Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

প্রশ্নকণ্টক

বিরোধী সমালোচনা সর্বদাই উচ্চগ্রামে বাঁধা হইয়া থাকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ০০:১৬
Share: Save:

ক ‌ংগ্রেস আবারও পিএম কেয়ারস ফান্ড লইয়া প্রশ্ন তুলিয়াছে। সঙ্গত প্রশ্ন। এই ফান্ডের অডিট যে ব্যবস্থায় হইতে চলিয়াছে, তাহা লইয়া আপত্তি জানাইয়াছে কংগ্রেস। সঙ্গত আপত্তি। প্রথম হইতেই এই তহবিলটির প্রয়োজন ও তাৎপর্য অতি অস্পষ্ট। কোভিড-১৯’এর ব্যতিক্রমী জাতীয় জরুরি অবস্থার জন্যই বৃহৎ ত্রাণ পরিকল্পনা এত গুরুত্বপূর্ণ হইয়া পড়িয়াছে, তাহা নিঃসন্দেহ। কিন্তু কেন যে জাতীয় ত্রাণ তহবিল থাকা সত্ত্বেও একটি অতিরিক্ত ফান্ড বানাইতে হইল এবং তাহার নামকরণেই প্রধানমন্ত্রীর সহৃদয়তা বিজ্ঞাপন করিতে হইল, বোঝা গেল না। কেন তাহার সমস্ত দায়িত্ব কেবল তিন শীর্ষ ক্যাবিনেট মন্ত্রী ছাড়া আর কেহ বহন করিবেন না, তাহার হাল-হদিশ অন্য কেহ জানিবেন না বা জানাইবেন না, জানা গেল না। এ সব প্রশ্ন গোড়াতেই নাগরিককে সংশয়াকুল করিয়াছে, বিরোধীদের বিরক্ত করিয়াছে। সুপ্রিম কোর্টে মামলাও উঠিয়াছে। এপ্রিল মাসের মাঝামঝি সেই মামলা প্রধান বিচারপতি খারিজ করিয়া দিয়াছেন। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত মহামান্য, কিন্তু প্রশ্নগুলি থাকিয়া গিয়াছে। এই ধরনের জাতীয় ত্রাণের ক্ষেত্রে সর্বদলীয় বন্দোবস্ত হওয়াই তো উচিত। তাহা যদি না-ও হয়, তথ্যপ্রমাণের ক্ষেত্রে তো কোনও বাধানিষেধ থাকা একেবারেই উচিত নহে। এ দিকে জানা গিয়াছে, সিএজি ইহার অডিট করিবে না, করিবে আলাদা কোনও স্বাধীন সংস্থা। এমন একটি পাবলিক ফান্ডের অডিট কিন্তু সিএজি বা তদ্রূপ কোনও আস্থাযোগ্য সংস্থার হাতেই থাকা উচিত। অস্বচ্ছতা ও অস্পষ্টতা যে কোনও মহৎ উদ্দেশ্যে রক্ষিত হইতেছে না, বিরোধী ও সমালোচকরা বারংবার সেই আশঙ্কা জানাইতেছেন। কংগ্রেসের পক্ষ হইতে টুইট হইয়াছে: পিএম কেয়ারস-এর কার্যক্রমই বলিয়া দেয় যে প্রধানমন্ত্রী ভারতের মানুষের জন্য ‘কেয়ার’ করেন না!

বিরোধী সমালোচনা সর্বদাই উচ্চগ্রামে বাঁধা হইয়া থাকে। ততখানি উচ্চমাত্রায় সুর না চড়াইয়াও এইটুকু বলাই যায় যে, ত্রাণের ক্ষেত্রে এহেন অস্বচ্ছতার কোনও বোধগম্য হেতু নাই। হেতু বোঝা ভার অন্য একটি সিদ্ধান্তেরও। কোম্পানি-স্তরে বা ব্যক্তি-স্তরে অর্থদান কেন কেবল প্রধানমন্ত্রীর এই ফান্ডেই হইতে পারে, রাজ্যস্তরের ফান্ডে নহে? ‘পিএম’-এর মতো ‘সিএম’-রাও তো ত্রাণকার্যে যথেষ্ট সক্রিয়। তাঁহাদের ভাণ্ডারেও অর্থের প্রয়োজন খুব বেশি, বাহির হইতে দানের মাধ্যমে ত্রাণ আসিলে তাঁহাদের বিস্তর সুবিধা হয়। এত ভয়ঙ্কর দুর্যোগের মধ্যে তাই এই সীমারেখাটির দরকার ছিল কি? রাজ্য স্তরের অনেক নেতাই এইখানে কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তরাষ্ট্রীয়তা-বিরোধী মনোভাব দেখিতেছেন, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বর্ধনের চেষ্টা দেখিতেছেন। ত্রাণ-অর্থের উপর প্রধানমন্ত্রীর সর্বৈব ও একক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস দেখিতেছেন।

দুর্ভাগ্যজনক, এক কথায়। আর একটু বেশি কথায় বলিতে গেলে, ঠিক এইখানেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের সমস্যা ও সঙ্কট। তাঁহারা যখন কাজ করেন, তখনও সেই কাজের পথ, পদ্ধতি ও প্রকরণের মধ্যে স্বচ্ছতা ও নিষ্ঠার অভাব থাকিয়া যায়, বেলাগাম নিয়ন্ত্রণবাসনা অদম্য হইয়া ওঠে, পরামর্শ বা সহযোগিতার ধার না ধারিয়া তাঁহারা একতান্ত্রিক ভাবে কাজ করিতে চাহেন। ইহা কেবল অবাঞ্ছিত নহে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দিক দিয়া দেখিতে গেলে— রীতিমতো অনৈতিক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy