মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকের পরেই রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে ইংরাজি মাধ্যম স্কুল তৈয়ারির কথা ঘোষণা করিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভূতপূর্ব শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আমলেই সরকারি স্কুলে ইংরাজি মাধ্যম চালুর সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৯ সালে মন্ত্রী স্বয়ং তেমন এক স্কুলের উদ্বোধন করিয়াছিলেন। আরও কিছু স্কুলে— যে তালিকায় হিন্দু স্কুলের ন্যায় ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানও ছিল— নূতন মাধ্যমে পঠনপাঠনের সুযোগের কথা ঘোষিত হইয়াছিল; পরিকল্পনাটি প্রাক্-প্রাথমিক হইতে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত। পুনরায় নির্বাচিত হইয়া সেই উদ্যোগই বিস্তৃত করিবার কথা জানাইলেন মুখ্যমন্ত্রী। ইহার ফলে সরকারি শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্র বিস্তারলাভ করিবে। সন্তানকে ইংরাজি মাধ্যমে পড়াইতে চাহিলে বাধ্যতামূলক ভাবে বেসরকারি পরিসর বাছিতে হইবে না। নূতন সরকারের সূচনালগ্নে এই অতি প্রয়োজনীয় ঘোষণা, যাহা সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করিবার আশ্বাস বহন করে, তাহার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ধন্যবাদার্হ।
কেবল শিক্ষা নহে, সামাজিক প্রেক্ষিতেও সিদ্ধান্তটি জরুরি। প্রথমত, ইহা উপভোক্তার স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়। সন্তানকে কোন মাধ্যমে পড়াইবেন, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা অভিভাবকগণের থাকা জরুরি, তাঁহারাই সরকারি শিক্ষার উপভোক্তা। বিদ্যালয় ব্যবস্থার প্রধান ‘প্রদানকারী’ সরকার, অতএব বিকল্পসমূহ তুলিয়া ধরিবার দায়িত্বটিও তাহাদেরই, উক্ত ঘোষণায় যাহা আরও যথাযথ ভাবে পালিত হইবার অঙ্গীকার আছে। দ্বিতীয়ত, বেসরকারি শিক্ষা গ্রহণ করিবার সামর্থ্য সকলের নাই, তৎসূত্রে ইংরাজি মাধ্যমের সুযোগও। সরকার নীতি পাল্টাইবার পর ক্রমশ সেই চিত্রের অন্যথা হইতেছে, নূতন ব্যবস্থা প্রতিটি ব্লকে ছড়াইয়া পড়িলে রাজ্যের সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থায় বহু গুণ পরিবর্তন আসিতে পারে, ইংরাজি পৌঁছাইতে পারে সাধারণের ঘরে ঘরে। তৃতীয়ত, বেসরকারি ব্যবস্থায় শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রিত হয় না, শিক্ষার অধিকার আইন অনুসারে বিদ্যালয় পরিকাঠামো সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন হইলেও বাস্তবে তাহাতে বহু গাফিলতি। সুতরাং, আরও অনেক ছাত্রছাত্রীকে সরকারি ছত্রচ্ছায়ায় আনিতে পারিলে শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন হইবে বলিয়া আশা করা যায়।
শিক্ষার মাধ্যম প্রসঙ্গে বিতর্ক এই রাজ্যে বহু পুরাতন। ১৯৮৩ সালে প্রাথমিক স্তর হইতে ইংরাজি ভাষা শিক্ষাই তুলিয়া দিয়াছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার, বহু পরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহৃত হয়। ইহার ফলে বহু প্রজন্ম কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে, সেই আলোচনাও অমিল নহে। বুঝিতে হইবে, ইংরাজি ভাষাকে গ্রহণ করিবার অর্থ তাহাকে ঊর্ধ্বতন ভাবিয়া লওয়া নয়, সমাজ বাস্তবতাকে স্বীকার করা। ইংরাজি বিশ্বজনীন ভাষা, কর্মক্ষেত্র ও বাজার এবং শিক্ষার সাযুজ্য প্রয়োজন, নয়তো শিক্ষার পরিসরই সঙ্কুচিত হয়। বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবানুগ, যে প্রশ্ন কার্যকারণ সম্পর্কিত তাহাকে অহেতুক নৈতিক বানাইবার মূঢ়তা নাই। এবং, ইংরাজি কাহারও চাহিদা হইলে দোষ নাই, সরকার তাহাতে মোড়লগিরি করিতে পারে না। বরং বহু নাগরিক যখন বিকল্প না পাইয়া বেসরকারি ব্যবস্থা বাছিতেছেন, তখন সরকারই যদি সেই বিকল্প লইয়া আসিতে পারে, তবে ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণ হয়। বাংলা ও ইংরাজি দুইয়ের যথাযথ মিশ্রণেই শিক্ষাব্যবস্থার ক্রমোন্নতি সম্ভব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy