Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Women Right

উপেক্ষিতা

পুরুষতান্ত্রিক পরিবার ও সমাজ নয়, রাষ্ট্রই সংবিধানের নির্দেশ মানিয়া মেয়েদের সমানাধিকার, সমান মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্য নিশ্চিত করিয়াছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৩৪
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করিবে মেয়েদের ভোট, এমন কথা হাওয়ায় ঘুরিতেছে। নির্বাচনী প্রচারে, ইস্তাহারে তাহাদের জন্য প্রতিশ্রুতির ছড়াছড়ি। বহু কাল ভারতের নির্বাচনে মেয়েদের ভোট ছিল পড়িয়া পাওয়া চৌদ্দ আনা। এত দিন পুরুষদের ভোট আদায় করিলে পরিবারের মেয়েদের ভোটও হাসিল হইবে, মনে করিত সকল দল। দিন বদলাইয়াছে, তাই তৃণমূল মেয়েদের মাসিক ‘হাতখরচ’ দিবার অঙ্গীকার করিয়াছে। বিজেপি সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়াছে। বাম দল সরকারি প্রকল্পে নিযুক্ত মহিলাদের পারিশ্রমিক বাড়াইবে বলিয়াছে। কিন্তু মেয়েদের কথা কেহ শুনিয়াছেন কি? মেয়েরা কী চাহে, তাহার খোঁজ যে কেহ করেন নাই, তাহা নেহাত বেখেয়ালে নহে। মেয়েদের কী পাইবার কথা ছিল আর কী পাইল, হিসাব লইতে গেলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির গলদগুলি বড়ই প্রকট হইয়া পড়ে। সংগঠিত এবং অসংগঠিত, সকল প্রকার কর্মক্ষেত্রে গত কয়েক বৎসরে মেয়েদের নিয়োগের হার দ্রুত কমিয়াছে। কোভিড অতিমারি সেই বিপন্নতাকে আরও তীব্র করিয়াছে। অথচ মেয়েদের নিয়োগের হার বাড়াইবার, সমান মজুরি নিশ্চিত করিবার অঙ্গীকার কোনও দল করে নাই। গ্রামে কর্মক্ষেত্রের সঙ্কোচনের জন্য মেয়েরা শহরে কাজ খুঁজিতেছে। গৃহপরিচারিকার কাজ এই রাজ্যে মেয়েদের বৃহত্তম নিয়োগক্ষেত্র। গৃহশ্রমে বেতনের কাঠামো নাই, সাপ্তাহিক ছুটি নাই। বিবিধ বৈষম্য, অমর্যাদা ও নির্যাতন প্রায় নিত্য প্রাপ্তি। তাহার প্রতিরোধে একটি আইন প্রণয়নের দাবি মেয়েরা দীর্ঘ দিন করিতেছে। এমন একটা বৃহৎ, কাঠামোগত প্রশ্ন কোনও দলের ইস্তাহারে স্থান পাইল না।

নূতন প্রাপ্তির আশার কুহক রচিতে সব কয়টি দল এমনই ব্যস্ত যে, পূর্ব প্রতিশ্রুতিও তাহারা ভুলিয়াছে। একশত দিনের কাজের প্রকল্পে মহিলা মজুররা সমান মজুরি পাইবার অধিকারী, কিন্তু বাস্তবে তাহা হইতে অধিকাংশ নারী শ্রমিক বঞ্চিত। নির্মাণ শ্রমিক, কারখানা শ্রমিক ও গিগ কর্মীদের একটি বড় অংশ মহিলা, কিন্তু কর্মীদের প্রাপ্য সুরক্ষা অথবা সুবিধা কিছুই মেলে না। কেন্দ্র এবং রাজ্যের টানাপড়েনে নূতন বিড়ি কার্ড বিলি হয় নাই বহু মাস, নারী শ্রমিক তাহার প্রাপ্য চিকিৎসা দূরে থাক, মাস্কের মতো ন্যূনতম স্বাস্থ্য সুরক্ষাও পায় নাই। মেয়েদের অধিকারের প্রতি প্রশাসনের এই উদাসীনতার কোনও প্রতিবাদ করে নাই বিরোধী দলগুলিও। আপন প্রাপ্য আদায় করিবার প্রচেষ্টায় কোনও দলকেই পাশে পায় নাই মেয়েরা। রাজনীতিতে বিরোধিতা যে কেবল জনসংযোগের বিষয় হইয়া দাঁড়াইয়াছে, জন-আন্দোলনের বিষয় আর নাই, তাহাতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে রাজ্যের মেয়েরা। ভোটের লড়াইতে তাহাদের ঝুঁকি অধিক। অথচ ক্ষমতাসীনকে দায়বদ্ধ করিয়া মেয়েদের যে সুরক্ষা দিতে পারিত দলীয় রাজনীতি, তাহা দেয় নাই। নির্বাচনের পূর্বে ‘মানুষের কাজ’ করিতে আগ্রহের শেষ নাই নেতাদের। কিন্তু মেয়েদের জন্য যে কাজগুলি তাঁহাদের বহু পূর্বেই করিবার কথা ছিল, তাহা কতটুকু করিয়াছেন?

পুরুষতান্ত্রিক পরিবার ও সমাজ বার বার মেয়েদের ঊনমানব করিতে চাহিয়াছে, রাষ্ট্রই সংবিধানের নির্দেশ মানিয়া মেয়েদের সমানাধিকার, সমান মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্য নিশ্চিত করিয়াছে। কিন্তু আজ আপন জীবনসঙ্গী নির্বাচনের অধিকার হইতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হইবার অধিকার, সর্বত্রই মেয়েদের স্বাতন্ত্র্যে আঘাত হানিতেছে রাজনীতি। জিতিলে ‘লাভ জেহাদ’ আইন করিবার ঘোষণা, আর মহিলা প্রার্থীদের অপমান ও নিগ্রহ, এই দুইটি একই মুদ্রার দুই পিঠ। বিবাহ হইতে রাষ্ট্রপরিচালনা সকলই যে পুরুষদের ইচ্ছাধীন, রাজনৈতিক দলগুলি তাহা মনে করাইবার সুযোগ ছাড়ে নাই। এই অবজ্ঞা এবং অবহেলাই বলিয়া দেয়, কোন খেলাতে তাহারা বিশ্বাসী।

অন্য বিষয়গুলি:

Women Right
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy