Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Jurisdiction

দীর্ঘসূত্রতা

বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার অভিজ্ঞান হইয়াছে। বৎসর ঘুরিয়া যায়, কিন্তু বিচার মিলে না।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২১ ০১:২৭
Share: Save:

তারিখ আসিবে, তারিখ যাইবে, মামলার নিষ্পত্তি হইবে না। ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় যেন ইহাই দস্তুর। সার কথা বুঝিয়া কলিকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির নিকট পত্র প্রেরণ করিয়াছেন বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলের ২১৫ জন বিচারাধীন বন্দি। তাঁহারা জানাইয়াছেন, বহরমপুর ও মুর্শিদাবাদের দ্বিতীয় স্পেশ্যাল সেশনস কোর্টের অধীনে থাকা মামলাগুলি দীর্ঘ দিন ঝুলিয়া থাকিলেও তারিখ ব্যতীত কিছুই মিলিতেছে না। প্রশাসন ও বিচার বিভাগের বিবিধ স্তরে যোগাযোগ করিয়া সুরাহা না মিলিবার পরেই তাঁহারা সর্বোচ্চ স্তরের শরণাপন্ন হইয়াছেন। এই সূত্রে বিগত মার্চ মাসে দমদম সেন্ট্রাল জেলে রক্তক্ষয়ী বিবাদের কথা স্মরণে আসিতে পারে। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা লইয়া গোলমালের জেরে কারাগারের ভিতর গুলি চালনার ঘটনা ঘটিয়াছিল। বন্দিরা দাবি করিয়াছিলেন, হয় দ্রুত বিচার হউক, নয়তো জামিন। মানবাধিকার কর্মীরাও প্রশ্ন তুলিয়াছিলেন, বিচারে বিলম্ব হইলে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ কি অস্বাভাবিক? কেননা, বিলম্বিত সুবিচার প্রকৃত সুবিচার নহে।

বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতীয় বিচারব্যবস্থার অভিজ্ঞান হইয়াছে। বৎসর ঘুরিয়া যায়, কিন্তু বিচার মিলে না। সুতরাং সন্ত্রাসের অভিযোগে কারাগার পূর্ণ করিতে থাকেন রাজনৈতিক বন্দিরা, হিংসা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা বাড়িতে থাকে কাশ্মীর উপত্যকায়, জাতপাতের সূত্রে বৈষম্য ও অত্যাচারের সীমা থাকে না, প্রতিবাদ সত্ত্বেও পরিবেশবিরোধী প্রকল্পসমূহ চালু হইয়া যায়, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশ্বাসযোগ্যতা ব্যতিরেকেই ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়— অপিচ পাতাটি নড়ে না। গণতন্ত্রের যে স্তম্ভ বিপন্ন মানুষের শেষ আশ্রয়স্বরূপ, তাহার নিকটও যদি সময়ে সুবিচার না মিলে, তবে সমগ্র ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষ যদি হতাশ হইয়া পড়েন, দোষ দেওয়া যায় কি? দেশের বিচারব্যবস্থার সদিচ্ছা লইয়া প্রশ্নের অবকাশ নাই, কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে বন্দিরা পত্র প্রেরণ বা বিক্ষোভ প্রদর্শনে বাধ্য হইতেছেন, তাহাও বুঝিয়া লওয়া বিধেয়।

অতিমারির ফলে পরিস্থিতি গুরুতর হইয়াছে। সমাজের অন্যত্র ‘নিউ নর্মাল’ চালু হইলেও বিচার প্রক্রিয়া এখনও মন্থর। সংক্রমণের আশঙ্কা অপরাপর পরিসর অপেক্ষা কারাগারে কম নহে। কিন্তু ভুয়া অভিযোগে কাহাকেও বন্দি করা কিংবা বিনা বিচারে দীর্ঘ দিন আটকাইয়া রাখিবার প্রবণতায় অদ্যাবধি ছেদ পড়ে নাই। বহরমপুরের ঘটনাই তাহার জলজ্যান্ত প্রমাণ। পরিস্থিতিটি ভয়ঙ্কর— অপরাধী কি না, তাহার নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্বেই জেল-যাপনের ‘শাস্তি’-র সহিত যোগ হইয়াছে রোগাক্রান্ত হইবার বর্ধিত আশঙ্কা। অথচ ইহা ব্যবস্থা শুধরাইয়া লইবার এক সুবর্ণসুযোগ ছিল। এক্ষণে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনলাইন পন্থা অবলম্বন করিতেছে। বিচারবিভাগের ক্ষেত্রেও উহা দক্ষ ও কার্যকর উপায়ে চালু করা যাইতে পারিত। দেশের শীর্ষ আদালত যে ভাবে অনলাইন শুনানির ব্যবস্থা করিয়াছে, নিম্নতর আদালতগুলিতে তাহা হয় নাই। পরিকাঠামোগত সমস্যা ইত্যাদি দূর করা হয়তো অসম্ভব ছিল না। মহামান্য আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখিয়াও বলা প্রয়োজন, বিচারে বিলম্ব যে অবিচারের শামিল, এই কথাটিকে চিন্তার কেন্দ্রে রাখিয়াই ভবিষ্যতের পথ খুঁজিতে হইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Jurisdiction Law and Order
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy