ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফর শুরু করেছিলেন একটি দামি বাক্য দিয়ে, মিত্রভাব বজায় থাকলে সব সঙ্কটই পার হওয়া যায়। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ যাত্রায় এটাই এখন সবচেয়ে বড় মন্ত্র হওয়ার কথা। ভারতের দিক দিয়ে দেখলে, এই উপমহাদেশে বাংলাদেশের তুল্য বড় বন্ধু তার আর নেই। যদিও অনেক ভুগে, অনেক মূল্য দিয়ে এখন অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কেও আবার যেন একটু রোদের ছোঁয়া লেগেছে, কিন্তু ‘সোনার বাংলা’র সঙ্গে গত দেড় দশকের যে ‘সোনালি অধ্যায়’, তা তো ভারতকে প্রত্যয় জুগিয়েছেই, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ায় তার নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও বেশ বড় ভূমিকা পালন করেছে। দিল্লি এখন খোলামুখে স্বীকার করতে পারে, বাংলাদেশই হল তার ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ পলিসি বা ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতির মূল ভরকেন্দ্র। বিপরীতে, বাংলাদেশের বৃহত্তর কূটনৈতিক স্বার্থে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থেও দিল্লির সঙ্গে সুসম্পর্ক এই মুহূর্তে ঢাকার কাছে অতীব মূল্যবান— বিশেষত আগামী বছরের শেষে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। ভারতবিরোধী শক্তি যদি সে দেশে শক্তি সঞ্চয় করে, তার অর্থ ইসলামি মৌলবাদের উত্থান, এবং তার অর্থ আওয়ামী লীগের বদলে বিকল্প উগ্র ইসলামি শক্তির ক্ষমতা লাভ। ফলে দুই দেশের শীর্ষনেতৃত্বের কাছেই সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরটি অত্যন্ত জরুরি বিষয় হয়ে উঠেছে।
সফরের শেষ কি সূচনার এই আশাবাদকে যথার্থ প্রমাণ করতে পারল? সাতটি ‘মউ’ স্বাক্ষরিত হয়েছে, অনেকগুলি বিতর্কিত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে— তার কিছুতে এগোনো গিয়েছে, কিছুতে ততটা যায়নি। তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি দ্রুত সাধনের প্রতিশ্রুতি এসেছে। রোহিঙ্গা প্রশ্নে মায়ানমার সরকারকে চাপ দেওয়ার প্রশ্নে ভারতের ভূমিকা নিয়েও কবোষ্ণ আলোচনা হয়েছে। ঢাকার আধিকারিকরা সর্বদা প্রীত ও হৃষ্ট হননি, দিল্লির নেতারাও চিন্তিত বোধ করেছেন। কিন্তু সব সমস্যা এক সফরে চুকে যাবে, এতখানি আশ্বাস নিয়েই নিশ্চয় তাঁরা এই বৈঠকের পরিকল্পনা করেননি? শেখ হাসিনার কথাটি আবার মনে করা ভাল, বন্ধুত্বের বাতাবরণটিই বড় কথা, সঙ্কটের মুক্তি তাতেই ঘটতে পারে, ধীরে ধীরে। ভারতের দিক থেকে একটি বিশেষ সন্তোষের কারণ হতে পারে, বাংলাদেশে নতুন বন্দর এলাকায় বাণিজ্য ও লগ্নির সম্ভাবনা, এবং বাংলাদেশের উচ্চতম সরকারি স্তরে এ বিষয়ে উৎসাহের পরিমাণ। এই বছরই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা শোনা গেল। ভারতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যচিত্র এর ফলে অনেকাংশে বাড়তে পারে। বাংলাদেশের রফতানির ক্ষেত্রে ভারত আরও বড় গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে। তবে দুই দেশ কতখানি বাস্তববাদিতার সঙ্গে সুযোগের ব্যবহার করবে, এটাই এখন প্রশ্ন।
প্রশ্ন আরও একটি: রাজনৈতিক ও দলীয় সঙ্কীর্ণতার বিষয়টিকে কতটা জায়গা ছাড়বে কূটনীতি। অর্থাৎ, ভারতের ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক সমীকরণের জন্য দেশের সার্বিক স্বার্থরক্ষায় কতখানি সমঝোতা হবে। প্রশ্নটা উঠছে এই জন্য যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্কের বিভিন্ন স্তরে জড়িয়ে আছে প্রাদেশিক স্বার্থ। স্বাধীনতার পঁচাত্তর পূর্তির সময়ে দেশভাগের এই অবধারিত ফলটির কথা তো ভুললে চলবে না। তিস্তা আজও বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে যৌথ সম্পদ, পঁচাত্তর বছর আগের মতোই। তা হলে তিস্তা বিষয়ক আলোচনা কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বাদ দিয়ে হতে পারে? একই ভাবে রোহিঙ্গা প্রশ্নেও, ভারতের যে প্রদেশগুলি এর ভার বহন করছে, তাদের সঙ্গে কথোপকথনে বসতে পারত দিল্লি। এই সব পদক্ষেপের অভাবে একটি বড় ফাঁক থেকেই গেল প্রয়োগমনস্কতায়। ফাঁক বোজানোই যদি কূটনীতির প্রধান লক্ষ্য হয়, তবে এই বৈঠককে আরও সফলতর করার সুযোগ ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy