Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
kolkata municipal corporation

দুয়ারে অশিক্ষা

শিক্ষকের অভাব আরও তীব্র করেছে শিক্ষার সঙ্কটকে। তার জন্যও দায়ী রাজ্য সরকার— প্রতি দিনই তার নতুন নতুন সাক্ষ্যপ্রমাণ মিলছে।

গত মাসেই এগারো হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বার করেছে শিক্ষা দফতর।

গত মাসেই এগারো হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বার করেছে শিক্ষা দফতর। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২২ ০৫:৩৫
Share: Save:

কলকাতা পুরসভার স্কুলগুলি থেকে ফের শিক্ষকদের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে নিয়োগের নির্দেশ এল। এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত নিতে পারে কোনও রাজ্য সরকার, বিশ্বাস করা কঠিন। প্রাথমিক স্কুলে ক্লাস না নিয়ে, বার্ষিক পরীক্ষার কাজ ফেলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেন ছুটবেন সরকারি ভাতা-অনুদানের তালিকায় আরও প্রার্থীর নাম লেখাতে? এটা কি শিক্ষকদের কাজ? পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি তৃণমূল সরকারের জমিদারি নয়, আর সরকারি স্কুলের শিক্ষকরাও আজ্ঞাধীন গোমস্তা নন। সরকার শিক্ষকের মর্যাদা না বুঝলে তা রাজ্যেরই অমর্যাদা। ভোটের তালিকা তৈরি, অথবা ভোটগ্রহণের মতো কাজে শিক্ষকদের ব্যবহার করা প্রায় সব রাজ্যেই চালু রয়েছে, কিন্তু তা-ও অনুচিত। শিক্ষকের কাজ এত গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর সময় এমন অমূল্য যে, অপর কোনও কাজে তাঁকে নিযুক্ত করা মানে মানবসম্পদের অপচয়। যে কোনও সভ্য সমাজে গুরুত্বের বিচারে শিশুশিক্ষাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তার উপর গত আড়াই বছর অতিমারি-জনিত লকডাউনের কারণে স্কুলশিক্ষা একান্ত অবহেলিত হয়েছে এই রাজ্যে। অতি দীর্ঘ ছুটি, অনলাইন শিক্ষার অত্যল্প প্রসার, পাঠাভ্যাস চালু রাখার পরিকল্পনায় গলদ, এ সব কিছুর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিশুশিক্ষা। স্কুল খুলতেই দেখা গিয়েছে, শিশুদের সিংহভাগই নিজেদের শ্রেণির তুলনায় পিছিয়ে গিয়েছে— তাদের যথাযথ মানে উন্নত করতে বিশেষ যত্ন নিতে হবে শিক্ষকদের। বহু শিশু স্কুলছুট হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনতে স্কুলের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। যে দিক থেকেই দেখা যাক, স্কুলে পঠনপাঠনের জন্য শিক্ষকদের আরও বেশি সময় ও পরিশ্রমই আজকের দাবি।

শিক্ষকের অভাব আরও তীব্র করেছে শিক্ষার সঙ্কটকে। তার জন্যও দায়ী রাজ্য সরকার— প্রতি দিনই তার নতুন নতুন সাক্ষ্যপ্রমাণ মিলছে। গত মাসেই এগারো হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বার করেছে শিক্ষা দফতর। তদুপরি, কোনও কোনও জেলায় শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত জেলাস্তরে ঠিক থাকলেও, বহু স্কুলে শিক্ষকদের পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। বদলির নীতির ফলে শিক্ষকদের সমবণ্টন হয় না, তাতে দরিদ্র এলাকার স্কুলগুলিই সর্বাধিক বঞ্চিত হয়। পরিকাঠামো ও পড়ুয়া-পিছু বরাদ্দের বিচারে কেন্দ্র বা রাজ্য পরিচালিত স্কুলগুলির চাইতে সাধারণত পিছিয়ে থাকে পুরসভার স্কুলগুলি। শহরের নিম্নবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীরাই এখনও এই স্কুলগুলির শরণাপন্ন হয়। সেখান থেকে তিনশো শিক্ষকের অপসারণ কার্যত দরিদ্রদের শিক্ষাবঞ্চনার ব্যবস্থাটি আরও পাকাপোক্ত করা।

কেউ আপত্তি করতে পারেন, অল্প কয়েক দিনের জন্য অল্প কিছু শিক্ষককে অন্যত্র নিয়োগ করলে কী এমন ক্ষতি? প্রশ্ন হল, এক দিনের জন্য একটি ক্লাসে শিক্ষক না আসলে কতগুলি শিশুর কতখানি ক্ষতি হয়, তার পরিমাপ করা কি এতই কঠিন? শিশুর শিক্ষার অধিকার কেবল স্কুলে নাম লেখানোর অধিকার নয়, নিয়মিত পাঠ গ্রহণ, পরীক্ষা দান ও মূল্যায়িত হওয়ার অধিকার। শিক্ষককে ‘সরকারি কর্মী’ করে তুললে শিশুর অধিকার লঙ্ঘন করা হয়। প্রশ্ন উঠবে ‘দুয়ারে সরকার’ কার্যক্রমের যৌক্তিকতা নিয়েও। প্রত্যন্ত, অতি অনুন্নত এলাকায় সরকারি পরিষেবা পৌঁছতে বিশেষ শিবিরের প্রয়োজন থাকতে পারে। সব এলাকায়, নিয়মিত ব্যবধানে কেন এই শিবির হবে? কেন সরকারি দফতরগুলি তাদের প্রকল্প মানুষের কাছে পৌঁছতে পারবে না? সরকার বিভিন্ন দফতরের তৃণমূল স্তরে কাজ করার ‘এক্সটেনশন’ কর্মীর পদ শূন্য রাখবে আর শিক্ষকদের দিয়ে তাদের কাজ করাবে, এ হতে পারে না। শিবির যদি একান্তই অপরিহার্য হয়, তবে তার জন্য আলাদা কর্মীর ব্যবস্থা হোক। একটি শিক্ষাদিবসও নষ্ট না করার অঙ্গীকার করতে হবে তৃণমূল সরকারকে, এখনই।

অন্য বিষয়গুলি:

kolkata municipal corporation Schools Duare sarkar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy