ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের কাশ্মীর নীতি বিষয়ে ভারতের নাগরিকরা ঠিক কী ভাবিতেছেন, তাহার স্পষ্ট প্রমাণ হাতে নাই। কিন্তু ভারতীয় নাগরিকবৃন্দ জানিলে ভাল যে, এই নূতন কাশ্মীর নীতির ‘সুবাদে’ বিশ্ব-দরবারে ভারত সম্পর্কে এক বিরাট পরিমাণ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জমিতেছে। চলতি সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস বা পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে কাশ্মীরে ভারত সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি লইয়া যে ক্ষোভ প্রকাশিত হইল, তাহার ভাষা, ভাব, সবই প্রায় নজিরবিহীন। ইহার কতখানি সঙ্গত, কতখানি পাকিস্তান-প্রণোদিত, ইত্যাকার চুলচেরা হিসাবের আগে বলা দরকার যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মার্কিন সফরে ইতিমধ্যেই সেই দেশের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও উৎসাহী জনতা বুঝাইয়া দিয়াছেন মোদী সরকারকে তাঁহাদের পছন্দ। তবুও হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভস-এর এই তীব্র ভর্ৎসনায় পরিষ্কার, রাজনীতি ও কূটনীতির প্রশ্নে মোদী সরকার বিতর্কোর্ধ্ব নহে, সমর্থনীয় তো নহেই। কাশ্মীর নীতি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই বিদেশি শক্তির এ বিষয়ে মতদানের অধিকার নাই— ইহা বলিয়াও পার পাওয়া মুশকিল। কেননা কাশ্মীর যতই ভারতের অঙ্গরাজ্য হউক, তাহার পরিস্থিতি যে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিবেচনাধীন— এত দিনে ইহা যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত। মার্কিন কংগ্রেসে আমন্ত্রিত ভারতীয় সাংবাদিক আরতি টিকু সিংহ কড়া ভাবে কাশ্মীরে পাকিস্তানি প্ররোচনা ও ভারতের নিরুপায় পরিস্থিতির কথা বলিয়াছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ৩৭০ ধারা বিলোপের পরবর্তী কালে ভারত সরকারের নাগরিক অধিকারদমনের নীতি কোনও অজুহাতেই সমর্থন করা যায় না। যে সন্ত্রাসের জন্য মানুষ ‘ঘরের বাহিরে পা রাখিতে’ ভয় পান, সেই সন্ত্রাসের মোকাবিলা করিতে হইবে, সন্দেহের অবকাশ নাই। কিন্তু তাহার বদলে ঘরের বাহিরে পা রাখিবার অধিকারটিই কাড়িয়া লওয়া অত্যন্ত আপত্তিজনক।
আশঙ্কা— এই ভর্ৎসনা আরও বাড়িবে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক অবিবেচনা-প্রসূত কথায়। জয়শঙ্কর প্রগল্ভ বলিয়া পরিচিত নহেন। সাধারণত তিনি হিসাব করিয়া কথা বলেন। কিন্তু তিনিই আপাত-স্পর্ধার সঙ্গে মন্তব্য করিয়াছেন যে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর তো ভারতেরই অংশ, এবং তাহা সরাসরি ভারতেরই অঙ্গীভূত হইতে চলিয়াছে। প্রথমত বোঝা গেল না, যাহা এই মুহূর্তে ‘সরাসরি’ দেশের অঙ্গীভূত নহে বলিয়া তিনি স্বীকার করিতেছেন, তাহা কী ভাবে ভারতেরই অংশ হয়। দ্বিতীয়ত, এমন একটি সংবেদনশীল বিষয় লইয়া এই মন্তব্য করিবার অধিকার কি তাঁহার আছে? বিদেশমন্ত্রীর যতই ক্ষমতা থাকুক, গণতান্ত্রিক সরকারের পরিচালনার কথা ভাবিলে তিনি কিন্তু দেশের কূটনৈতিক অবস্থান নিজের একক সিদ্ধান্তে, কোনও আলোচনা/নীতি পরিবর্তন ব্যতীত, পাল্টাইয়া দিতে পারেন না, আর আন্তর্জাতিক স্থিতাবস্থার বিরুদ্ধে গিয়া এই ভাবে হঠকারী মন্তব্যও করিতে পারেন না। স্মরণে আসিবে, অগস্টের প্রথম সপ্তাহে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভার বক্তৃতায় বলিয়াছিলেন: ‘অন রেকর্ড’ তিনি মন্তব্য করিতে চাহেন যে তিনি সংসদে জম্মু ও কাশ্মীরের কথা বলিলে তাহার মধ্যে পাক-অধিকৃত কাশ্মীর ও আকসাই চিনের কথাও থাকিবে, কেননা ‘কাশ্মীরের সীমানার মধ্যে এই দুই অঞ্চলও পড়ে’। এই ভিত্তিহীন দাবি অচিন্তনীয়, কেননা ইহা সরাসরি আন্তর্জাতিক চুক্তি-লঙ্ঘনকারী। অর্থাৎ, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের বিভিন্ন কথায় আন্তর্জাতিক চুক্তি বা বোঝাপড়ার বিরুদ্ধতা স্পষ্ট। দেশের মধ্যে বিজেপি-সমর্থকরা ইহাতে উল্লসিত হইতে পারেন, জাতীয়তাবাদী জনতা প্রফুল্ল বোধ করিতে পারেন, কিন্তু ভ্রান্ত কূটনীতি দিয়ে দলীয় রাজনীতি করিবার প্রয়াস শুধু অন্যায় নহে, সমূহ বিপজ্জনক। কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদ্ভ্রান্ত উন্মার্গগামিতায় আখেরে ভারতের স্বার্থহানির সম্ভাবনাই দেখা যাইতেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy