Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
Riot in UK

দগ্ধ

ঘটনার সূত্রপাত উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাউথপোস্ট শহরে একটি নৃত্য কর্মশালায় তিন শিশুকন্যার হত্যার জেরে। ঘটনার পরে সমাজমাধ্যমে হত্যাকারী মুসলিম শরণার্থী হওয়ার ‘তথ্য’ ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিক্ষোভই হিংসার আকার নেয়।

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৫৬
Share: Save:

শব্দের বদলে হিংসা যখন মূলধন হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা যে কোনও দেশের রাজনীতির ক্ষেত্রেই ভয়ঙ্কর। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ ব্রিটেন। জুলাইয়ের শেষ থেকে আগুন জ্বলছে সে দেশের একাধিক শহরে। ঘটনার সূত্রপাত উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাউথপোস্ট শহরে একটি নৃত্য কর্মশালায় তিন শিশুকন্যার হত্যার জেরে। ঘটনার পরে সমাজমাধ্যমে হত্যাকারী মুসলিম শরণার্থী হওয়ার ‘তথ্য’ ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিক্ষোভই হিংসার আকার নেয়। আঁচ ছড়ায় অন্যান্য শহরেও, যেখানে বিক্ষোভের নিশানা হন মূলত মুসলিম এবং অভিবাসীরা। অধিকাংশ স্থানেই সমাজমাধ্যমে প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দেশের চরম দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধে। ব্রিটেনের এ-হেন পরিস্থিতি তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে সদ্য নির্বাচিত লেবার পার্টির কিয়ের স্টার্মার সরকারকে। স্টার্মার সংঘর্ষকারী, মূলত কট্টর দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ করার কথা ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে সংঘর্ষ পরিস্থিতি কিছুটা প্রশমিত, প্রধানত বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের রুখে দাঁড়ানোর কারণে।

তবে, এই সংঘর্ষ কেবল সমাজমাধ্যমের ফলাফল বা প্ররোচনাই এর পিছনে একমাত্র কারণ, এমনটা বলা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর নেপথ্যে রয়েছে অভিবাসন, বিশেষত অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ কালের তীব্র অসন্তোষ, যার সুবিধা নিতে চাইছে দক্ষিণপন্থীরা। লক্ষণীয়, ব্রিটেনের সাম্প্রতিক সাধারণ নির্বাচনে মুখ্য বিষয় ছিল অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন সমস্যা, যার সূত্রে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক নৌকায় চেপে আসা অবৈধ অভিবাসীদের রাওয়ান্ডা পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ভোটদাতাদের ক্ষোভে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল প্রাক্তন সরকারের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার নীতি, যা গত কয়েক বছরে বহুলাংশে সরকারি ব্যয় বাড়িয়েছে। ভোটে জেতার পরে প্রধানমন্ত্রী স্টার্মার সেই পরিকল্পনা বাতিল করলেও, ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলে দেশে অবৈধ অভিবাসন বা অনুপ্রবেশ হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সাধারণ নাগরিকের মতে, অনুপ্রবেশের প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন গণপরিষেবা, দেশের কর্মসংস্থান, সাধারণ জীবনযাত্রা, এমনকি জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরেও। এর মধ্যে একটি ধর্মীয় বিদ্বেষও আছে। এক বড় অংশ উদ্বিগ্ন যে, মুসলিমপ্রধান দেশগুলি থেকে অবৈধ অভিবাসনের জেরে দেশে বাড়ছে অপরাধ ও সন্ত্রাসের মাত্রা। অন্য দিকে, বহু দিন ধরে অসন্তোষ জন্মেছে পুলিশের কার্যকলাপ নিয়ে। অভিযোগ, বহু ক্ষেত্রে পুলিশ সংখ্যালঘুদের নরম দৃষ্টিতে দেখে, এবং তুলনায় কঠোর পদক্ষেপ করে দেশের অন্যদের উপর।

প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেন-সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহু দেশেই শরণার্থী অনুপ্রবেশ এক গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু সরকারি পরিষেবার ক্ষেত্রে চাপ পড়ছে না, সামাজিক সংঘর্ষ বাড়ছে, যার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ ইউরোপের বহু দেশে চরম দক্ষিণপন্থীদের উত্থান ঘটেছে। ব্রিটেনে সাম্প্রতিক নির্বাচনে চরম দক্ষিণপন্থীরা বেশি আসন সংগ্রহ করতে না পারলেও, তাঁদের ভোট শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি একই রকম আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেও। এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও। বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি এই সঙ্কট থেকে সহজে মুক্তি পাবে, এমন আশা কম।

অন্য বিষয়গুলি:

UK migrants
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE