Advertisement
০৮ জানুয়ারি ২০২৫
Scam

প্রস্তুতির প্রয়োজন

বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ২০০৫-এর ধারা অনুসারে ঘোষিত বিপর্যয়ের জন্য রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল পাইয়া থাকে রাজ্যগুলি।

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

যে ঘূর্ণিঝড় প্রায় তিন শত বৎসরের রেকর্ড ভাঙিয়াছে, তাহার সৃষ্ট বিপর্যয়ের মোকাবিলা মুখের কথা নহে। সেই হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাজকর্ম ভয়ানক খারাপ বলা চলে না। এ-কথা সত্য যে নানা স্থান হইতে বহু দুর্নীতির অভিযোগ আসিতেছে। অধিকাংশই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, মূলত পঞ্চায়েত স্তরে। তবে, ইতিহাস বলে, বৃহৎ বিপর্যয়ের পর ত্রাণ আসিবে আর স্থানীয় নেতারা কিয়দংশ পকেটস্থ করিবেন না, ইহাই যেন অস্বাভাবিক। সকল জমানাতেই দুর্যোগ মোকাবিলার সহিত তহবিল তছরুপের সম্পর্কটি প্রায় অবিচ্ছেদ্য। তৎসত্ত্বেও আমপানের পরে রাজ্য প্রশাসন যে ভাবে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগগুলির নিষ্পত্তিতে সচেষ্ট হইয়াছে তাহা প্রশংসার্হ। ঝড় শান্ত হইবার পরেই দ্রুততার সহিত আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করিয়াছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দশ দিনের ভিতর পাঁচ লক্ষ পরিবারের নিকট সেই অর্থ পৌঁছাইবার ব্যবস্থাও করিয়াছিলেন। অর্থ লইয়া নয়ছয় না চলিলে হয়তো তাঁহার এই উদ্যোগ আরও গতি পাইত।

আর এক সমস্যা কেন্দ্রীয় লাল ফিতার ফাঁস। বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ২০০৫-এর ধারা অনুসারে ঘোষিত বিপর্যয়ের জন্য রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল পাইয়া থাকে রাজ্যগুলি। কিন্তু অর্থ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে দুই কিস্তিতে তহবিলের ৭৫ হইতে ৯০ শতাংশ অর্থ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক সুরাহার জন্যই কেবলমাত্র সেই অর্থ ব্যয় করা চলে। অর্থাৎ লোকবল এবং বুদ্ধিবলের জোগান দিয়া বিপর্যয়ের মোকাবিলা করিবে রাজ্য, আর অর্থের জন্য তাহাকে মুখাপেক্ষী হইয়া থাকিতে হইবে কেন্দ্রের। আমপানের পরে আকাশপথে সমীক্ষা করিয়া পশ্চিমবঙ্গের জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করিয়াছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সেই অর্থ যে অপ্রতুল, তাহা কেন্দ্রও জানে। সুতরাং জরুরি ভিত্তিতে রাজ্য সরকারকেই অর্থ সংগ্রহ করিবার জন্য বিশেষ তহবিল তৈরি করিতে হয়। সেই তহবিল গঠনপ্রক্রিয়া একটি মৌলিক প্রশ্ন তুলিতেছে। কেবল হ্রস্বমেয়াদে ত্রাণের কথা ভাবাই কি যথেষ্ট? না কি দীর্ঘমেয়াদে বিপর্যয় মোকাবিলার বন্দোবস্ত বেশি জরুরি?

সুন্দরবনের ক্ষেত্রে প্রশ্নটি গুরুতর। বাস্তবিক, বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য বাঁচাইতে যথাশীঘ্র বাংলাদেশের সহিত হাত মিলানোও জরুরি। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট-এর তালিকাভুক্ত এই বায়োস্ফিয়ার রিজ়ার্ভে বাংলার বাঘ কিংবা গাঙ্গেয় শুশুকের ন্যায় বহু বিপন্ন প্রাণীর বাস। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়-সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসিয়া বারংবার এই অরণ্যের ক্ষতি করিতেছে। জঙ্গলের বিপদ বাড়াইতেছে ঘন বসতিও। এই সকল বিষয় ভাবিয়াই ২০১৫ সালে দুই দেশের সাংসদরা মিলিয়া একটি যৌথ মঞ্চের প্রস্তাব করিয়াছিলেন। যূথবদ্ধ লড়াইয়ের কথা বলিয়াছিলেন দুই দেশের পরিবেশমন্ত্রীও। তাহার পর আর পাতাটি নড়ে নাই। অথচ যৌথ আলোচনা ব্যতীত সুন্দরবনের দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা অসম্ভব। ভারত বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন গঠিত হইয়াছে ১৯৭২ সালে, কিন্তু সুন্দরবন আজও আলোচনা স্তরে। প্রস্তুতির নিমিত্ত যাহা জরুরি, তাহার কিছুই করা হয় নাই। বিপর্যয় মোকাবিলা তাই কঠিন হইতে কঠিনতর হইতেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Scam Corruption Cyclone Amphan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy