Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kashmir

নাগরিকের অধীনতা

কাশ্মীরি নাগরিকদের উপর রাষ্ট্রের দমন নূতন কথা নহে, কিন্তু পরিস্থিতি বহু গুণ বিপন্নতর করিয়াছে ঠিক এক বৎসর আগে ৩৭০ ধারা বিষয়ক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি।

কাশ্মীর। ফাইল চিত্র।

কাশ্মীর। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২০ ০০:৩৮
Share: Save:

ভারতীয় জনসাধারণের নাগরিক স্বাধীনতা যে গত কয়েক বৎসরে খর্বিত হইয়াছে, ঐকান্তিক শাসক-ভক্ত ছাড়া আর কেহই এই বক্তব্যে আপত্তি করিবেন না। রাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ হইতে, নাগরিক যেন ক্রমশই প্রজার স্তরে অবনমিত হইতেছেন, চুয়াত্তরতম স্বাধীনতা দিবসে ইহা স্মরণ করিয়া ব্যথিত, ক্ষুব্ধ বোধ করা ভিন্ন গতি নাই। তবে, এই প্রসঙ্গে, অবশিষ্ট ভারতের পাশাপাশি কাশ্মীরের কথা আলাদা করিয়া স্মরণ না করা অপরাধতুল্য হইবে। কাশ্মীরি নাগরিকদের উপর রাষ্ট্রের দমন নূতন কথা নহে, কিন্তু পরিস্থিতি বহু গুণ বিপন্নতর করিয়াছে ঠিক এক বৎসর আগে ৩৭০ ধারা বিষয়ক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি। গত বৎসরের ৫ অগস্ট এই বিতর্কিত ধারা বিলোপের মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার অবসান ঘটানো হইয়াছিল। কাশ্মীরিদের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া অনুমান করিয়া তাহার আগেই গোটা উপত্যকায় কার্যত লকডাউন করিয়া দেওয়া হইয়াছিল, নাগরিক স্বাধীনতা স্থগিত করা হইয়াছিল, বিরোধী সন্দেহে নাগরিকদের গ্রেফতার করা হইতেছিল। এক বৎসর অতিক্রান্ত, কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় নাই। কাশ্মীরের নাগরিক মুক্তির হাওয়ায় শ্বাস লইতে পারেন নাই। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী-সহ বহু নাগরিক অকারণে, নেহাত বিরোধিতার আশঙ্কায়, গৃহাবরুদ্ধ বা কারারুদ্ধ রহিয়াছেন। প্রচারমাধ্যমের উপর সীমাহীন দমন চলিতেছে। সাংবাদিক নিগ্রহ, অসামরিক নিধন— কিছুই বাকি নাই। যে অসীম স্পর্ধার সহিত দিল্লি এক বৎসর যাবৎ কাশ্মীরে এই দমনমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা করিয়া তাহার প্রকৃত পরিস্থিতি বিষয়ে গোটা দেশকে, এবং বিশ্বকে অন্ধকারে রাখিবার ব্যবস্থা করিয়াছে, তাহা অভূতপূর্ব এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। বলিলে অত্যুক্তি হইবে না যে, নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘কাশ্মীর নীতি’ গোটা ভারতীয় সার্বভৌমত্বের ধারণাটিকেই একটি আগ্রাসী রূপ দিতে শুরু করিয়াছে, কর্তৃত্ববাদের নিগড় পরাইয়া যেন আধিপত্য তন্ত্র রচনা করিতেছে।

কাশ্মীর প্রশ্নাতীত ভাবে ভারতের অংশ। কিন্তু একই সঙ্গে ভারতের অন্যান্য অংশ অপেক্ষা তাহার পরিস্থিতি ভিন্ন। যে পদ্ধতিতে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হইয়াছিল, তাহা হইতেই এই পার্থক্য শুরু হইয়াছিল। সত্য বলিতে, প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু কট্টর ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের কাছে একটি বিশেষ বাহবা পাইতে পারেন— তাঁহার কৌশল ও ইচ্ছাশক্তিই কিন্তু কাশ্মীরকে ভারতের মানচিত্রে ঢুকাইতে পারিয়াছিল। বিশেষ মর্যাদার মাধ্যমে কাশ্মীর উপত্যকার সমস্যায় সাময়িক সমাধানও করিয়াছিল। বলা বাহুল্য, পাকিস্তানের অনভিপ্রেত উপস্থিতি ও রাজনৈতিক আগ্রহ বিষয়টিকে ক্রমেই বিষাইয়া দিয়াছে, বিদ্বেষ দ্রুত বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে পরিণত হইয়াছে। এ হেন পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের নয়নলোভন মনোহরণ উপত্যকাভূমিকে নিজের হকের ধন হিসাবে রাখিতে হইলে কাশ্মীরিদের উত্তরোত্তর চটাইয়া দিলে ভারতের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইবে না। কেন্দ্রীয় সেনাবাহিনীর লাগাতার অত্যাচারে কাশ্মীরের অধিবাসীরা, বিশেষত যুবসমাজ ভারত হইতে সম্পূর্ণত মুখ ফিরাইয়া লইতেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কি খেয়াল রাখিতেছেন, কাশ্মীর কেবল তাঁহার হিমালয়সমান ব্যর্থতা হইয়া রহিল না, একা হাতে তিনি ইহাকে ভারতীয় রাষ্ট্রের চূড়ান্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত করিয়া দিয়া গেলেন?

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmir Article 370
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy