প্রতীকী ছবি।
এশুধু ভোটের দিন... এ লগন প্রতিশ্রুতি শোনাবার। এতদিন এটাই হয়ে এসেছে। এখনও হচ্ছে। তবে শ্রোতা, মানে সাধারণ ভোটারেরা আজকাল সবসময় শুধু শুনেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না। মাঝেমধ্যেই ছুড়ে দিচ্ছেন পাল্টা কথা বা প্রশ্ন। সে প্রশ্নের সদুত্তর তো অনেক পরের কথা, তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন পোড়খাওয়া রাজনীতির কারবারিরা। তাই ভোটের আগে প্রচার নিয়ে কিছু পরামর্শ।
যখন যেমন
প্রথমেই বলে রাখা ভাল, ভোট-প্রচারের তেমন ‘সলিড’ কোনও সাজেশন হয় না। এ ক্ষেত্রে প্যাকেজের নাম যদি হয় কৌন বনেগা কাউন্সিলর, তা হলে পথে-প্রচারে প্রার্থীর অধিষ্ঠান হটসিটে। আর উল্টো দিকে অসংখ্য বিগ-বি। কখন, কোন দিক থেকে, কী প্রশ্ন ছিটকে আসবে দেবা ন জানন্তি। দিনকয়েক আগেই শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটের প্রচারে এসেছিলেন জলপাইগুড়ির সাংসদ জয়ন্ত রায়। বাড়ি বাড়ি ঘুরে দিব্যি প্রচার চলছে। সঙ্গে রয়েছেন এলাকার বড়-মেজ-সেজ নেতা। পথে বৈশাখী মণ্ডল নামে এক বৃদ্ধাকে দেখে ‘মা’ বলে ডাকেন সাংসদ। সঙ্গের লোকজনও হয়তো মনে মনে ভাবছিলেন— এই না হলে নেতা! একেবারে মোক্ষম সময়ে কেমন মা বলে ডেকে উঠলেন! কিন্তু মা-মাটি-মানুষের রাজ্যে বাস করেও বৃদ্ধা মা ডাক শুনে তেমন বিগলিত হলেন না। বললেন, ‘‘এখন ভোটের আগে তো সকলেই মা-ঠাকুমা-সোনা বলে ডাকে। পরে তো কাউকেই পাই না।’’ মুহূর্তে সাংসদের সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীদের মুখ চুন। পরে অবশ্য হাসিমুখেই পরিস্থিতি সামাল দেন সাংসদ— ‘‘আমরা তো ক্ষমতায় নেই, ছিলামও না। এ বার যদি কাজের সুযোগ দেন, অবশ্যই পাশে থেকে কাজ করব।” এ ক্ষেত্রে সাংসদ অবশ্য ‘ফিনিশিং টাচ’ ভাল দিয়েছেন। কিন্তু অন্য ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় ‘যখন যেমন’ ফর্মুলার প্রয়োগই ভাল।
লঘু-গুরু মাত্রা
চালু একটা লব্জ রয়েছে। পথেঘাটে আচমকা কেউ যদি ‘তুই’ বলে সম্বোধন করে, তা হলে বুঝতে হবে, সে আপনার কোনও বন্ধু, নইলে পুলিশ! মনে রাখতে হবে, এ বদনাম যেন আপনার ঘাড়ে না পড়ে। পাড়ার হলেও ভোটটা ভোট। তাই রিকশাওয়ালা, টোটোওয়ালা, ইস্তিরিওয়ালা বা চেনাজানা কেউ হলেও দুম করে ‘তুই’ বলার আগে অগ্র-পশ্চাত এক বার ভাবতে হবে। আবার পাশের বাড়ির পাড়াতুতো ভাইকেও ‘আপনি-আজ্ঞে’ করার দরকার নেই। সে ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে। চায়ের দোকান, পাড়ার ক্লাব, বাড়ির রক ভোট-মরসুমে একটু বেশিই জমজমাট থাকে। প্রচারের ক্ষেত্র হিসেবে সবগুলোই ভাল। কিন্তু সেখানেও যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করাই ভাল। ‘১:১’ প্রচার, আর ‘১:অনেক’ প্রচারের পার্থক্যটা যেন গুলিয়ে না যায়। সেখানে নানা লোক, নানা মত, নানা আলোচনা। সেখানে শুধুমাত্র হাসিমুখে ‘ভোটটা দেবেন কিন্তু’ না বলে বসে একটু আড্ডা দিন। চায়ের দোকান হলে তেড়ে ক’কাপ চায়ের অর্ডারও দিন। চা-চর্চা করে কত লোক দেশ চালাতে শুরু করলেন। আর আপনি মশাই একটা ওয়ার্ড সামলাতে পারবেন না!
শুনুন বেশি
মঞ্চে উঠে ভাষণ দেওয়া আর পুরভোটের প্রচারে গিয়ে কথা বলা যে এক নয় তা আপনি বিলক্ষণ জানেন। এ সময় বরং বলুন কম, শুনুন বেশি। লোকজন কাছে পেলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ-মান-অভিমান নানা কিছু শোনাতে পারে। পাল্টা বিতর্কে না গিয়ে সেগুলো শুনুন। অকারণে লোকজনকে বেশি বোঝানোর দরকার নেই। গুগলের সৌজন্যে এখন সকলেই কমবেশি সিধুজ্যাঠা। ইদানীং জলের একটা বিজ্ঞাপন বেশ ‘হিট’ করেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দু’টি তৃষ্ণার্ত উট এক দোকানদারের কাছে এসে জল চাইছে। দোকানদার সেই বিশেষ ব্র্যান্ডের জল না দিয়ে অন্য ব্র্যান্ডের জল দেওয়ায় উট জলের বোতলটা ঢকঢক করে খেলেও গিলল না। জলটা কুলকুচি করে ফেলে দিয়ে বলল— ‘হাম উট হ্যায়। গাধা নেহি!’ বিজ্ঞাপনটার কথা মাথায় রাখুন। দিনকাল ভাল নয়।
জেঠুগিরি কম
এত দিন যা করেছেন, করেছেন। মানে, জ্যাঠাছেলেকে বিড়ি খেতে দেখলে কান ধরে টেনেছেন। ওপাড়ার ছেলেকে এ পাড়ায় ঘুরঘুর করতে দেখে বাবার নাম জিজ্ঞাসা করেছেন। অকারণে বারবার লেখাপড়ার খোঁজ নিয়েছেন। পাশের বাড়ির ছেলের সঙ্গে তুলনা টেনে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সে কতটা বখাটে! এখন এ সব ক’দিন ক্ষান্ত দিন। মাথায় রাখুন, প্রচুর নতুন ভোটার বেড়েছে। বলাই বাহুল্য, তাঁরা সকলেই এই প্রজন্মের। ফলে ‘হাই ডুড’ বলতে না পারলেও তাঁদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশুন। তাঁদের অবশ্যই গুরুত্ব দিন। তেমন হলে তাঁদের কাছেই কিছু পরামর্শ চান।
তেমন বুঝলে বরং ফেসবুকে একটা ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ও পাঠিয়ে দিন। প্রেম-যুদ্ধ-ভোটে সবই ঠিক।
পজ়িটিভ থাকুন
জল বেশি খান, সঙ্গে হালকা খাবার রাখার মতো ডাক্তারি পরামর্শ অনেকেই দেবেন। কিন্তু এ সবের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল পজ়িটিভ থাকা। অন্য দলের দেওয়াল লেখা দেখে বিরক্তি আসতে পারে, প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রচারের বহরে মাথা গরম হতে পারে, সোশ্যাল মিডিয়ার বিপ্লবীদের পোস্ট পড়ে বেদম ভাবে ‘বলতে নেই’ বাংলাও বলতে ইচ্ছে করতে পারে। কিন্তু এ সব কিছু আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সারাদিনের ধকলের পরে ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’। আপনি তো মশাই ‘উড বি কাউন্সিলর’ (অবশ্য জিততে পারলে)। ফলে, বাড়িতে গিয়ে এ সব সাতপাঁচ ভেবে মাথাগরম করলে ‘হোম-মিনিস্টার’-এর রোষে পড়তে হতে পারে। তা হলে? তা হলে একটা কাজ করতে পারেন। বাড়িতে ‘সঞ্চিতা’ থাকলে ভাল। নইলে গুগল থেকে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটা নামিয়ে নিন। যখনই রাগ হবে, তখনই কবিতাটা প্রথমে দেখে দেখে মনে মনে কয়েকবার আউড়ে যান। তার পরে দেখবেন, বেশ কিছু লাইন আপনার মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। তখন রণে-বনে, বাসস্ট্যান্ডে- স্টেশনে গুনগুন করুন— ‘আমি অন্যায়, আমি উল্কা, আমি শনি,/ আমি ধূমকেতু-জ্বালা, বিষধর কাল-ফণী!/ আমি ছিন্নমস্তা চণ্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,/ আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি!
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy