেন লক্ষ্মণ। পৌরাণিক যাবতীয় আখ্যানকে পিছনে ফেলে লক্ষ্মণ উঠে আসছেন ভারতীয়ত্বের অর্থ যে হিন্দুত্ব এই কথা প্রমাণে। বস্তুত তুলে আনা হচ্ছে লক্ষ্মণকে এই ভাবেই। রামমন্দির গঠনের স্বপ্নকে আরও এক বার সামনে তুলে আনতে বিজেপি এঁকে দিচ্ছে নতুন লক্ষ্মণরেখা। সে রেখার অন্য প্রান্তে যেন রাবণ নামের কোনও ভয়াবহ রাক্ষস।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন
রামের পর লক্ষ্মণ! লখনউয়ের মসজিদ থেকে শুরু বিজেপির অভিযান
উন্নয়নের স্বপ্ন যেখানে মৃত সেখানে রাম-লক্ষ্মণকে ‘পুনর্জীবিত’ করে তোলা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই বিজেপি-র সামনে। প্রশ্নটা হল নয়ের দশকে রামকে কেন্দ্র করে ভারত যে উন্মাদনায় মেতে উঠেছিল, ২০১৯-এর ভারত কি সেই অবস্থানে আছে? নতুন ভারত সামনের দিকে এগোনোর স্বপ্ন চায়, শিল্প চায়, উন্নয়নের সার্বিক বিকাশের একটা মুখ দেখতে চায়। রাম অথবা লক্ষ্মণের বদলে এ ভারত আলিঙ্গন করতে চায় উন্নয়নের স্বপ্নকে।
এই নবীন ভারতকে বোঝার ক্ষমতা বিজেপি নেতৃত্বের আছে তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy