—ফাইল চিত্র।
এক ব্রিটিশ সংস্থার প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের প্রথম তিন শত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতের কোনও উপস্থিতি নাই। বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এবং পঞ্জাবের আইআইটি রোপার জায়গা পাইয়াছে তিনশত-পরবর্তী অর্ধে, আইআইটি বোম্বে ৪০১-৫০০ পরিসরে। উচ্চশিক্ষায় এবং সমাজ ও রাজনীতি-সচেতনতায় উৎকর্ষের নমুনাস্বরূপ যে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে সগর্বে তুলিয়া ধরা হয়, তাহাদের স্থান হইয়াছে যথাক্রমে ৬০১-৮০০ ও ৮০১-১০০০ বন্ধনীতে। ব্রিটেনেরই অন্য এক সংস্থা কয়েক মাস পূর্বে একটি তালিকা প্রকাশ করিয়াছিল, তাহাতে প্রথম দুইশতের মধ্যে তিনটি ভারতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক তাহাতে বুক বাজাইয়া বিবৃতি দিয়াছিল। এই বার পতনের পারদ নিম্নমুখী, ফল তথৈবচ। মন্ত্রী বা মন্ত্রকেরও উচ্চবাচ্য নাই।
প্রশ্ন উঠিতে পারে, বিদেশি সংস্থার পরীক্ষায় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বসিবেই বা কেন, তাহার ফলাফলই বা মানিবে কেন। বাস্তববাদী শিক্ষাপ্রেমী বলিবেন, ইউরোপ-আমেরিকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সর্বতো ভাবে সাহায্যপ্রাপ্ত, অত্যাধুনিক পরিকাঠামোধন্য। ভারতের উচ্চশিক্ষাক্ষেত্র সেইখানে প্রতি পদে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপরাপর সমস্যায় দীর্ণ। এই অসম যুদ্ধে কি ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি টিকিতে পারে? যুক্তির ন্যায় শুনাইলেও আসলে ইহা অক্ষমের সান্ত্বনা। ব্রিটিশ সংস্থাটি তেরোটি সূচকে বিশ্বের প্রায় চৌদ্দশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল্যায়ন করিয়াছে। তাহার মধ্যে ছাত্র-শিক্ষক সংখ্যা, বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ অর্থের ন্যায় প্রতিষ্ঠান-প্রদত্ত প্রাথমিক তথ্যাদি আছে। কিন্তু অধিক গুরুত্ব দেওয়া হইয়াছে সেই সূচকগুলিকে, যাহা হইতে প্রতিষ্ঠানে পঠনপাঠন ও গবেষণার পরিবেশটি আতস কাচের নীচে ধরা পড়ে। বিশ্বের প্রতি একটি প্রতিষ্ঠানের, বা প্রতিষ্ঠানটির প্রতি বিশ্বের শিক্ষার্থী-মহলের দৃষ্টিভঙ্গি কীরূপ, অন্যান্য দেশের কত ছাত্রছাত্রী সেখানে পড়িতে আগ্রহী, প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভূত গবেষণাপত্রগুলি বিশ্বের কোন প্রান্তে কোন গবেষক বা শিক্ষক কত বার উদ্ধৃত করিলেন— গুরুভার এই সূচকগুলির সম্মুখেই ভারতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি ডাহা ফেল। নজর করিলেই চোখে পড়িবে সুশিক্ষকের অভাব, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে অবিশ্বাস্য বৈষম্য, পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা। ইহা লইয়া জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ দূরস্থান, সভার দরজা দিয়া প্রবেশও চলে না।
আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাইতে গেলে শিক্ষাবান্ধব সরকার কাঙ্ক্ষিত। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের যোগ্য নেতৃত্ব প্রত্যাশিত। অথচ শিক্ষাঙ্গনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ মন্ত্রীর মন্তব্য— রামসেতু নির্মাণ করিয়াছেন ভারতীয় প্রকৌশলীরা, লক্ষ বৎসর পূর্বে পারমাণবিক পরীক্ষা করিয়াছিলেন কণাদ ঋষি, গণেশের হস্তিমুণ্ড আদতে প্লাস্টিক সার্জারি। ইঁহারা রাজনীতি ও দেশভক্তির কারবারি হইতে পারেন, শিক্ষার প্রতিভূ নহেন। প্রকৃত শিক্ষা জ্ঞানচর্চাকে বহুধাবিস্তৃত করে, একটি ভূখণ্ডের ধর্ম ও ভূগোলে বাঁধিয়া ফেলে না। বৈশ্বিক তালিকায় স্থান না পাইয়া শিক্ষাজগতের কেহ কেহ তালিকাটিকেই দুষিয়াছেন, কেহ স্বীয় সীমাবদ্ধতা লইয়া হাহুতাশে নিমজ্জিত। কিন্তু আসল কথা, ভারতে উচ্চশিক্ষা অধঃপাতে গিয়াছে। ইহাই রূঢ় সত্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy