Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Air pollution

বাতিলের শর্ত

নিয়মিত আপসের কারণেই ভারতে বায়ুদূষণ মাত্রা ছাড়াইয়াছে। বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে বাতিলের নিয়ম কড়া হইলে, মালিকের ক্ষতি পূরণ করিবে কে?

প্রতীকী  ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২১ ০৪:৪৮
Share: Save:

ভারতে বায়ুদূষণ ক্রমবর্ধমান এবং কার্যত নিয়ন্ত্রণহীন। ইহার প্রতিকারকল্পে ভারত স্টেজ ৬ মাপকাঠি চালু, বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে জোর দিতেছে। পুরাতন গাড়ি বাতিলের নীতি প্রয়োগের কথা ইতিপূর্বেই বলিয়াছিল কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট বক্তৃতাতেও শুনা গিয়াছিল গাড়ি বাতিল সংক্রান্ত ঘোষণা। সেই পথে হাঁটিয়া কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী ঘোষণা করিলেন, ২০২২ সালের ১ এপ্রিল হইতে ২০ বৎসরের অধিক পুরাতন ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ১৫ বৎসরের অধিক পুরাতন বাণিজ্যক গাড়ি ‘স্বাস্থ্যপরীক্ষা’য় উত্তীর্ণ হইতে না পারিলে এবং রেজিস্ট্রেশন পুনর্নবীকরণ না হইলে তাহা বাতিল করা হইবে। অবশ্য, এই পদক্ষেপের পশ্চাতে পরিবেশজনিত কারণের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক কারণও বিদ্যমান। অতিমারির পূর্ব হইতেই ভারতের গাড়ি শিল্প চাহিদা-সঙ্কটে ধুঁকিতেছিল। বেশ কিছু কাল যাবৎ কেন্দ্রের নিকট পুরাতন গাড়ি বাতিলের নীতি দ্রুত প্রয়োগের আবেদন করিতেছিল শিল্পমহল। সুতরাং, কেন্দ্রের দাবি, এই ঘোষণা একযোগে দুইটি উদ্দেশ্যই সাধিত করিবে।

কিন্তু ঘোষণাটি শুনিতে মহৎ হইলেও বাস্তব রূপায়ণের ক্ষেত্রে বিস্তর ছিদ্র বর্তমান। পরিবেশের প্রসঙ্গটিতেই আসা যাউক। বায়ুদূষণ রোধই যদি প্রকৃত উদ্দেশ্য হয়, তবে সময়সীমা আরও কম করিবার প্রয়োজন। কারণ, গাড়ি যত পুরাতন হইবে, তাহার দূষণ ক্ষমতাও ততোধিক বাড়িবে। পুরাতন গাড়ি দূষণ নিয়ন্ত্রণের অত্যাধুনিক মাপকাঠিগুলি মানিয়া তৈরি হয় নাই। সুতরাং, পথে এইরূপ গাড়ি যত বেশি থাকিবে, সার্বিক ভাবে বায়ুদূষণও বৃদ্ধি পাইবে। এবং বাতিল নীতির ক্ষেত্রে এত ‘যদি’, ‘কিন্তু’র অবকাশ থাকিবার কথা নহে। নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রম করিলেই, তাহা বাণিজ্যিক হউক, কিংবা ব্যক্তিগত, সুস্থ থাকুক, বা অ-সুস্থ, পত্রপাঠ বাতিলের নীতি কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা উচিত। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাহা হয় না। বর্তমান আইনটির ক্ষেত্রে যেমন ১৫ বৎসর অতিক্রান্ত হইলে গাড়িটির যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করা হইবে। যন্ত্রাংশ কাজ করিলে আরও ৫ বৎসর তাহা ব্যবহারের অনুমতি মিলিবে। কম্পিউটারের মাধ্যমে পরীক্ষায় কারচুপির সুযোগ আটকাইবার বদলে এখন জানা যাইতেছে, ফিট সার্টিফিকেট-এর জন্য আরটিও-কে পথকর এবং গ্রিন ট্যাক্স বাবদ কিছু অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করিলেই কাজ হইবে। অর্থাৎ, কাঞ্চনমূল্যে ক্রয় করা যাইবে দূষণের ছাড়পত্র।

দুর্ভাগ্যজনক। বস্তুত, এই নিয়মিত আপসের কারণেই ভারতে বায়ুদূষণ মাত্রা ছাড়াইয়াছে। বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে বাতিলের নিয়ম কড়া হইলে, মালিকের ক্ষতি পূরণ করিবে কে? উত্তর সহজ। সেই দায়িত্বটিও সরকারকেই লইতে হইবে। যিনি ট্যাক্সি চালাইয়া সংসার চালান, গাড়ি বাতিল হইলে যাহাতে তাঁহার রোজগার বন্ধ না হয়, তাহা নিশ্চিত করিতে হইবে। নূতন গাড়ি কিনিবার জন্য সুলভে ঋণ দিবার ব্যবস্থা করিতে হইবে। গাড়ির দামেও আকর্ষক ছাড় দিবার বন্দোবস্ত করিতে হইবে। বিদেশে দূষণ কমাইতে এই নিয়মই প্রযোজ্য। এই দেশেও সেইরূপ ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করা হইয়াছে বটে, কিন্তু তাহা যে পর্যাপ্ত নহে, সেই অভিযোগও উঠিয়াছে। যথেষ্ট আর্থিক সুবিধা না মিলিলে অধিকাংশই ক্ষতি স্বীকার করিয়া স্বেচ্ছায় পুরাতন গাড়ি বাতিলের পথে হাঁটিবেন না। বে-নিয়মই নিয়ম হইবে। দূষণও নিজ নিয়মে বাড়িতে থাকিবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Air pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy