Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

কাঁচিয়া গণ্ডূষ

সনিয়া গাঁধী কত দিন এই পদে থাকিবেন, তাহা নিশ্চিত নহে। কিন্তু একটি অনিশ্চিত অন্তর্বর্তী সিদ্ধান্ত লইতেও যদি আড়াই মাস অতিবাহিত হয়, তবে পরবর্তী আড়াই মাসে কিংবা আড়াই বছরে কোনও পাকা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাইবে, তাহারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:২৭
Share: Save:

মে মাসে জাতীয় নির্বাচনের ফল বাহির হইবার পর হইতে অগস্ট মাসের গত সপ্তাহান্ত অবধি প্রায় আড়াই মাস সময় দেশবাসীকে একনাগাড়ে প্রতীক্ষায় রাখিল কংগ্রেস। প্রতীক্ষা, কবে তাহার নেতার নাম স্থির হয়। প্রতীক্ষা, কবে সেই নেতা শক্ত হাতে দলের রাশ ধরেন। প্রতীক্ষা, কবে সংসদে প্রধান বিরোধী দল তাহার দলসম্মত নেতার নেতৃত্বে সংহত ভাবে বিরোধীর ভূমিকাটি পালন করে। সংসদের অধিবেশন শেষ হইল, অ-স্বাভাবিক দ্রুততায় বহু বিল পাশ হইল, সেই সব বিলের অনেকগুলিই সুদূরপ্রসারী ও অত্যন্ত গুরুতর, কিন্তু নেতৃত্বমুখহীন কংগ্রেস কিছুতেই পায়ের তলায় মাটি পাইয়া উঠিল না। সংসদের কার্যক্রম শেষ হইলে জানা গেল নেতৃপদে ‘আপাতত’ প্রাক্তন সভাপতি সনিয়া গাঁধীরই প্রত্যাবর্তন ঘটিয়াছে। নানা দিক হইতে এই সংবাদ দুর্ভাগ্যজনক। যে প্রাক্তন সভাপতি তাঁহার পদ ছাড়িয়া নূতন নেতাকে দায়িত্বভার দিয়াছিলেন, নূতন নেতা ভার ছাড়িয়া দেওয়ায় আবার আগের জনকেই ফিরিয়া আসিতে হইল— যে কোনও দলের পক্ষেই ইহা চরম অপ্রস্তুতি ও অমর্যাদার কথা। বুঝিতে অসুবিধা নাই যে, আগাইয়া চলিবার রসদের অভাবেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত দলটিকে পিছনের দিকে পা ফেলিতে হইল। রাহুল গাঁধীকে দায়িত্ব লইতে হইয়াছিল মাতা অসুস্থ হইবার ফলে। এখন রাহুল গাঁধীর দায়িত্ববহনের অনিচ্ছার মূল্য আবার সেই প্রবীণ অসুস্থ মাতাকেই মিটাইতে হইতেছে। শতাব্দী-অতিক্রান্ত দলটির দশা দেখিয়া বিজেপি যে দারুণ কৌতুক ও গৌরব বোধ করিতেছে, তাহা বোধ করি কংগ্রেসের নেতাদের বলিয়া দিবার প্রয়োজন নাই। এই কৌতুকবোধ স্বাভাবিক।

সনিয়া গাঁধী কত দিন এই পদে থাকিবেন, তাহা নিশ্চিত নহে। কিন্তু একটি অনিশ্চিত অন্তর্বর্তী সিদ্ধান্ত লইতেও যদি আড়াই মাস অতিবাহিত হয়, তবে পরবর্তী আড়াই মাসে কিংবা আড়াই বছরে কোনও পাকা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাইবে, তাহারই বা নিশ্চয়তা কোথায়? পরবর্তী প্রশ্নটি অনিবার্য। তবে কি কংগ্রেস দলে সত্যই মাতা ও পুত্র ব্যতীত কোনও নেতৃযোগ্য ব্যক্তি নাই? না কি মাতা-পুত্র-পরিবার ছাড়া কাহাকেও সেখানে নেতৃযোগ্য মনে করা হয় না? প্রমাণিত হইল, পরিবারতন্ত্রের বাহিরে পা ফেলিবার তাকত এখনও কংগ্রেসের অনায়ত্ত। আয়ত্ত যে হইবে, এমন আশাও কম।

কংগ্রেসের চরম পরাজয় ঠিক এই জায়গাটিতেই। এবং এই পরাজয় গত নির্বাচনের বিপর্যয় অপেক্ষাও করুণতর। আড়াই মাস ধরিয়া দলের মধ্যে আলোচনা পর্যালোচনা করিয়া যখন পাকা সিদ্ধান্তে আসা যায় না, তখন অনুমান করা অতি সহজ যে, দলাদলিতে দল পঞ্চত্বের পথে। অনৈক্যের মূলে আছে প্রাচীন ও নবীন দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ— কানাঘুষা নহে, এখন ইহা প্রমাণিত সত্য। আহমেদ পটেল, গুলাম নবি আজাদ, অমরেন্দ্র সিংহের মতো প্রাচীনপন্থীরা সম্ভবত গাঁধী পরিবারের বাহিরে পা ফেলিতে ভীত বোধ করেন। আর নবীনরা কোনও এক জনের প্রতি আস্থা রাখিবার জায়গাই খুঁজিয়া পান না। প্রশ্ন, তাহা হইলে রাহুল গাঁধী এত দিন কোন মুখে দলে নবীন নেতাদের উঠাইয়া আনিবার কথা, রাজ্য নেতাদের হাল ধরিবার কথা বলিতেছিলেন? ইহার পরও কি তাঁহারা ভাবিয়া অবাক হইবেন যে, সদ্য-সমাপ্ত নির্বাচনের এই ফলাফল হইল কেন? কংগ্রেস সম্পর্কে এই সংশয়ই কি ভোটারসমাজকে দীর্ণ করিয়া দিতেছিল না? অপারগতা এবং অনৈক্যের এই ছবিই কি তাঁহারা দলাভ্যন্তরে আশঙ্কা করিতেছিলেন না? বিরোধী হিসাবেও যাঁহারা এত অপারগ, শাসক হিসাবে তাঁহাদের ভাবা যায় কি? এ দেশের সকল রাজনৈতিক দলের নিকটই ক্ষমতার সোনার হরিণের পাশে আদর্শের স্থান ন্যূন। কিন্তু কংগ্রেসের বিশেষত্ব ইহাই যে, ক্ষমতালিপ্সার পাশে আদর্শ কেন, উদ্দেশ্যের স্থানও শূন্য। এই শূন্যতা লইয়া কিন্তু বিরোধীর ভূমিকাও পালন করা কঠিন।

অন্য বিষয়গুলি:

Sonia Gandhi Rahul Gandhi Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy