পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি।
আঁচটা টের পাচ্ছে পাকিস্তান। শুধু ভারতীয় হামলায় শেষ হল না অস্বস্তির। গোটা বিশ্বে কোণঠাসাও হয়ে পড়তে হল। পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পরে ভারত প্রকাশ্যেই জানিয়েছিল যে, প্রত্যাঘাত হবে। বেশ নজিরবিহীন ভঙ্গিতে ভারত সেই প্রত্যাঘাত করল। তার পরে আরও আশ্চর্য হয়ে ইমরান খান লক্ষ্য করলেন, পৃথিবীর কোনও দেশ পাকিস্তানের হয়ে কথা বলছে না। পরম মিত্র চিনও সন্ত্রাসবাদ দমনের পরামর্শ দিল পাকিস্তানকে।
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি ব্যতীত অন্য কোনও সময়ে ভারত এতটা আক্রমণাত্মক রূপ নিতে পারে, ধারণা ছিল না পাকিস্তানের। তাই সর্বাগ্রে চমকে যাওয়ার পালা ছিল ভারতের এই নতুন ভাবমূর্তি দেখে। পরবর্তী চমকটা আত্মোপলব্ধির। নিজের ভাবমূর্তিটা গোটা বিশ্বের সামনে কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, পাকিস্তান তা এত তিক্ত ভাবে সম্ভবত আগে কখনও তা উপলব্ধি করেনি।
ভারত-পাক টানাপড়েনে বরাবর পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে চিন। সে দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে যে গভীরতায় পৌঁছেছে, তা বেনজির। সারা বছরের বন্ধু চিনও কিন্তু পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াতে পারল না এ বার। ভারতের প্রত্যাঘাতের বিরুদ্ধে প্রায় কোনও মন্তব্যই চিন করতে চায়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছে দুপক্ষকেই। আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য পাকিস্তানকে বার্তা দিয়েছে। ভারতের প্রত্যাঘাতের পরে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে চিনের এই রকম বয়ান পাকিস্তানের অসহায়তা অনেক গুণ বাড়িয়ে দিল।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে আমেরিকা এখন পাকিস্তানের সাহায্যপ্রার্থী কিয়দংশে। তালিবান ও আমেরিকার মধ্যে সেতু হয়ে উঠছে পাকিস্তান। তাই এই মুহূর্তে পাকিস্তানকে না চটানো আমেরিকার বাধ্যবাধকতা। ইমরান খানরা আশা করেছিলেন, আমেরিকা সামান্য হলেও মুখ খুলবে ভারতীয় বায়ুসেনার অভিযানের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাও হল না। আমেরিকাও বার্তা দিল, ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নয়, নিজের দেশে সন্ত্রাসের ঘাঁটি ভাঙার উপরেই জোর দেওয়া উচিত পাকিস্তানের।
ইসলামি দেশগুলোর সংগঠন পাকিস্তানের হয়ে মুখ খোলেনি। পৃথিবীর কোনও গুরুত্বপূর্ণ শক্তিকে ইমরান খান ভারতের বিরুদ্ধে সরব করে তুলতে পারেননি। কিন্তু উল্টো দিকে ভারতের পদক্ষেপকে সমর্থন করে কতগুলো দেশ বিবৃতি দিয়েছে, তা সব শিবিরেই জ্ঞাত।
এই রকম অসহায়, মিত্রহীন, কোণঠাসা দশা কেন হল পাকিস্তানের? অভ্রান্ত ব্যাখ্যাটা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন শীর্ষ কূটনীতিক হুসেন হাক্কানি। সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় কারখানা হিসেবে গোটা বিশ্বের সামনে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে পাকিস্তান, সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেওয়া পাকিস্তানের ভাবমূর্তির অঙ্গ হয়ে গিয়েছে বিশ্বের সামনে, তাই ভারতের পদক্ষেপে অস্বাভাবিকতা দেখছেন না কেউ— ব্যাখ্যা হাক্কানির।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাসে মদত দিয়ে ভাবমূর্তি খুইয়েছে পাকিস্তান, চিনও পাশে নেই: প্রাক্তন পাক রাষ্ট্রদূত
আরও পড়ুন: জেনিভা সম্মেলনের শর্ত লঙ্ঘন, বায়ুসেনার পাইলটকে ফেরত দিক পাকিস্তান, দাবি ভারতের
পাকিস্তানের এই রকম নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হওয়ার দায় পাকিস্তানের নিজেরই সবচেয়ে বেশি। তবে দশকের পর দশক ধরে ভারত নিরলস ভাবে পাকিস্তানের মুখোশ খোলার যে চেষ্টা বিশ্ব মঞ্চে চালিয়ে গিয়েছে, তাও কাজে এসেছে। অর্থাৎ শুধু সামরিক সাফল্য নয়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিরাট কূটনৈতিক সাফল্যও পেয়ে গিয়েছে ভারত।
ইমরান খানদের সামনে একমাত্র পথ নিজেদের বদলানো। না হলে ভাবমূর্তি বদল অসম্ভব, ক্রমশ আরও কোণঠাসা হয়ে পড়া অবশ্যম্ভাবী। চাপে পড়ে পথ ইতিমধ্যেই খানিক বদলাতে হয়েছে সন্ত্রাসের আশ্রয়দাতাদের। ভারতের বেনজির প্রত্যাঘাতের পরেও পাকিস্তানকে আজ যুদ্ধ না করার আহ্বান জানাতে হচ্ছে। কিন্তু এটা পাকিস্তানের কোনও সাময়িক কৌশল কি না, সে দিকেও নজর রাখা জরুরি।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাস দমনে পদক্ষেপ করুক পাকিস্তান, বলল আমেরিকা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy