— ফাইল ছবি
অবশেষে সেই প্রহর আসিয়াই পড়িল, যখন এই দেশে মুখোমুখি যুযুধান দুই পক্ষ— আইন এবং শৃঙ্খলা। রাজধানী দিল্লিতে শৃঙ্খলাবাহিনী আইনবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করিল। বোঝা গেল, ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক হালটি সাম্প্রতিক কালে কত করুণ দাঁড়াইয়াছে। অনেক দিন ধরিয়া ক্ষোভবাষ্প না জমিলে এত বড় মিছিল-সমাবেশ হইবার কথা নহে। এবং মঙ্গলবারের সেই পুলিশ আন্দোলনের পর বুধবার উকিলদের আন্দোলনে নামিতে দেখা গেল। এক দিকে তাঁহারা পাল্টা প্রতিবাদের চিহ্ন হিসাবে আদালতে তালা ঝুলাইয়া দিলেন, অন্য দিকে পুলিশের শীর্ষ কর্তারা ব্যস্ত হইয়া মধ্যস্থতায় নামিলেন। দেশের ব্যবস্থাপক পক্ষ যাঁহারা, তাঁহারাই যদি নিজেদের ব্যবস্থায় এত কম আস্থা রাখিতে পারেন, তাহা হইলে জনগণের কথা বেশি না বলাই ভাল। দিনের পর দিন আদালত চত্বরে সাধারণ মানুষ বিবিধ প্রকার হেনস্তা সহ্য করেন, প্রকাশ্যতই রাজনৈতিক মদতে সেই হেনস্তা সংঘটিত হয়। তাহার ফলে সঞ্জাত ক্ষোভ যে কত গভীর, স্পষ্ট বলিয়া দিল পুলিশবাহিনীর বিদ্রোহ। দুর্ভাগ্যের কথা, যে আইনজীবীদের কাজই বিরোধের মীমাংসা করা, তাঁহারা কিন্তু এই বিপুল সামাজিক ক্ষোভ মিটাইবার বদলে পাল্টা অভিযোগ, অশান্তি, হুমকি, এমনকি আত্মহত্যার চেষ্টার মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ, এই জাতীয় বিষয়েই নিজেদের আবদ্ধ রাখিলেন। আইনজীবীরা সম্ভবত একটি মৌলিক কথা ভুলিয়া গিয়াছেন। তাঁহাদের কাজ, সংবিধানের প্রতি আস্থা রাখা, কোনও রাজনৈতিক বা অন্য চাপের সামনে মাথা না নুয়াইয়া সংবিধান-প্রদর্শিত পথে বিচারের কাজ করা। তাঁহাদের নিরপেক্ষতার উপরই গণতন্ত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভর করে। অথচ তাঁহাদের এক বিরাট অংশ সেই পথ ছাড়িয়া রাজনৈতিক বশংবদতার পথ ধরিতেছেন।
আইনজীবীদের লাগামছাড়া ব্যবহার ২০১৬ সালে কানহাইয়া কুমার-সম্পর্কিত ঘটনার সময়ই প্রকট হইয়াছিল। আদালত চত্বরে উপস্থিত সাংবাদিক, ছাত্রছাত্রীদের আক্রমণ করিতে ছুটিয়াছিলেন জুনিয়র আইনজীবীরা। গোটা চত্বরের আইনরক্ষক বাহিনী অর্থাৎ পুলিশ তাহা দাঁড়াইয়া নীরবে দেখিয়াছিলেনও বটে। এই ঘটনা হইতে আর একটি কথা বাহির হইয়া আসে। আইনজীবীদের মতো আইনরক্ষক বাহিনীর নিরপেক্ষতাও আজ অতীতের মায়া। তাঁহাদের উপর রাজনৈতিক চাপ প্রতি দিনের বাস্তব, এবং তাঁহারা প্রতি দিন সেই চাপের সামনে নতিস্বীকারে ব্যস্ত। সেই দিক দিয়া দেখিতে গেলে, পুলিশ বিদ্রোহের মধ্যে একটি বৃহত্তর বার্তা আছে— যে বার্তাটি সরাসরি রাজনৈতিক। আইনজীবী পক্ষ কেবল উপলক্ষ মাত্র, রাজধানীর রাজপথের বিস্তীর্ণ বিপুল ক্ষোভের প্রকৃত লক্ষ্য— রাজনৈতিক প্রশাসক।
সুতরাং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দায় ও দায়িত্ব এই পরিস্থিতিতে বিরাট। তাঁহার সরকারের বিরুদ্ধে আইনরক্ষক বাহিনীর অনাস্থা প্রকাশিত এই পুলিশ বিদ্রোহে, ধরিয়া লইলে ভুল হইবে না। সাধারণ পুলিশ জানেন যে, তাঁহার কাজ সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা, কিন্তু তিনি শৃঙ্খলা বলিতে তাহাই বুঝিতে বাধ্য যাহা তাঁহার উপরওয়ালা বলিয়া দিবেন। সরকারি কর্তাদের, এবং নেতাদের, মুখপানে চাহিয়াই ‘শৃঙ্খলা’ শব্দটির অর্থ বুঝিতে হইবে, এবং তাহার এক চুল ব্যত্যয় ঘটিলে চরম শাস্তি জুটিবে। শৃঙ্খলা ও অপরাধের মধ্যে সীমারেখাটিই ইহার ফলে ভুলিয়া যাইবার উপক্রম। সর্ব ক্ষণ হুমকি-অন্যায়-অপরাধের বৃত্তে ঘুরিতে ঘুরিতেও যে তাঁহারা সাহস সঞ্চয় করিয়া বিদ্রোহের পদক্ষেপ করিতে পারিয়াছেন— ইহার অর্থ কী, কেন্দ্রীয় সরকার তাহা ভাবিতেছে, এই আশা থাকিল। অন্যান্য রাজ্য সরকারও ভাবিতেছে কি? এই দেশে সকল শাসকই এক দোষে দোষী। তাঁহারা শাসনের দায়িত্ব পাইয়া ধরাকে সরা জ্ঞান করেন, আর সংবিধানকে খোলামকুচি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy