সম্প্রতি জানা গেল, বহু স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় অনুপস্থিতির হার ১০ থেকে ৩০ শতাংশ ছুঁয়েছে। বিভিন্ন বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনুপস্থিত পড়ুয়ারা পুজোর ছুটির আগে পর্যন্ত স্কুলে এসেছে। লক্ষণীয়, সেই সময়ই দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্টে ট্যাব কেনার জন্য সরকার প্রদত্ত দশ হাজার টাকা ঢুকেছে। অর্থাৎ, টাকা ঢোকার পরই শিক্ষার্থীদের একাংশ স্কুলে আসা ছেড়ে দিয়েছে। তারাই টেস্টে বসেনি। ধরে নেওয়া যায়, তারা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতেও বসবে না। সুতরাং, শিক্ষকদের আশঙ্কা, ট্যাবের টাকা পাওয়ার পরই এই শিক্ষার্থীরা পাঠ-ছুট হল। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সম্প্রতি এর ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখে অভিযোগ উঠছে, সরকারের ট্যাব প্রদান কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের স্কুলে ধরে রাখার উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ।
অতিমারি কালে যখন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান স্তব্ধ হয়েছিল, তখন শিক্ষাব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল অনলাইন পঠনপাঠন। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র শিক্ষার্থীরা অনেকাংশে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল কম্পিউটার, মোবাইলের মতো শিক্ষা-সহায়ক উপাদানগুলির অভাবে। বস্তুত সেই প্রথম, চক-ডাস্টার-বই-খাতার পাশাপাশি যুগোপযোগী শিক্ষা-সহায়ক উপাদানগুলির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা গিয়েছিল। অতঃপর পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক দ্বাদশ শ্রেণিতে ট্যাবের টাকা প্রদান কর্মসূচিটি গ্রহণ করার সময় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখার পাশাপাশি তারা যাতে উচ্চতর শিক্ষায় ট্যাবকে কাজে লাগাতে পারে, সেটিও ভাবা হয়েছিল। সরকারি এবং সরকার-পোষিত স্কুলগুলির অসংখ্য দরিদ্র শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ শিক্ষার প্রয়োজনে এই প্রকল্পকে নিছক রাজনৈতিক খয়রাতি বলা কঠিন। প্রশ্ন হল, এক জন ষোলো-সতেরোর কিশোর ট্যাবের প্রকৃত গুরুত্ব অনুধাবন না করে যদি তাকে বিনোদনের উপাদান হিসাবে ধরে নেয়, সেই ভুল সংশোধনের কিছুমাত্র উপায় গোটা ব্যবস্থার মধ্যে আছে কি? ট্যাবের যথাযথ ব্যবহার তার ভবিষ্যৎকে উন্নততর করতে পারে, এই কথাটি সে ছাত্রকে বিশ্বাস করানোর মতো যথেষ্ট প্রমাণ আছে?
সার্বিক শিক্ষা-চিত্রে স্পষ্ট, সরকার ট্যাবের টাকার বাইরে বিদ্যালয়ে সুশিক্ষার উপযোগী পরিকাঠামো, পরিবেশ কোনওটির প্রতিই মনোযোগী নয়। ট্যাবটি বিদ্যাচর্চার কোন হোমে বা যজ্ঞে লাগবে, অনেক ছাত্রের কাছে সম্ভবত সেটাও স্পষ্ট নয়। ট্যাব প্রদানের অর্থনৈতিক উপযোগিতাটিও প্রায় শূন্য। উচ্চতর শিক্ষার্জন-অন্তে এক জন চাকরিপ্রার্থী যে চাকরির প্রত্যাশা করে, এই রাজ্যে তার দেখা নেই দীর্ঘ কাল। চাকরির বাজারে এক জন অষ্টম শ্রেণি পাশের মূল্য যতখানি, স্নাতক পাশের মূল্য তার চেয়ে খুব বেশি নয়। অষ্টম শ্রেণি-মাধ্যমিক পাশের জন্য নির্ধারিত কাজে স্নাতক-স্নাতকোত্তরদের আবেদনের বন্যা দেখলে চিত্রটি স্পষ্ট হয়। স্কুল ছেড়ে হাতে-কলমে কাজ শিখে অদক্ষ বা অর্ধদক্ষ শ্রমিক হিসাবে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেওয়া পরিবারের কাছে লাভজনক। সেই পেশাগত প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে, স্কুলস্তরের পাঠ্যক্রমে এমন বৃত্তিমূলক শিক্ষারও ব্যবস্থা নেই। একমাত্র যেখানে কাজের অগাধ সুযোগ, সেই সিন্ডিকেটের দুর্নীতি-সাম্রাজ্যে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। ট্যাব হাতে পেয়েই ছাত্ররা স্কুলকে বিদায় জানাচ্ছে কেন, সেটা বোঝা খুব কঠিন কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy