কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সম্প্রতি মহিলাদের আরও বেশি সংখ্যায় উদ্যোগপতি হিসেবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এই আহ্বান তাৎপর্যপূর্ণ। পরিসংখ্যান বলছে যে, দেশীয় সংস্থাগুলির পর্ষদে মহিলা সদস্য রয়েছেন গড়ে ১.০৩ জন। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী উল্লিখিত পরিসংখ্যানেও দেখা গিয়েছে, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত সংস্থাগুলিতে ১৪ জন মহিলা পাঁচ-ছ’টি সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে রয়েছেন। সাত জন রয়েছেন সাতটি সংস্থার পর্ষদে। নারীর ক্ষমতায়ন এবং দেশের অর্থনীতিতে মেয়েদের যোগদানের প্রেক্ষিতে ভাবলে উপস্থিতির এই হার আদৌ সন্তোষজনক নয়। বস্তুত, ভারতীয় শিল্পমহলে মহিলাদের সে ভাবে দেখা না-যাওয়ার বিষয়টি ইতিপূর্বেও আলোচিত হয়েছে। মুম্বইয়ের সভায় অর্থমন্ত্রী আরও বেশি সংখ্যায় মেয়েদের পর্ষদে নিয়ে আসা এবং তাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তৈরি করার কথা বলেছেন ঠিকই, কিন্তু এত দিন কেন তা সম্ভব হয়নি, সেই কারণগুলি খতিয়ে দেখাও জরুরি ছিল। বাধার পাহাড় না সরলে মেয়েরা যথেষ্ট উদ্যোগী হবেন কী করে?
এ ক্ষেত্রে প্রথম বাধা মূলধনের। অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের ২০২১ সালের বার্ষিক রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে এই ধরনের শিল্পের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশের মালিকানা মেয়েদের। কারণ হিসাবে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের নানাবিধ সমস্যার কথা শোনা যায়। ভারতীয় যুব শক্তি ট্রাস্ট (বিওয়াইএসটি) রাজধানী সংলগ্ন অঞ্চল, চেন্নাই এবং পুণেতে ৪৫০ জন মহিলার উপর করা এক সমীক্ষার ভিত্তিতে জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ঋণ নিতে গিয়ে ৮৫ শতাংশ মহিলা উদ্যোগপতিকে সমস্যায় পড়তে হয়। ৬০ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা আর্থিক পরিষেবা ঠিকমতো পান না। এক দিকে, ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বন্ধক রাখতে পারার মতো নিজস্ব সম্পত্তি সাধারণত মেয়েদের নামে কমই থাকে। অন্য দিকে ব্যাঙ্কগুলিও অনেক সময় তাঁদের ঋণ দেওয়া থেকে বিরত থাকে এই ভাবনায় যে, মেয়েরা কিছু দিনের মধ্যেই ব্যবসা ছেড়ে দেবেন। ঋণের অভাবে ব্যবসায় বড় অঙ্কের লগ্নি কঠিন হয়। মূলত নিজস্ব সঞ্চয় এবং সামান্য ধারের অর্থে গড়ে তোলা পরিকাঠামোয় উৎপাদনের কাজটি যদি বা হয়, বিপণনের ক্ষেত্রটি অবহেলিত থেকে যায়। প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে পড়েন মেয়েরা।
অর্থনৈতিক বাধার সঙ্গে সামাজিক প্রতিবন্ধকতাগুলিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যেখানে সাধারণত মেয়েদের গৃহকর্ম এবং সন্তান প্রতিপালনে অনেকটা সময় দিতে হয়, সেখানে নিজের ব্যবসা গড়ে তোলা এবং তাতে পূর্ণশক্তি নিয়োজিত করার মতো সময় এবং পারিবারিক ও সামাজিক সমর্থন অনেকাংশেই মেয়েদের থাকে না। পরিবারের বাইরে তাঁদের চলাফেরার গণ্ডিটিও সীমাবদ্ধ থাকায় ব্যবসার প্রয়োজনীয় ‘নেটওয়ার্ক’ গড়ে ওঠে না। এবং এখনও এ দেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সংস্থার প্রধান হিসেবে মেয়েদের উপস্থিতি সুনজরে দেখে না। ব্যাঙ্ক-সহ অন্য উৎসগুলি থেকে ঋণ না পাওয়ার পিছনেও প্রধানত এই মানসিকতাই কাজ করে। তাই শুধুমাত্র আহ্বানে চিঁড়ে ভিজবে না। পর্ষদে মেয়েদের বেশি করে নিয়ে আসতে গেলে ঋণ-সহ অন্য সুযোগসুবিধা প্রদানে সর্বাগ্রে এই বিভেদমূলক মানসিকতার অবসান ঘটাতে হবে। উদ্যোগপতি হিসাবে মেয়েরা এগিয়ে এলে অর্থনীতিও এগোবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy