কড়া সমালোচকও হয়তো বলিবেন, পশ্চিমবঙ্গে কোভিড-সঙ্কট সামলাইবার রেকর্ড এই মুহূর্তে মন্দ নহে। সংক্রমণের হার তত ঊর্ধ্বমুখী নহে, মৃতের সংখ্যাও উনিশ-বিশ। রাজ্য সরকারের করোনা-পরিসংখ্যানে যে সকল অস্পষ্টতা ছিল, তাহার সংশোধন হইয়াছে। কেন্দ্রীয় পরিদর্শকগণ রাজ্যের কোভিড হাসপাতালগুলির প্রশংসা করিয়াছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে রাজ্য সরকারের সমালোচনা অব্যাহত আছে, কিন্তু তাহার রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা স্পষ্ট। রাজভবন সম্ভবত সাময়িক নীরবতায় পরবর্তী আক্রমণ শানাইতেছে। আশার কথা, করোনা সংক্রমণের পরীক্ষা বাড়ানো গিয়াছে। এখনও তাহা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য, কিন্তু যেহেতু তাহা কেবল পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা নহে, গোটা দেশেরই সমস্যা, সামান্য বৃদ্ধিও সুসংবাদ। সুতরাং, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা যে আজ ২১ মে হইতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় মিলিবে, এবং আগামী ২৭ মে হইতে আরও কিছু ক্ষেত্রে— তাহা যুক্তিযুক্ত। সম্পূর্ণ বদ্ধ ঘরে থাকিতে থাকিতে রাজ্যবাসী ঈষৎ জানলা খুলিতে পারিলেন।
কিন্তু আশঙ্কা হয়, এই সকলই হয়তো সুসংবাদ নামক মরীচিকা। অত্যন্ত সাময়িক। সত্য হইল, সঙ্কটের এক স্তর পার হইয়া আমরা পরবর্তী স্তরে পৌঁছাইতেছি। বাস্তবিক, চলমান সপ্তাহ তথা পক্ষকাল পশ্চিমবঙ্গে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রীর সামনে এখন ত্র্যহস্পর্শের চ্যালেঞ্জ। কোভিড সঙ্কট চলিতেছে, পরিযায়ী শ্রমিক আগমন সংক্রমণ বাড়াইবার ভয় দেখাইতেছে, এবং সুপারসাইক্লোন যেন সঙ্কটকালীন বিপন্নতা আরও কয়েক গুণ গভীর করিবার তোড়জোড় করিতেছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রত্যয়ের সহিত মোকাবিলা করিতেছেন, তাহা অনস্বীকার্য। কিন্তু নূতন চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা কী রূপ হয়, তাহার উপর এই রাজ্যের করোনাভাগ্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। দুর্ভাগ্য, কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের অভাবে পরিযায়ী শ্রমিকরা এত পরে বাড়ি ফিরিতেছেন। দুর্ভাগ্যের সহিত মিশিয়া আছে ভয়ঙ্কর ঝুঁকি। এই শ্রমিকরা যে সংক্রমণের মাত্রা বাড়াইবেন সেই আশঙ্কা অতি প্রবল। এতগুলি মানুষকে কী ভাবে কোয়রান্টিন করা হইবে, জানা নাই। জানা নাই, প্লেনে আগতদের যে পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হইতেছে, ট্রেনে বা বাসে যাঁহারা রাজ্যে ঢুকিবেন তাঁহাদের ক্ষেত্রে তেমন বন্দোবস্ত কী ভাবে সম্ভব হইবে। অথচ সংক্রমণের বিপদ এখন উভয় ক্ষেত্রে একই মাত্রার।
পর্বে পর্বে লকডাউন কমাইয়া আনিবার যে সূচি রাজ্য সরকার লইতেছে, তাহা সফল হইবে কি না তাহাও বিরাট প্রশ্ন। উত্তর লুকাইয়া আছে নাগরিক সহযোগিতার মধ্যে। অতিপ্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া অন্য কারণে এই আংশিক মুক্তির সুযোগ লইলে কোনও প্রশাসনই সংক্রমণ বিস্তার আটকাইতে পারিবে না। তাই স্পষ্ট করিয়া জ়োনগুলি চিহ্নিতকরণ, উপর্যুপরি ঘোষণার মাধ্যমে জনসচেতনতা বজায় রাখা— অত্যন্ত জরুরি। হাসপাতাল পরিকাঠামোর ক্রমাগত উন্নয়ন, চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা-উপকরণ দান ও মনোবল বর্ধনের গুরুত্ব অপরিসীম— এখনকার অপেক্ষা এই সবই কয়েক গুণ বাড়ানো জরুরি। করোনা সঙ্কটের রূপটি আসলে অদ্ভুত। বাহিরে পরিস্থিতি যত স্বাভাবিক হইবে, ভিতরে বিপন্নতা তত বাড়িতে পারে। বিশেষ সঙ্কটের সঙ্গে যুঝিতে বিশেষ পরিণত মোকাবিলা চাই। পশ্চিমবঙ্গ পারিবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy