Advertisement
E-Paper

বোধোদয়

এই বার প্রশ্ন, চুক্তিটি যে ভারতের পক্ষে আত্মঘাতী হইবে, এই বোধোদয়ের জন্য শীর্ষ সম্মেলন অবধি অপেক্ষা করিতে হইল কেন? আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-কূটনীতি সম্বন্ধে সামান্য ধারণা থাকিলেই কেহ বুঝিবেন, এই সম্মেলনগুলি শুরু হইবার পূর্বেই সিদ্ধান্ত হইয়া যায়, সম্মেলনে তাহা ঘোষিত হয় মাত্র।

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share
Save

মহাত্মা গাঁধীই শেষ অবধি বাধা হইলেন। প্রধানমন্ত্রীর কথাকে সত্য মানিলে অন্তত তাহাই দাঁড়ায়। ব্যাঙ্কক-এ রিজিয়নাল কমপ্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপের (আরসিইপি) শীর্ষ বৈঠকে ভারত জানাইল, গাঁধীর নীতি অনুসারে অর্থনীতির সিঁড়িতে একেবারে শেষ ধাপে দাঁড়াইয়া থাকা মানুষের যাহাতে উন্নতি হয়, শুধুমাত্র সেই পথেই হাঁটা বিধেয়। আরসিইপি চুক্তি সেই কষ্টিপাথরে উতরায় নাই বলিয়াই প্রধানমন্ত্রী অনুভব করিয়াছেন। দুর্জনে অবশ্য বলিবে, গাঁধী অপেক্ষা স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের বাধাটিই প্রবলতর হইয়াছিল। ভারতীয় বাণিজ্যমহল হইতে কৃষি, সর্ব ক্ষেত্রই আরসিইপি চুক্তিতে আপত্তি জানাইয়াছিল। সেই আপত্তির কারণ সহজ— ভারত এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করিলে দেশের বাজার বিদেশি পণ্যে ছাইয়া যাইত। তাহাতে ক্ষতি ছিল না, যদি ভারতীয় পণ্যও বিদেশি বাজারে একই ভাবে আধিপত্য বিস্তার করিতে পারিত। কিন্তু, তাহা হইবার নহে। কারণ, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারতীয় পণ্য টিকিতে পারে না। চিনের ন্যায় দেশ যে খরচে পণ্য উৎপাদন করে, এবং যে দামে বিক্রয় করে, ভারতীয় শিল্পমহলের পক্ষে তাহা অসম্ভব। কেন, তাহা অন্যত্র আলোচ্য। কিন্তু, এ-ক্ষণে স্মরণ করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন, প্রধানমন্ত্রী গত কয়েক বৎসর যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নামক প্রকল্পের ঢেঁড়া পিটাইয়াছেন, এই মুহূর্তটি তাহার সমূহ ব্যর্থতা ঘোষণা করিল। ভারত যে শিল্প-উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের হইয়া উঠিতে পারে নাই, এবং অদূর ভবিষ্যতেও পারিবে না, তাহা সংশয়াতীত ভাবে প্রমাণ হইল। মুক্তবাণিজ্যের বিশ্ববাজার অতি চমৎকার পরিসর, কিন্তু তাহাতে প্রবেশ করিতে চাহিলে প্রথমে নিজের আর্থিক পেশিগুলিকে শক্তিশালী করিয়া লওয়া দরকার। আরসিইপি-তে যোগ দেওয়া ভারতের পক্ষে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হইত। কিন্তু, তাহা হইতে পিছাইয়া আসিবার বাধ্যতা বলিয়া দিল, যে নেহরু-যুগের ছায়ার সহিত যুদ্ধ করিয়াই নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের রথের চাকা গড়ায়, সে যুগের ভূত তাঁহাকে ছাড়ে নাই। ‘ইনফ্যান্ট ইন্ডাস্ট্রি আর্গুমেন্ট’-এর সহিত বর্তমান সিদ্ধান্তটির চরিত্রগত ফারাক খুঁজিয়া পাওয়া দুষ্কর।

এই বার প্রশ্ন, চুক্তিটি যে ভারতের পক্ষে আত্মঘাতী হইবে, এই বোধোদয়ের জন্য শীর্ষ সম্মেলন অবধি অপেক্ষা করিতে হইল কেন? আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-কূটনীতি সম্বন্ধে সামান্য ধারণা থাকিলেই কেহ বুঝিবেন, এই সম্মেলনগুলি শুরু হইবার পূর্বেই সিদ্ধান্ত হইয়া যায়, সম্মেলনে তাহা ঘোষিত হয় মাত্র। ভারতীয় অর্থনীতির স্বাস্থ্যের কথা কি প্রধানমন্ত্রী জানিতেন না? কেহ তাঁহাকে জানান নাই? ভারতবাসী অভিজ্ঞতায় জানিয়াছে, দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য বা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের চিত্র বুঝিবার এবং বুঝাইবার সামর্থ্য নির্মলা সীতারামন বা পীযূষ গয়ালের নাই। তাঁহারা অর্থহীন কথা বলিতে পারেন, কারণে-অকারণে বিরোধীদের আক্রমণ করিতে পারেন। এই যেমন দিনকয়েক পূর্বেই আরসিইপি-র বিরোধিতা করিবার অপরাধে শ্রীগয়াল কংগ্রেস নেতৃত্বকে বেশ কয়েক কথা শুনাইয়া দিয়াছিলেন। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সেই চুক্তি ভেস্তাইয়া দিয়া প্রমাণ করিলেন, এই ক্ষেত্রে অন্তত কংগ্রেস ভুল বলে নাই— ভুল করিতেছিলেন গয়াল-সীতারামনরাই। সুতরাং, তাঁহাদের নিকট অর্থনীতির কাণ্ডজ্ঞানের প্রত্যাশা না করাই বিধেয়। কিন্তু, দেশের আর্থিক-আমলাতন্ত্র? তাঁহাদের পারদর্শিতাও কি দিল্লির দূষিত বাতাসে উবিয়া গেল? না কি, অপ্রিয় সত্যভাষণের হঠকারিতা করিতে তাঁহারা ঘোর অনিচ্ছুক— কর্তার বিষনজরে পড়িবার ভয়ে? কোনও সম্ভাবনাই দেশ এবং তাহার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ইতিবাচক নহে। একটিমাত্র আশার কথা— গাঁধীর আদর্শে না হউক, স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ বা শিল্পমহলের আপত্তিতে প্রধানমন্ত্রী থামিয়াছেন। আত্মঘাতের পথে তিনি যে থমকাইয়া দাঁড়াইতে পারেন, নোট বাতিল ইত্যাদির পর সেই ভরসাটুকুও ক্ষীণ হইয়াছিল। তিনি কি বদলাইতেছেন?

Narendra Modi RCEP Congress

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}