দার্জিলিং এবং কালিম্পং-এ পর পর রহস্যজনক বিস্ফোরণ ঘটেছে।
বিপদের গন্ধটা এ বার কিন্তু আরও তীব্র। পরিস্থিতি মাসাধিক কাল ধরেই বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে পাহাড়ে। কিন্তু গন্ধটা গত কয়েক দিনে বদলে গেল বেশ খানিকটা। এখন আর শুধু অশান্তির মেঘ নয়, দার্জিলিং, কালিম্পঙের আকাশে এখন রহস্যের মেঘও জমাট। আর কিন্তু ঝুঁকি নেওয়া চলে না, টানাপড়েনটাকে আর ক্ষণেকও দীর্ঘায়িত হতে দেওয়া যায় না। দ্বিপাক্ষিক হোক, ত্রিপাক্ষিক হোক, সর্বদল হোক— শান্তি, স্বাভাবিকতা এবং আইন-শৃঙ্খলা ফেরানোর আলোচনাটা এখনই শুরু হওয়া দরকার।
পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্য গঠনের দাবি বা সে দাবিতে আন্দোলন নতুন নয়। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পাহাড়ের হিংসাত্মক রূপও অচেনা নয়। সুবাস ঘিসিঙ্গ এক কালে যে অগণতান্ত্রিক পথে পাহাড়কে অশান্ত করে তুলেছিলেন, বিমল গুরুঙ্গরাও সেই পথেই হাঁটলেন। আন্দোলনের নামে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে আস্ফালন করতে থাকলেন। অতীতে পাহাড়ে হিংসার যত নজির রয়েছে, সেই সব নজির ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চালালেন। গুরুঙ্গদের এ হেন হম্বিতম্বির মোকাবিলাও ধৈর্যের সঙ্গে বা ধীর লয়ে করা যেত হয়তো। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় বৈদেশিক শক্তির ছায়াপাতের আাভাস মিলতে শুরু করেছে যখন, তখন আর ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়। যে কোনও মূল্যে স্বাভাবিকতা ফেরানো জরুরি পাহাড়ে।
দার্জিলিং এবং কালিম্পং-এ পর পর রহস্যজনক বিস্ফোরণ ঘটেছে। ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণহানিও হয়েছে।
মনে রাখতে হবে, এই দার্জিলিং সংলগ্ন শিলিগুড়ি করিডরকে ভূ-কৌশলগত পরিভাষায় চিকেন’স নেক নামে ডাকা হয়। জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিকেন’স নেক অঞ্চলের সুরক্ষা।
মনে রাখতে হবে, দার্জিলিং বা সংলগ্ন সিকিমের অদূরেই সেই ডোকলাম, যে ডোকলামকে ঘিরে বেনজির টানাপড়েনে জড়িয়ে পড়েছে ভারত এবং চিনের সশস্ত্র বাহিনী।
মনে রাখতে হবে, চিকেন’স নেক সংলগ্ন অঞ্চলে যে অশান্তি চলছে, তার আঁচ নিভে আসার ইঙ্গিত মিলতেই রহস্যজনক ভাবে পর পর বিস্ফোরণ ঘটেছে, পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলা হয়েছে এবং এর নেপথ্যে বৈদেশিক প্রভাব রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
একটা অশুভ সমীকরণের ছায়াচিত্র যে ফুটে উঠছে, তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করাই অগ্রাধিকার। আন্দোলন হোক বা রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির প্রশ্ন, সব কিছুই আপাতত দূরে সরিয়ে রাখা জরুরি। পাহাড়ে স্বাভাবিকতা, শান্তি এবং আইনের শাসন ফের সম্পূর্ণ রূপে ফেরানো জরুরি। কেন্দ্র, রাজ্য এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষ পরিস্থিতির তাৎপর্য বুঝছেন বলে আশা করা যায়। না বুঝলে কিন্তু অন্য রকম বিপদ আমাদের অপেক্ষায় থাকতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy