প্রতীকী ছবি।
খাঁটি মধু বলিয়া দেশের নামী ব্র্যান্ডগুলি যাহা বিক্রয় করিতেছে, তাহা আদৌ মধু তো? সম্প্রতি দিল্লির পরিবেশ গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর সাংবাদিক বৈঠক এই বিষয়ে এক বিরাট প্রশ্ন তুলিয়া দিল। বড় কোম্পানির ছাপ-সম্বলিত সুদৃশ্য মোড়কের স্বাস্থ্যবর্ধক ভেষজ পণ্যটি এত কাল নির্দ্বিধায় ক্রয় করিয়াছেন, প্রতিনিয়ত সেবন করিয়াছেন দেশের অগণিত মানুষ। অথচ, সম্প্রতি জানা গেল, দেশের বেশ কিছু প্রথম সারির কোম্পানির মধুতে আদৌ মধুর অস্তিত্বই নাই। যাহা আছে, তাহা চিন হইতে আগত মিষ্টি রসবিশেষ। তুলনায় কম ক্ষতিকারক চিনি বা গুড়ের ভেজাল নহে, বরং এই মধুতে আছে চাল বা অন্য কোনও দানা হইতে রাসায়নিক উপায়ে নির্মিত রস। কখনও তাহাতে মিলিয়াছে প্রচুর অ্যান্টিবায়োটিকও। এবং নির্বিবাদে তাহা ভারতের খাদ্য নিরাপত্তার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণও হইয়াছে।
সহজ কথায়, ইহা অতি দুর্ভাগ্যজনক প্রতারণা। ব্র্যান্ডেড পণ্য, বিশেষত খাদ্যপণ্যের উপর সাধারণ মানুষ ভরসা করিয়া থাকেন কিছু অধিক মূল্যের বিনিময়ে গুণমান সম্পর্কে নিশ্চিন্ত থাকিবার কারণে। দুর্ভাগ্য, এই দেশের নিজস্ব ব্র্যান্ডগুলি খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে প্রায়শই সেই ভরসার অমর্যাদা করিতেছে। অতীতে বেবিফুড, দুধ, মাংস লইয়াও অভিযোগ উঠিয়াছিল। নিরন্তর এই অভিযোগগুলিতে সংস্থার প্রতি ভরসার ক্ষেত্রটি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়, জনস্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাহা লইয়া প্রতারক সংস্থাগুলি অবশ্য উদ্বিগ্ন হয় না। জনগণের বিশ্বাসের সুযোগ লইয়া নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করিয়া অধিক মুনাফার লক্ষ্যেই অবিচলিত থাকে। মধুতে ভেজালের বিষয়টি অত্যন্ত আশঙ্কার এই কারণে যে, সমস্ত বয়সের মানুষই মধু ব্যবহার করেন, তাহার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাসে। সিএসই-র দাবি, এই রূপ একটি বহুলব্যবহৃত খাদ্যপণ্যে শুধুমাত্র ভেজাল মিশানোই হয় নাই, ক্ষতিকর উপাদানগুলিকে এমন ভাবে যোগ করা হইয়াছে, যাহাতে ফুড সেফটি স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড সেফটি অথরিটি অব ইন্ডিয়া-র সব কয়টি পরীক্ষায় তাহা অবলীলায় পাশ করিয়া যায়। উহা যে আদৌ মধু নহে, সেই সংক্রান্ত কোনও সন্দেহের উদ্রেকও না হয়। এই তথ্য সত্য হইলে, ভাবমূর্তি বিনষ্ট করিবার অপচেষ্টা এবং দেশে প্রাকৃতিক মধু শিল্পকে ধ্বংস করিবার চক্রান্ত বলিয়া সংস্থাগুলি যে দাবি তুলিয়াছে, তাহা ধোপে টিকিবে না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই উহাদের প্রাপ্য।
ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা লইয়া শিথিল মনোভাবও এই প্রতারণায় ইন্ধন জুগাইয়াছে, সন্দেহ নাই। বিশাল দেশে খাদ্যপণ্যের গুণমান যাচাই করিবার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক গবেষণাগার, উন্নত পদ্ধতির প্রয়োগ, জরিমানা, কঠোর আইনের ব্যবস্থা করা যায় নাই। নজরদারিতেও বিস্তর ত্রুটি থাকিয়া গিয়াছে। সুতরাং, আইন থাকিলেও তাহার ফাঁক গলিয়া বিষাক্ত রং, রাসায়নিকের ব্যবহার অবাধে চলিতেছে। কখনও ধরা পড়িলে কিছু দিন শোরগোল চলে, অতঃপর অবস্থা যথাবৎ হইয়া পড়ে। ইতিপূর্বে এই রাজ্যে ভাগাড়ের মাংস লইয়া সেই চিত্রই দেখা গিয়াছে। রাসায়নিকযুক্ত সুগন্ধি, ক্ষতিকর রং, নিম্নমানের তেল— তালিকা দীর্ঘ। অবিলম্বে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সরকার কঠোর না হইলে নামী সংস্থা হইতে ফুটপাতের বিক্রেতা— সাহস আরও বৃদ্ধি পাইবে। বিপর্যস্ত হইবে জনস্বাস্থ্যের দিকটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy