Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

সাবধান

সর্বভারতীয় নির্বাচনী শতরঞ্জের আসরে এখন আক্ষরিক অর্থে মধ্যলগ্ন— দেশ দুই লোকসভা নির্বাচনের মধ্যবিন্দুতে দাঁড়াইয়া আছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:৪০
Share: Save:

জনস্মৃতি পদ্মপাতায় জলের ন্যায় স্বভাবত চপল, সুতরাং স্মরণ করাইয়া দেওয়া যাইতে পারে যে, রাজনীতির ময়দানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খেলার অনুষঙ্গ আনিয়াছেন, ২০২১ সালে নহে, তাহার অনেক আগেই। তাঁহার দলের ‘খেলা হবে’ সহসা ভুবনবিদিত হইয়াছে বটে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর গুণমুগ্ধেরা বলিবেন— হে ভারত, ভুলিয়ো না, আসন্ন নির্বাচনী লড়াইকে ‘সেমিফাইনাল’ হিসাবে অভিহিত করিবার প্রচারকৌশল তিনি প্রয়োগ করিয়াছিলেন এই শতাব্দীর প্রথম দশকেই। স্পষ্টতই, নির্বাচনী রাজনীতি তাঁহার নিকট এক জটিল অঙ্কের দাবাখেলা, যাহার স্তরে স্তরে বিবিধ হিসাবনিকাশ করিয়া দান ফেলিতে হয়। এই সত্যও অস্বীকার করিবার অবকাশ নাই যে, এই হিসাবনিকাশের শাস্ত্রে তিনি আপন পারদর্শিতা নিঃসংশয়ে প্রমাণ করিয়াছেন, এক বার নহে, বারংবার, গত বিধানসভা নির্বাচনও যাহার দৃষ্টান্ত।

সর্বভারতীয় নির্বাচনী শতরঞ্জের আসরে এখন আক্ষরিক অর্থে মধ্যলগ্ন— দেশ দুই লোকসভা নির্বাচনের মধ্যবিন্দুতে দাঁড়াইয়া আছে। সুতরাং এই সময়টিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি জাতীয় রাজনীতিতে অভিযান শুরু করিবার উপযুক্ত ক্ষণ বলিয়া সাব্যস্ত করিয়া থাকেন, তাহার কিছু যুক্তি আছে বইকি। খেলার নিয়ম মানিয়া তিনি যদি আপাতত মাঝমাঠের দখল লইতে তৎপর হইয়া থাকেন, সেই চেষ্টাও অযৌক্তিক নহে। প্রশ্ন একটিই: হিতে বিপরীত হইবে না তো? বিজেপির বিপরীতে রাজনৈতিক প্রতিস্পর্ধার মঞ্চে কংগ্রেসকে গুরুত্ব না দিবার যে সওয়াল তিনি সম্প্রতি উচ্চ হইতে উচ্চতর গ্রামে তুলিয়াছেন, তাহার তাড়নায় ওই মঞ্চটিতেই ফাটল ধরিবে না তো? কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়ায় তো বটেই, শিবসেনা বা এনসিপি-র মতো দলগুলির কথাতেও ইতিমধ্যেই তেমন আশঙ্কা দানা বাঁধিয়াছে। যেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী ঐক্যের প্রয়োজন, সেখানে বিরোধী মঞ্চে কংগ্রেসের গুরুত্ব কমাইবার— এবং প্রকারান্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের গুরুত্ব বাড়াইবার— চেষ্টা শেষ বিচারে যাহার সুবিধা করিয়া দিতে পারে, তাহার নাম বিজেপি। এই আশঙ্কা উড়াইয়া দিবার নহে।

আশঙ্কার প্রেক্ষাপটটিও প্রাসঙ্গিক বইকি। বাজপেয়ী জমানায় বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পর্কের প্রাচীন ইতিহাসকে সরাইয়া রাখিলেও, যে বিধানসভা নির্বাচনের ফল লইয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঙ্গত কারণেই গর্বিত, সেই নির্বাচনই কিন্তু বিজেপির অভূতপূর্ব অগ্রগতির প্রমাণ দিয়াছে— এক দশকের মধ্যে এই রাজ্যে বিজেপির ভোটের অনুপাত চার শতাংশ হইতে প্রায় চল্লিশ শতাংশে পৌঁছাইয়াছে। রাজ্যের বিরোধী পরিসরে বিজেপির এমন একচ্ছত্র হইয়া উঠিবার পিছনে বামপন্থীদের অতীত কৃতকর্ম এবং ধারাবাহিক অহঙ্কার ও নির্বুদ্ধিতার ভূমিকা কম নহে, কিন্তু তাঁহারা আপাতত অপ্রাসঙ্গিক। অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক এবং উদ্বেগজনক সত্য ইহাই যে, বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের বিরুদ্ধে যে নৈতিক ও আদর্শগত অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অনেক দিন অবধি প্রবল এবং সক্রিয় ছিল, আজ তাহা বহুলাংশে অতীত। অথচ এমন একটি দল তথা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিস্পর্ধী রাজনীতি গড়িবার জন্য কেবল ভোটের শতাংশ কষিলে চলে না, আদর্শ ও নৈতিকতার বিশেষ ভূমিকা থাকে। স্পষ্ট ভাষায় প্রবল ভাবে সেই প্রতিস্পর্ধা ঘোষণা করিতে হয়। বর্তমান ভারতে বিরোধী মঞ্চ হইতে শাসকদের অ-গণতান্ত্রিক সংখ্যাগুরুবাদের বিরুদ্ধে তেমন ঘোষণার প্রয়োজন সর্বাধিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই প্রয়োজন মিটাইবার সামর্থ্য আছে— আছে পশ্চিমবঙ্গের বিপুল জনসমর্থন, আছে সংগ্রামী ভাবমূর্তি। কিন্তু সেই সামর্থ্য যদি প্রতিস্পর্ধী রাজনীতির সংহতি গড়িবার কাজে না লাগিয়া বিরোধী শিবিরের অন্তর্দ্বন্দ্বের ইন্ধন হইয়া উঠে, তাহা হইবে গণতান্ত্রিক ভারতের পক্ষে বড় দুর্ভাগ্যের কারণ।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee AITC TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy