Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Suicide Cases

মনের সুরক্ষা

ভারতে উচ্চশিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক। সংসদে পেশ করা সরকারি হিসাবে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পঁয়ত্রিশ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করেছিল।

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:১৭
Share: Save:

ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রদের অভিযোগ নিষ্পত্তির কী ব্যবস্থা রয়েছে, জানতে চেয়ে চিঠি পাঠাল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিষয়টির গুরুত্ব যথেষ্ট, কারণ নানা ধরনের নির্যাতন, হয়রানি ও হতাশার জেরে প্রতি বছরই বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী আত্মঘাতী হয়, বা সেই চেষ্টা করে। প্রশ্ন হল, ইউজিসি কি এ বিষয়ে সত্যিই সংস্কারে আগ্রহী, না কি কেবলই নিয়মরক্ষা করতে চায়? একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক পড়ুয়ার আত্মহত্যার ঘটনা সম্পর্কিত এক মামলায় ৯ সেপ্টেম্বর দিল্লি হাই কোর্ট ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রকের অধীন উচ্চশিক্ষা দফতরকে এই মর্মে নির্দেশ দেয় যে, দু’সপ্তাহের মধ্যে সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ নিষ্পত্তির কমিটি তৈরি করতে হবে। তারই জেরে ইউজিসি-র এই নির্দেশনামা। আদালতের এমন উদ্যোগ এই প্রথম নয়। এ বছরেই মুম্বই হাই কোর্টে উচ্চশিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা কমানোর জন্য ব্যবস্থা করার আবেদন দাখিল করে এক সমাজকর্মী বলেন, মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়ে পরামর্শ বা কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিক আদালত। অপর একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে এক ব্যক্তি গত বছর আবেদন করেন, আদালত যেন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা প্রস্তুতির কোচিং সেন্টারগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এই সব কোচিং ছাত্রদের উপরে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করছে। প্রত্যাশা রাখতে না পারার উদ্বেগ ও হতাশা পড়ুয়াদের আত্মহত্যার অন্যতম কারণ। সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে নির্দেশ না দিলেও, কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক কোচিং সেন্টারগুলির জন্য একটি বিশদ রূপরেখা (গাইডলাইন) জারি করে।

ভারতে উচ্চশিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনক। সংসদে পেশ করা সরকারি হিসাবে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পঁয়ত্রিশ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করেছিল। এই ধারা অব্যাহত— জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৩-২২ সালের মধ্যে এক লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করেছে, যা তার আগের দশকের (২০০৩-১২) থেকে চৌষট্টি শতাংশ বেশি। একটি অসরকারি সংস্থার বিশ্লেষণ অনুসারে, দেশের মোট আত্মহত্যার মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের আত্মহত্যার অনুপাতও ক্রমশ বাড়ছে। যা ইঙ্গিত দিচ্ছে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপের। জাতীয় শিক্ষানীতি (২০২০) বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে, এবং আত্মহত্যার প্রবণতা প্রতিরোধের জন্য নির্দেশনামা তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য।

শিক্ষানীতি মনে করাচ্ছে, একটিমাত্র অসংবেদী মন্তব্যও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করতে পারে। সহপাঠীদের সঙ্গে তুলনা, এক বার অকৃতকার্য হলে তা অবশ্যম্ভাবী বলে দেখানো, ভাল নম্বরকেই সাফল্যের একমাত্র মাপকাঠি করে তোলা, এ সবই সঙ্কট তৈরি করে। কিন্তু এই নির্দেশগুলি পালিত হচ্ছে কি? কেবল চিঠি দিয়ে সতর্ক করা, অথবা রূপরেখা প্রকাশ করাই যথেষ্ট কি না, ইউজিসি-র প্রতি সেই প্রশ্নটা ক্রমশ বড় হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানগুলিতে সমীক্ষা করা প্রয়োজন— জাত-লিঙ্গ ভিত্তিক হয়রানি, বা নতুন ছাত্রছাত্রীদের র‌্যাগিং হচ্ছে কি না, অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি তৈরি হয়েছে কি না, হয়ে থাকলেও কাজ করছে কি না, এর প্রতিটিই জানা দরকার। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা সার্বিক হওয়া প্রয়োজন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy