Advertisement
E-Paper

কঠিন লড়াই

লস্কর-ই-তৈবা বা জইশ-ই-মহম্মদের (জেইএম) মতো কট্টর ধর্মীয় মতাবলম্বী সংগঠনের পরিবর্তে দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট এবং পিপলস্ অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট (পিএএফএফ)-এর মতো নতুন সংগঠনের আবির্ভাব ঘটেছে।

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৩৫
Share
Save

অতীতের জঙ্গি কার্যকলাপ ও অতিমারি পর্ব পেরিয়ে সবেমাত্র কিছুটা স্থিতি এসেছিল ভারতের ‘ভূস্বর্গে’। কিন্তু সাম্প্রতিক সন্ত্রাসের কোপ উপত্যকাটিকে পুনরায় অতীতের অন্ধকারময় দিনগুলিতে টেনে নিয়ে গেল। দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) এই হত্যালীলার দায়ভার স্বীকার করেছে যাতে এযাবৎ দু’জন বিদেশি-সহ অন্তত ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু ঘটেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির দাবি, টিআরএফ কোনও বিচ্ছিন্ন সত্তা নয়, বরং লস্কর-ই-তইবারই (এলইটি) কৌশলগত পুনর্গঠন। লক্ষণীয়, সম্প্রতি কালে এই গোষ্ঠীগুলির উপস্থাপনের পদ্ধতিতে এক লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে। লস্কর-ই-তৈবা বা জইশ-ই-মহম্মদের (জেইএম) মতো কট্টর ধর্মীয় মতাবলম্বী সংগঠনের পরিবর্তে দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফ্রন্ট এবং পিপলস্ অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট (পিএএফএফ)-এর মতো নতুন সংগঠনের আবির্ভাব ঘটেছে। পাকিস্তান ভিত্তিক জিহাদি গোষ্ঠীগুলিরই ‘ছায়াবাহিনী’ এই জঙ্গিরা।

২০১৯ সালে মোদী সরকার ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করার ফলে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিশেষ পরিবর্তন ঘটে। ফলে নিজেদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে এই জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিও বদল আনে তাদের কার্যকলাপে। নাম বা পরিচয় পাল্টে এই গোষ্ঠীগুলি মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, যাতে আঞ্চলিক স্তরে তাদের প্রতি সমর্থন অক্ষুণ্ণ থাকে। নতুন সদস্যদের গোপন রেখে, কোনও সন্দেহ না জাগিয়ে নিজেদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়াই এদের অন্যতম উদ্দেশ্য। বস্তুত, ‘প্রতিরোধ’-এর মতো শব্দ গ্রহণ করে এই গোষ্ঠীগুলি বিশ্বস্তরে ছাপ ফেলতে চাইছে, তাদের হিংসাত্মক কার্যকলাপকেও দেখাতে চাইছে ‘বৈধ সংগ্রাম’ হিসাবে। ভুললে চলবে না, ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই উত্থান ঘটে টিআরএফ-এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠীর। পূর্বসূরিদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই টিআরএফ এবং পিএএফএফ এযাবৎ নিরাপত্তা বাহিনী এবং নাগরিকদের উপরে আক্রমণ, জঙ্গি নিয়োগ এবং সীমান্ত পেরিয়ে অস্ত্র ও মাদক পাচার অব্যাহত রাখে।

অন্য দিকে, পাল্টেছে গোষ্ঠীগুলির নিয়োগ কৌশলও। আগে যেখানে নিয়োগের জন্য মসজিদ ও ধর্মীয় মাদ্রাসা ব্যবহার করা হত, সেখানে টিআরএফ ও পিএএফএফ এখন অনলাইনে কাজ করে। টেলিগ্রাম এবং ইনস্টাগ্রামের মতো সুরক্ষিত চ্যানেলের মাধ্যমে ভারতীয় নিরাপত্তা অভিযানের কারসাজি করা ছবি, আবেগঘন বর্ণনা এবং ভিডিয়ো ব্যবহার করে ক্ষোভ জাগিয়ে তুলে বিক্ষুব্ধ তরুণদের বাছাই করে তারা। অনেক সময় অর্থনৈতিক হতাশা এবং মানসিক আঘাতকেও হাতিয়ার করা হয় তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে। বলা বাহুল্য, সংগঠনগুলির রসদ, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহের মতো সহায়তার নেপথ্যে রয়েছে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর হাত। বহু জঙ্গিই পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ক্যাম্পে প্রশিক্ষিত হয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় অনুপ্রবেশ করছে। এই ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার মুখে ভারতের প্রতিক্রিয়া সমান উপযোগী ও দৃঢ় হওয়া জরুরি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখন আর সীমান্ত বা যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি কূটনৈতিক অঙ্গনেও চারিয়ে গিয়েছে। প্রস্তুতিও সে ভাবেই নিতে হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Laskar-e-Taiba Jaish-E-Muhammad TRF PAFF Jammu and Kashmir ISI

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}