Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

অস্বচ্ছ

শ্রীদাসের দুর্ভাগ্য। কারণ, সুদের হার যদি কমাইতেই হয়, তবে তাহার মোক্ষম সময়টি এখনই। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মূল দায়িত্ব মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ। মূল্যস্ফীতি হার চড়িলে ব্যাঙ্ক সুদ বাড়াইয়া তাহাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

—ছবি রয়টার্স।

—ছবি রয়টার্স।

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

ঘরের লোক হইবার ইহাই এক অসুবিধা। সুদের হার কমাইবার কারণ ছিল কি ছিল না, সেই বিচার না করিয়াই হয়তো দেশ জুড়িয়া রব উঠিবে, শক্তিকান্ত দাস নরেন্দ্র মোদীকে নির্বাচনী সুবিধা করিয়া দিতেছেন। প্রায় দেড় বৎসর অপরিবর্তিত থাকিবার পর রেপো রেট কমিল। ০.২৫ শতাংশ-বিন্দু। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও নিজেদের অবস্থানকে ‘সতর্ক পর্যবেক্ষণ’ হইতে ‘নিরপেক্ষ’-তে লইয়া গেল। এবং, আসমুদ্রহিমাচল বলিল, শ্রীদাস কৃতজ্ঞতা স্বীকার করিলেন। সুবিধা যে হইবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট কমাইলে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিও সুদের হার কমাইবে বলিয়াই আশা করা যায়। তাহাতে এক দিকে ব্যবসায়িক লগ্নির খরচ কমিবে, অন্য দিকে গৃহঋণ ইত্যাদিতেও সুদের বোঝা লাঘব হইবে। ভোটের বাজারে মধ্যবিত্তের ইএমআই-এর পরিমাণ খানিক কমাইতে পারিলে প্রচারে তাহা কত ডেসিবেলে পুনঃপুন ঘোষিত হইবে, আঁচ করা যায়। শিল্পক্ষেত্রে ঋণ তুলনায় সস্তা হইলে বিনিয়োগও বাড়িবে। অন্তত, বাড়িবার কথা। বিনিয়োগ বাড়িলে— অন্তত সঙ্ঘের অর্থনীতিবিদরা জানাইবেন— কর্মসংস্থান বাড়িবেই। কর্মসংস্থানের প্রশ্নটিকে লইয়া নরেন্দ্র মোদী ইদানীং যে পরিমাণ নাকাল হইতেছেন, তাহাতে এই খড়কুটাকে ভাসিয়া যাইতে দিবেন বলিয়া সন্দেহ হয় না। গত দেড় বৎসরে সুদের হার লইয়া অর্থমন্ত্রকের সহিত রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কম দড়ি টানাটানি হয় নাই। নিজের প্রথম নীতি পর্যালোচনাতেই শক্তিকান্ত দাস সরকারের দাবি মানিয়া লইলেন, এই কথাটিকে অনেকেই তাঁহার আনুগত্যের প্রমাণ হিসাবে দেখিবেন, তাহাতে সংশয় কী?

শ্রীদাসের দুর্ভাগ্য। কারণ, সুদের হার যদি কমাইতেই হয়, তবে তাহার মোক্ষম সময়টি এখনই। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মূল দায়িত্ব মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ। মূল্যস্ফীতি হার চড়িলে ব্যাঙ্ক সুদ বাড়াইয়া তাহাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যাঙ্কের হিসাব দেখাইতেছে, মূল্যস্ফীতির বর্তমান হার কাঙ্ক্ষিত সীমার নীচের দিকে। আগামী ছয় মাসে সেই হার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে যাইবে, তেমন সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। অতএব, মূল্যস্ফীতি লইয়া দুর্ভাবনার প্রয়োজন নাই। শিল্পের জন্য ঋণের খরচ কমানোও প্রয়োজন বটে। কম সুদের হারই গোটা দুনিয়ার দস্তুর। কাজেই, ভারতেও সুযোগ থাকিলে সুদের হার কমাইয়া আনাই বিধেয়। হ্যাঁ, শিল্পের সুবিধা যাহাতে সাধারণ মানুষের, বা গোটা অর্থনীতির, মূল্যে না আসে, তাহা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কিন্তু, তেমন আশঙ্কা না থাকিলে শিল্পক্ষেত্রে অর্থের জোগান সুলভ করাই বিধেয়। তাহাতে অর্থনীতিরই লাভ। শিল্পে লগ্নির পরিমাণ বাড়িলেই কি কর্মসংস্থানও বাড়িবে? তেমন কোনও সরলরৈখিক নিশ্চয়তা নাই বটে। ভারতীয় অর্থনীতিতে গত কয়েক বৎসরে কর্মসংস্থানহীন বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা হইয়া দাঁড়াইয়াছে। চাকুরি জুটিলেই যে তাহা ‘প্রকৃত চাকুরি’ হিসাবে বিবেচিত হইবে, সেই নিশ্চয়তাও নাই— এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই সেই কথা আলোচিত হইয়াছে (বিশুদ্ধ চাকুরি, ৯-২)। কিন্তু তাহার পরেও কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পের দ্বারস্থই হইতে হইবে। অতএব, স্বচ্ছ চোখে শক্তিকান্ত দাসের সিদ্ধান্তটি বিসদৃশ ঠেকিবার কারণ নাই। কিন্তু, চোখকে স্বচ্ছ রাখিবার উপায় তাঁহারাই অবশিষ্ট রাখেন নাই। ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত যে রাজনীতি-নিরপেক্ষ হইতে পারে, এই কথাটি বিশ্বাস করিবার মতো পরিস্থিতি রাজনীতিকরা ফের তৈরি করিবেন, সেই ভরসাও ক্ষীণ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy