Advertisement
E-Paper

আশা ফুরোয় না, ক্রিকেট শিখিয়ে যায়

আমাদের জীবনে সমস্যার শেষ নেই। তারই মধ্যে দেড় মাসের বিশ্বকাপ, আমাদের যন্ত্রণার জঙ্গলে সাময়িক ভাবে হলেও আনন্দ দেয়। যত দিন এক টুকরো মাঠ এবং ব্যাট-বল-উইকেট থাকবে, মানুষের আনন্দ প্রবাহ কিছুতেই থেমে যাবে না। লিখছেন সূর্যশেখর দাস গত বিশ্বকাপেই ব্রেন্ডন ম্যাকালামের নেতৃত্বে প্রশংসা কুড়িয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ম্যাকালাম আরও একটি পরিবর্তন এনেছিলেন।

বিশ্বকাপ হাতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক অইন মর্গ্যান। ফাইল ছবি

বিশ্বকাপ হাতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক অইন মর্গ্যান। ফাইল ছবি

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৯ ০০:১০
Share
Save

৯ মার্চ ২০১৫। ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে ১৫ রানে হেরে ২০১৫-এর বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায় থেকেই বিদায় নিল। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক অইন মর্গ্যান শূন্য রানে আউট হয়েছেন। ম্যাচ শেষে মর্গ্যান যখন বলছেন, ‘‘Unbelievably disappointed... I am gutted at the moment... ’’ তখন তাঁর দু’চোখে অতলান্ত শূন্যতা। গলাটা পুরোপুরি খাদে নেমে গিয়েছে। কিন্তু এই ব্যর্থতার অবসান কোথায়!

মর্গ্যান ঠিক করলেন ঘুরে দাঁড়াতে হবে। মর্গ্যান পাশে পেলেন ইংল্যান্ড ক্রিকেটের নতুন ডিরেক্টর অ্যান্ড্র স্ট্রকে। ব্লু প্রিন্ট নিয়ে হাজির হলেন নতুন কোচ ট্রেভর বেইলিস। তিন জন নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। রক্ষণশীল ছককে বিদায় দিয়ে ইংল্যান্ড ভয়ডরহীন, নির্ভার ক্রিকেট খেলতে শুরু করল। ৫০ ওভারের ম্যাচে ৩৫০ রানের গণ্ডি বারবার অতিক্রম করতে থাকল ইংল্যান্ড। পরিবর্তন এল ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। আরও সাহসী হয়ে উঠলেন মর্গ্যানের বোলাররা। বেন স্টোকস, জস বাটলার, ক্রিস ওকসদের দৌলতে ফিল্ডিং-ও দুর্ভেদ্য হল। ফলে ১৪ জুলাই ২০১৯-এ লর্ডসে মর্গ্যান বাহিনীর হাতে বিশ্বকাপটা উঠল। আবার প্রমাণিত হল, ব্যর্থতার অন্ধকারেই লুকিয়ে থাকে সাফল্যের বীজ। তবে এর পিছনে রয়েছে গত চার বছরের নিরলস, আত্মতুষ্টিহীন পরিশ্রম।

গত বিশ্বকাপেই ব্রেন্ডন ম্যাকালামের নেতৃত্বে প্রশংসা কুড়িয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ম্যাকালাম আরও একটি পরিবর্তন এনেছিলেন। বলে দিয়েছিলেন, নিউজিল্যান্ড সেরাটা শুধু ব্যাট এবং বলে দেখা যাবে। স্লেজিং চলবে না। অন্য দলগুলি যখন স্লেজিং করেই যাচ্ছে তখন ভদ্র অথচ আপোষহীন ক্রিকেট খেলে একটার পরে একটা ম্যাচ জিতছিল কিউইরা। এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত সন্দেহ নেই। গত বিশ্বকাপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। হৃদয় জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। আচ্ছা, গত ফুটবল বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়াকে আপনাদের মনে আছে? নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ক্রোয়েশিয়া রানার্স হয়েছিল। বিশ্বকাপ জিতেছিল ফ্রান্স। তবে মানুষের হৃদয় জিতেছিল ক্রোয়েশিয়া। মুম্বইয়ের চেয়েও কম জনসংখ্যার নিউজিল্যান্ড অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও পরপর দু’বার বিশ্বকাপে রানার্স হল। কেউ কেউ ফুটবলে ক্রোয়েশিয়া আর ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের পারফর্ম্যান্সের মিল খুঁজে পেতেই পারেন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং সাহসিকতার ঠিকঠাক মিশেল কতটা কার্যকরী হতে পারে তা কিউই এবং ক্রোটরা বাস্তবে প্রমাণ করে দিল ।

ভারত, লিগ পর্যায়ে সেরা। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ৪০ মিনিটের এলোমেলো ব্যাটিংই বিশ্বকাপ জয়ের আশা কার্যত শেষ করে দেয়। তবে পাঁচটি সেঞ্চুরি করে রোহিত শর্মা রেকর্ড করেছেন। টি-টোয়েন্টিময় ক্রিকেটে যখন পিটিয়ে বলের ছাল-চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়াটাই কার্যত দস্তুর হয়ে উঠেছে, সেখানে রোহিতের ব্যাট শিল্পীর তুলি হয়ে উঠেছে। স্ট্রেট ড্রাইভ থেকে কভার ড্রাইভ, এমনকি আপার কাট থেকে পুল শট— সব কিছুতেই মিশে রয়েছে নান্দনিকতা। এবং যশপ্রীত বুমরা। গত সাড়ে তিন বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন বুমরা। তাঁর অস্ত্রাগারে স্লোয়ার ডেলিভারি থেকে ইয়র্কার— নানা অস্ত্র মজুত রয়েছে। এই বিশ্বকাপেও নজর কাড়লেন তিনি।

এই বিশ্বকাপে আরও তিন জন ক্রিকেটার উজ্জ্বল হয়ে রইলেন। প্রথম জন পাকিস্তানের মহম্মদ আমির। ন’বছর আগে ইংল্যান্ডের মাটিতেই স্পট ফিক্সিংয়ের চোরাবালিতে কার্যত হারিয়ে গিয়েছিলেন আমির। তাঁকে জেলেও যেতে হয়। অনেকেই ভেবেছিলেন আমিরের কেরিয়ার শেষ। এ বারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের প্রাথমিক টিমে আমিরের জায়গাই হয়নি। শেষ পর্যন্ত যখন সুযোগ পেলেন, পাকিস্তান ব্যর্থ হলেও ১৭ উইকেট পেয়ে উজ্জ্বল মহম্মদ আমির। এবং অবশ্যই শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা। দু’বছর আগে ক্রিকেট পণ্ডিতেরা ভেবেছিলেন মালিঙ্গার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ার কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছে। ওঁর বলের গতি কমে গিয়েছে। বল সে ভাবে সুইং করাতে পারছেন না। শরীরের বাড়তি মেদ কোথাও যেন তীক্ষ্ণতাকে ভোঁতা করে দিয়েছে। নির্মম ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের শিকার হচ্ছিলেন। এ বারের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা যে তিনটি ম্যাচ জিততে পেরেছে তার মূল কারণ কিন্তু এই মালিঙ্গাই। বিশেষ করে ইংল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচ। শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ২৩২ রান তুলেছিল। সবাই ধরে নিয়েছিলেন ইংল্যান্ড সহজে জিতে যাবে। মালিঙ্গা একাই চার উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে ২০ রানে হারিয়ে দিলেন। অবহেলার সমুদ্র সাঁতরে বিশ্বকাপের মঞ্চে আমির আর মালিঙ্গা নিজেদের মেলে ধরলেন। আর বঙ্গসন্তান সাকিব আল হাসান। মোট ৬০৬ রান করেছেন এবং ১১ উইকেট পেয়েছেন। তাঁর সঙ্গে লিটন, মুশফিকুর বা তামিমেরা উপযুক্ত সাহায্য করতে পারতেন তা হলে কক্সবাজারে এত তাড়াতাড়ি সন্ধ্যা হত না।

আমাদের জীবনে সমস্যার শেষ নেই। তারই মধ্যে দেড় মাসের বিশ্বকাপ আমাদের যন্ত্রণার জঙ্গল থেকে সাময়িক ভাবে হলেও আনন্দ দেয়। সাকিবের অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্স, রোহিতের এক একটি অনবদ্য সেঞ্চুরি, সময়ের চাকাকে খানিকক্ষণের জন্য থামিয়ে দিয়ে মালিঙ্গার একটা দুর্দান্ত স্পেল, স্পট ফিক্সিংয়ের অন্ধকূপ থেকে উঠে এসে আমিরের একটি ম্যাচে ৫ উইকেট প্রাপ্তি আমাদের আলোড়িত করেছে। যত দিন এক টুকরো মাঠ এবং ব্যাট-বল-উইকেট থাকবে, মানুষের আনন্দ প্রবাহ কিছুতেই থেমে যাবে না। এই পৃথিবীকে ক্রিকেট যেন স্নিগ্ধ শুশ্রূষা, শান্তি এবং তৃপ্তি এনে দেয়। এখানেই ক্রিকেটের মহত্ব

শ্যামসুন্দরপুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক

New Zealand Croatia ICC World Cup 2019 Brendon McCullum

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।