করোনাভাইরাস রহস্যময়। আরও রহস্যপূর্ণ কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক প্যাকেজ। ভাবা গিয়াছিল, ভাইরাস মনুষ্যদেহকে আক্রমণ করে, অতএব তাহার সহিত স্বাস্থ্যের সম্পর্ক আছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের আর্থিক প্যাকেজ দেখিয়া কিন্তু সংশয় জাগিতে পারে। পাঁচ দিন ব্যাপী প্যাকেজ ঘোষণার পঞ্চম ও শেষ দিনে, আরও তিন-চারটি বিষয়ের সহিত তিনি জনস্বাস্থ্যের উল্লেখ করিলেন। কৃষি বিপণন হইতে কয়লা উত্তোলন পর্যন্ত যাবতীয় বিষয়ে সংস্কারের আলোচনায় অর্থমন্ত্রী বহু সময় ব্যয় করিয়াছেন। কিন্তু জনস্বাস্থ্যে কী ধরনের সংস্কার হইবে, বলেন নাই। কেন্দ্র তাহার জন্য কত টাকা ব্যয় করিবে, তাহাও স্পষ্ট করেন নাই। সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ ও স্বাস্থ্য কর্মীদের বিমার নিমিত্ত কত টাকা ইতিমধ্যে খরচ হইয়াছে, তাহার হিসাব অবশ্য দিয়াছেন, যাহা আগামী বাজেট বক্তৃতায় জানাইলে ক্ষতি হইত না। কেহ বলিতে পারেন, যে সকল নীতি পরিবর্তন করিলে অর্থনীতিতে গতি আসিবে, দেশবাসীর আর্থিক সঙ্কট কাটিবে, তাহার উপর অর্থমন্ত্রী জোর দিলে ক্ষতি কী? তাহার উত্তর, স্বাস্থ্যে বিনিয়োগের সহিত অর্থনীতির উন্নতির সম্পর্কও প্রমাণিত। জনস্বাস্থ্যে মাথাপিছু খরচ কত বাড়াইলে প্রত্যাশিত আয়ু কী হারে বাড়িতে পারে, এবং প্রত্যাশিত আয়ু কত বাড়িলে মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) কতটা বৃদ্ধি হয়, তাহার নির্দিষ্ট হিসাব রহিয়াছে। তৎসত্ত্বেও স্বাস্থ্য কখনওই কেন্দ্রের বাজেটে যথেষ্ট বরাদ্দ পায় নাই। দীর্ঘ দিন ধরিয়া জিডিপি-র এক শতাংশে তাহা স্থগিত রহিয়াছে। সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দুর্দশা, জনস্বাস্থ্য প্রকল্পগুলির ব্যর্থতা, প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী, এমন নানা সমস্যা প্রকট হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় বাজেট কখনওই জনস্বাস্থ্যে প্রয়োজন অনুপাতে বিনিয়োগ করে নাই। অথচ মোদী সরকার স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ জিডিপি-র আড়াই শতাংশ করিবার অঙ্গীকার করিয়াছিল! এখনই কি তাহা পূর্ণ করিবার উপযুক্ত সময় নহে?
প্রশ্ন কেবল বাড়তি অর্থের নহে। স্বাস্থ্যনীতিতে পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখাইয়া দিল কোভিড-১৯। বেসরকারি ক্ষেত্রের সহিত যৌথ উদ্যোগে সরকারি হাসপাতালের পরিচালনা, এবং সরকারি বিমার দ্বারা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাকে সুলভ করিয়া তোলা, এইগুলিই মোদী সরকারের নিকট গুরুত্ব পাইয়াছিল। অধিক মানুষের কাছে অধিক অঙ্কের বিমা পৌঁছাইবার সঙ্কল্প মোদীই করিয়াছিলেন। সেই পরিকল্পনা করোনা-আক্রান্তের কতটা কাজে লাগিল? আজ ভারতে তিনটি হাসপাতাল শয্যার দুইটি বেসরকারি হাসপাতালে। প্রতি দশটি ভেন্টিলেটরের আটটি তাহাদের। তৎসত্ত্বেও কোভিড-আক্রান্তের অতি সামান্য অংশ স্থান পাইয়াছে বেসরকারি হাসপাতালে। শতসহস্র ত্রুটি লইয়াও সরকারি হাসপাতালই দেখিয়াছে রোগীকে। অথচ গত কয়েক বৎসরে জেলা হাসপাতালগুলির বরাদ্দ বাড়ে নাই। প্রাথমিক চিকিৎসার পুনরুজ্জীবনের জন্য দেড় লক্ষ “হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার”-এর জন্য বরাদ্দও নগণ্য। সরকারি ব্যবস্থা কী করিয়া শক্তিশালী হইবে, বেসরকারি ব্যবস্থার দায়বদ্ধতা কী রূপে নিশ্চিত হইবে, তাহা কি আজ কেন্দ্রের বিবেচ্য নহে?
রোগ পরীক্ষার ব্যবস্থার অভাবও এবার প্রকট হইল। অর্থমন্ত্রী বলিয়াছেন, প্রতিটি ব্লকে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা, এবং প্রতিটি জেলায় সংক্রামক রোগের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট কেন্দ্র থাকিবে। এগুলি নিশ্চয়ই প্রয়োজন, কিন্তু ইহাকে কোনও রূপেই সংস্কার বলা চলে না। অধিকাংশ রাজ্যে তৃণমূল স্তরে সংক্রমণের বিস্তারে নজর রাখিবার জন্য যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর্মী নাই। পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা সম্বৎসর সক্রিয় নহে। পরিণাম হইতে পারে মারাত্মক। সংক্রমণের বিস্তার রুখিতে যেমন বাড়তি বিনিয়োগ চাই, স্বাস্থ্যনীতির অভিমুখ লইয়াও ফের চিন্তা করিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy