Advertisement
২২ অক্টোবর ২০২৪
Gender Inequality

বিবাহের জরিমানা

গত সাত-আট দশকে দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশে দারিদ্র কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, সামাজিক নানা প্রথায় পরিবর্তন এসেছে। অথচ, কেবল ‘মেয়ে’ পরিচয়ের জন্য মেয়েদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করার অভ্যাস দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে এখনও প্রবল।

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:২৭
Share: Save:

বিয়ের পরে দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ মেয়ে কাজ ছেড়ে দেয়, বন্ধ হয়ে যায় তাদের রোজগার, এ কথা অজানা নয়। কিন্তু এ কেবল মেয়েদের ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, দেশের উন্নয়নও ক্ষতিগ্রস্ত হয় মেয়েদের বিয়ের জন্য এমন ‘জরিমানা’ দিতে হয় বলে, মনে করাচ্ছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট। ‘সাউথ এশিয়া ডেভলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ বলছে, ভারতে মেয়েদের কর্মনিযুক্তি ১২ শতাংশ কমে যায় বিয়ের পরে, এমনকি সন্তান না জন্মালেও। পুরুষদের ক্ষেত্রে ঠিক বিপরীত ঘটে, বিয়ের পরে তাদের কর্মনিযুক্তি বাড়ে ১৩ শতাংশ। সম্ভবত এর কারণ, বিয়ের পরে অনেক পুরুষ নিয়মিত কাজের জগতে প্রবেশ করে। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ের জরিমানার সঙ্গে অনতিবিলম্বে যোগ হয় ‘মাতৃত্বের জরিমানা’— সন্তানের লালন-পালন করার জন্য কাজের ক্ষেত্র থেকে মেয়েদের বিদায়। দক্ষিণ এশিয়ায় কর্ম-সমর্থ মেয়েদের তিন জনের মধ্যে দু’জনই কাজের জগতে যোগ দিতে পারছে না। দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশ মেয়েদের কর্মনিযুক্তির নিরিখে বিশ্বে শেষের সারিতে রয়েছে। সামগ্রিক ভাবে এই অঞ্চলে পুরুষদের কর্মনিযুক্তির হার ৭৭ শতাংশ, মেয়েদের ৩২ শতাংশ। মেয়েদের শ্রমশক্তি সংসার পরিচর্যার কাজে, অথবা পারিবারিক উৎপাদনে অবৈতনিক শ্রম হিসাবে নিয়োজিত হয়। তার অর্থমূল্য নিয়ে ইতিপূর্বে নানা হিসাব-নিকাশ হয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক হিসাব, মেয়েরা যদি পুরুষদের সমান হারে কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত হত, তা হলে দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপি এবং মাথাপিছু আয় বেড়ে যেত ১৩ শতাংশ থেকে ৫১ শতাংশে।

কথাগুলি অজানা নয়। নানা দিক থেকে বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা শেষ অবধি একমত হয়েছেন যে, সমাজে লিঙ্গ-অসাম্যের প্রবলতা এর অন্যতম কারণ। গত সাত-আট দশকে দক্ষিণ এশিয়ার নানা দেশে দারিদ্র কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, সামাজিক নানা প্রথায় পরিবর্তন এসেছে। অথচ, কেবল ‘মেয়ে’ পরিচয়ের জন্য মেয়েদের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করার অভ্যাস দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে এখনও প্রবল। ধর্ম, বর্ণ, জাতিপরিচয় নির্বিশেষে এই ঝোঁক দেখা যাচ্ছে নানা দেশে। মেয়েদের প্রজননশক্তি এবং শ্রমশক্তি, এই দুইয়ের উপর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত। অতীতে মনে করা হত যে, মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়লে তাদের কর্মনিযুক্তি বাড়বে, স্বরোজগারের সঙ্গে সক্ষমতাও আসবে, তার ফলে সমাজে পুরুষ-আধিপত্যের নকশা বদলে যাবে। এত দিনে স্পষ্ট হয়েছে যে পুরুষতন্ত্রের শিকড় গভীর, তার শাসন-ক্ষমতার প্রকাশ বিচিত্র। শিক্ষিত মেয়েদের গতিবিধিও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, নিজেদের রোজগারের উপরে মেয়েদের অধিকার থাকছে না।

বিশ্ব ব্যাঙ্ক মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার, এবং সমাজে লিঙ্গ-অসাম্যের অবসানের জন্য সুপারিশ করেছে। এই বৃহৎ লক্ষ্যগুলির প্রতি এগোনোর পাশাপাশি এমন ব্যবস্থা করা দরকার, যাতে শ্রমজীবী, কৃষিজীবী মেয়েরা সহজে রোজগার করতে পারে। কাজের সম্মানজনক শর্ত, নিরাপদ যানবাহন ও কর্মক্ষেত্র, যথেষ্ট শৌচালয়, সন্তানের জন্য ক্রেশ, এমন নানা ব্যবস্থা করার কথা আইনে রয়েছে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে রূপায়িত হয়নি। কর্মরত মেয়েদের কথা মাথায় রেখে নানা ধরনের পরিষেবার জোগান দেওয়ার কথা ভাবতে হবে সরকারি ও অসরকারি, উভয় ক্ষেত্রে।

অন্য বিষয়গুলি:

Women Empowerment Gender Inequality Jobs Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE